নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ
এমন একটা সময় ছিল, যখন সমাজে নারীদের কোন অধিকারই ছিল না। পৃথিবীজুড়েই নারীদের সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করতে হয়েছে। অনেক দেশেই নারীদের ভোটাধিকার ছিল না।
সেসব দেশে নারী নেতৃবৃন্দ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের অধিকার আদায় করেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিসত্মানী হানাদারদের বিরম্নদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়। পুরম্নষদের পাশাপাশি নারীযোদ্ধারাও হানাদারদের বিরম্নদ্ধে লড়াইয়ে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। কেউবা রণাঙ্গনে চিকিৎসক ও নার্স হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন। আর এই স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রায় ২ লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন। সকলেরই প্রত্যাশা ছিল, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর স্বাধীন বাংলাদেশে নারী তার প্রাপ্য মর্যাদা ফিরে পাবে। কিন্তু দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশ কি তবে এখনও সভ্য দেশ নয়? এখানে শুধু দরিদ্র শ্রেণীই নয়, মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর নারীও নির্যাতনের শিকার। এ দেশে এখনও অনেক স্ত্রী স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। স্ত্রী নির্যাতনের অন্যতম প্রধান কারণ যৌতুক। কোন কোন স্বামী যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করেন। কখনও বা যৌতুক না দেয়ায় স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যা বাংলাদেশে প্রায়শই ঘটছে। যেমন সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে রম্নমা নামের এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এক স্বামী। রম্নমার অপরাধ সে তার স্বামীর যৌতুকের দাবি পূরণ করতে পারেনি। হত্যার পাশাপাশি বাংলাদেশে নারী অপহরণের কথা শোনা যায়। এইসব অপহৃত নারীর ভাগ্যে শেষ পর্যনত্ম কী ঘটে তা অনেকৰেত্রে জানাও যায় না। কাউকে হত্যা করা হয়, কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে দেহব্যবসায় নিয়োজিত হয়। অথবা কোন নারীকে বিদেশে পাচার করা হয়। টাঙ্গাইলের বীথি নামের একটি মেয়ে কাজ করত ঢাকায় এক কর্মজীবী মহিলার বাসায়। তারপর সেখান থেকে সে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যায়। এইভাবে চার মাস ধরে সে নিখোঁজ। সেই কর্মজীবী মহিলা এ ব্যাপারে কোন সনত্মোষজনক জবাব দেননি। পুলিশও বীথিকে খুঁজে বের করতে পারেনি। শিশুকাল থেকেই সমাজে নারীর জীবন নিরাপত্তাহীন। পুরম্নষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে নারী শিশুদেরও রৰা নেই। কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কুলিয়ারা ভদ্রাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। দরিদ্র কৃষক পরিবারের এই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে পাশের বাড়ির এক বখাটে যুবক। ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন বন্দর থানায়। কিন্তু ধর্ষককে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। বরং ধর্ষকের পরিবারের লোকজন ধর্ষিতার পরিবারকে প্রায়ই হুমকি দিচ্ছে। সারাদেশে নারীদের এই বিপন্ন অবস্থার বিরম্নদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। নারী নির্যাতনের বিরম্নদ্ধে পুলিশকে আরও সক্রিয় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একজন মহিলা। তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা, নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টানত্মমূলকভাবে কঠোর শাসত্মি দেয়া হোক। এ সমাজকে অবশ্যই নারীর জন্য নিরাপদ করতে হবে।
No comments