চলে গেলেন কথাসাহিত্যিক by আবদুশ শাকুর
পৃথিবী ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমালেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও সঙ্গীতবিশারদ আবদুশ শাকুর। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানম-ির নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তাঁর মৃত্যুতে দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। আবদুশ শাকুরের বড় ছেলে ড. ইশতিয়াক আহমেদ তাঁর বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে বিশিষ্ট এই সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ড. ইশতিয়াক। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার আবদুশ শাকুরের মেয়ে কানাডা থেকে আসার পর দাফনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে। ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার রামেশ্বরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অনেক আগেই প্রয়াত বাবা-মা মকবুল আহমাদ ও ফায়জুন্নিসা। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে শাকুর সর্বকনিষ্ঠ। তাঁর ভাইবোনও অনেক আগেই প্রয়াত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্সসহ এমএ এবং হল্যান্ডের আইএসএস থেকে অর্থবিজ্ঞানে এমএস ডিগ্রী নেন তিনি। কর্মজীবনে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপনা, পরে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান এবং বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণের পর পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন লেখালেখিতে। আবদুশ শাকুর একজন কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্র ও সংগীত গবেষক এবং নিসর্গলেখক।তিনি লেখালেখি শুরু করেন উত্তরকৈশোরেই। প্রথম গল্পগ্রন্থ ক্ষীয়মাণ প্রকাশিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে অধ্যয়নকালেই। ছোটগল্প, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও উপন্যাস রচনার পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত বহু চিরায়ত গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন তিনি। বাংলা-আরবি-ফার্সি-উর্দু ভাষায় ব্যুৎপত্তি ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক আবদুশ শাকুরের গদ্যকে করেছে শাণিত এবং প্রবন্ধকে সারগর্ভ। তাঁর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো মহামহিম রবীন্দ্রনাথ, সংগীত সংবিৎ, গোলাপসংগ্রহ, বাঙালির মুক্তির গান, সংগীত সংগীত, ভাষা ও সাহিত্য, পরম্পরাহীন রবীন্দ্রনাথ, গল্পসমগ্র, রম্যসমগ্র, সংলাপ, ভালোবাসা, আত্মকথনে আবদুশ শাকুর : কাঁটাতে গোলাপও থাকে, ভেজাল বাঙালী, রসিক বাঙালী, উত্তর-দক্ষিণ সংলাপ, নির্বাচিত কড়চা, আবদুশ শাকুরের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, আবদুশ শাকুরের নির্বাচিত গল্প, রবীন্দ্রনাথকে যতটুকু জানি, কৌতুক নাটক টোটকা ও ঝামেলা ইত্যাদি।
ছোটগল্পে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। গল্পসমগ্রের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০০৩ সালে অমিয়ভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। গোলাপসংগ্রহ নামক গবেষণামূলক প্রবন্ধগ্রন্থের জন্য মননশীল শাখায় প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার পান ২০০৪ সালে। সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার পান ২০০৮ সালে এবং শ্রুতি সাংস্কৃতিক এ্যাকাডেমী পুরস্কার পান ২০১১ সালে।
No comments