অনুবাদ-দ্য বার্থ অব বাংলাদেশ by কুলদীপ নায়ার
কুলদীপ নায়ার। ১৯২৩ সালের ১৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন খ্যাতিমান এই ভারতীয় সাংবাদিক-কলাম লেখক। তিনি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি করল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ অন্যান্য বিষয়ে সম্প্রতি তিনি লিখেছেন দ্য ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনে। তাঁর 'দ্য বার্থ অব বাংলাদেশ' লেখাটি পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করেছেন কল্লোল কর্মকার আমি অবাক হয়েছি এই ভেবে
যে ভারতের কোনো সংগঠনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর উদ্যাপন করেনি। এটা আমার কাছে একটু অদ্ভুতই লেগেছে। কারণ বাংলাদেশ গঠনে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। আমার মনে আছে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে যখন দলে দলে মানুষ এসে ভারতে জড়ো হচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী একটু রেগেই গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না, এই বহির্গমন কিভাবে বন্ধ করা যায়। অথচ ইয়াহিয়া খান যখন তাঁর বিমানবাহিনীকে ভারতের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলার নির্দেশ দিলেন, তখন ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বললেন, 'ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, পাকিস্তান আক্রমণের শিকার হয়েছে।'
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে অনেক ভারতীয়কেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি যাঁদের মনে করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখেছেন, তাঁদেরই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব ভারতীয় জওয়ান এবং কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে ভারতে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল, কিন্তু হাসিনার, পছন্দ-অপছন্দের চেয়েও এ ঘটনাটাকে সামনে এনে উদ্যাপন করা উচিত ছিল। হাসিনা তাঁদের ব্যাপারে কী অনুভব করলেন, এর চেয়ে যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারেই ভাবনাটা দরকার ছিল বেশি।
শেখ হাসিনার আচরণ এখনো বোধগম্য নয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুদ্ধে হারার ৪৮ ঘণ্টা আগে যে অপরাধ করেছে, সে জন্য তারা এখনো ক্ষমা চায়নি বাংলাদেশের কাছে। ইসলামাবাদ ন্যাটোর হামলায় নিহত তার সেনাসদস্যদের ব্যাপারে কিন্তু বিচার চাইছে। এই পাকিস্তানের মাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালাত। ন্যাটো বাহিনীর ওই হামলার পর পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে সেই বিমানঘাঁটি ছেড়ে চলে যেতে বলে। ড্রোন হামলায় কয়েক ডজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমা না চাওয়ায় পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বেশ বিশৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই পাকিস্তানই বাংলাদেশে হামলা এবং ন্যাটো হামলাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে।
যাঁরা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন এবং অপরাধ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সময়োচিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে ওই সব ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করতে ট্রাইব্যুনাল গঠনেও সক্ষম হয়েছেন। তবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচার করাটাই আসল ব্যাপার। এই কেস যেন কোনো ব্যক্তিবিদ্বেষ বা রাজনৈতিক বিদ্বেষ পূরণের জন্য ব্যবহৃত না হয়। তথাপি হাসিনার অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, সেই আনন্দঘন সময়টা আমাকে অনেক ভাবায়। পাকিস্তানের দুই অংশের সমস্যা দিন দিন বাড়ছিলই। পাকিস্তানের যেকোনো সমস্যার জন্যই পাকিস্তান পশ্চিমকে দোষারোপ করতে থাকে। এর ফলে পাকিস্তান মনে করতে থাকে, তাদের আগেকার করা ভালো কাজ আর কখনোই মনে করা হবে না। জেনারেল আইয়ুব খান একবার এক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছিলেন, '১৯৬২ সালে যখন নতুন সংবিধান বানানো হয়েছিল, তখনই আমি পূর্ব পাকিস্তানকে বলেছিলাম_যদি তারা চলে যেতে চায়, তাহলে তারা যেতে পারে। তারা যদি না চাইত, তাহলে তাদের রাখার কোনো ইচ্ছাই আমাদের ছিল না।'
পশ্চিম পাকিস্তানিদের এই আচরণ ছিল অভিন্ন। পাকিস্তানিরা একই সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্ব নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে। কেননা পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল সেই সময়। ১৯৬৫ সালে ভারত পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করেনি। কারণ ভারত এ অঞ্চলের অনিরাপত্তাবোধকে
কাজে লাগাতে চায়নি এবং যুদ্ধক্ষেত্রকেও প্রসারিত করতে চায়নি।
বৈরী সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে অল পাকিস্তান ন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেই কনফারেন্সে শেখ মুজিবুর রহমান 'পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবহেলা' করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনেন। আর ওই কনফারেন্সেই শেখ মুজিব তাঁর ছয় দফা দাবি পেশ করেন। আর এই ছয় দফাই হয়ে দাঁড়ায় পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সংগ্রামের ভিত্তি। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ঢাকায় আমাকে বলেছিলেন, "ছয় দফা হলো 'শুরু'; এবং আমরা জানতাম, আমরা একদিন স্বাধীন হবই।"
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে অনেক ভারতীয়কেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি যাঁদের মনে করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখেছেন, তাঁদেরই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব ভারতীয় জওয়ান এবং কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে ভারতে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল, কিন্তু হাসিনার, পছন্দ-অপছন্দের চেয়েও এ ঘটনাটাকে সামনে এনে উদ্যাপন করা উচিত ছিল। হাসিনা তাঁদের ব্যাপারে কী অনুভব করলেন, এর চেয়ে যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারেই ভাবনাটা দরকার ছিল বেশি।
শেখ হাসিনার আচরণ এখনো বোধগম্য নয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুদ্ধে হারার ৪৮ ঘণ্টা আগে যে অপরাধ করেছে, সে জন্য তারা এখনো ক্ষমা চায়নি বাংলাদেশের কাছে। ইসলামাবাদ ন্যাটোর হামলায় নিহত তার সেনাসদস্যদের ব্যাপারে কিন্তু বিচার চাইছে। এই পাকিস্তানের মাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালাত। ন্যাটো বাহিনীর ওই হামলার পর পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে সেই বিমানঘাঁটি ছেড়ে চলে যেতে বলে। ড্রোন হামলায় কয়েক ডজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমা না চাওয়ায় পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বেশ বিশৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই পাকিস্তানই বাংলাদেশে হামলা এবং ন্যাটো হামলাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে।
যাঁরা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন এবং অপরাধ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সময়োচিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে ওই সব ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করতে ট্রাইব্যুনাল গঠনেও সক্ষম হয়েছেন। তবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচার করাটাই আসল ব্যাপার। এই কেস যেন কোনো ব্যক্তিবিদ্বেষ বা রাজনৈতিক বিদ্বেষ পূরণের জন্য ব্যবহৃত না হয়। তথাপি হাসিনার অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, সেই আনন্দঘন সময়টা আমাকে অনেক ভাবায়। পাকিস্তানের দুই অংশের সমস্যা দিন দিন বাড়ছিলই। পাকিস্তানের যেকোনো সমস্যার জন্যই পাকিস্তান পশ্চিমকে দোষারোপ করতে থাকে। এর ফলে পাকিস্তান মনে করতে থাকে, তাদের আগেকার করা ভালো কাজ আর কখনোই মনে করা হবে না। জেনারেল আইয়ুব খান একবার এক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছিলেন, '১৯৬২ সালে যখন নতুন সংবিধান বানানো হয়েছিল, তখনই আমি পূর্ব পাকিস্তানকে বলেছিলাম_যদি তারা চলে যেতে চায়, তাহলে তারা যেতে পারে। তারা যদি না চাইত, তাহলে তাদের রাখার কোনো ইচ্ছাই আমাদের ছিল না।'
পশ্চিম পাকিস্তানিদের এই আচরণ ছিল অভিন্ন। পাকিস্তানিরা একই সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্ব নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে। কেননা পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল সেই সময়। ১৯৬৫ সালে ভারত পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করেনি। কারণ ভারত এ অঞ্চলের অনিরাপত্তাবোধকে
কাজে লাগাতে চায়নি এবং যুদ্ধক্ষেত্রকেও প্রসারিত করতে চায়নি।
বৈরী সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে অল পাকিস্তান ন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেই কনফারেন্সে শেখ মুজিবুর রহমান 'পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবহেলা' করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনেন। আর ওই কনফারেন্সেই শেখ মুজিব তাঁর ছয় দফা দাবি পেশ করেন। আর এই ছয় দফাই হয়ে দাঁড়ায় পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সংগ্রামের ভিত্তি। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ঢাকায় আমাকে বলেছিলেন, "ছয় দফা হলো 'শুরু'; এবং আমরা জানতাম, আমরা একদিন স্বাধীন হবই।"
No comments