প্রবাসে এই মৃত্যু
রবিবার দেশের সব ক’টি পত্রিকায় একটি হৃদয়বিদারক খবর প্রকাশিত হয়েছে, সব ইলেকট্রনিক মিডিয়াও তা প্রচার করেছে বিস্তারিতভাবে। সেই মর্মান্তিক খবরটি হলো বাহরাইনের রাজধানী মানামা শহরের মুখারকা এলাকায় এক ভয়াবহ অগ্নিকণ্ডে একটি ভবনের তেরো শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছেন; এরা সবাই বাংলাদেশী।
কিছু শ্রমিক আহত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের ফলে পঞ্চাশ বাংলাদেশী শ্রমিক আশ্রয়চ্যুত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। ধসেপড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মৃতদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দমকলকর্মীরা। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে এই অগ্নিকা- ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।বিদেশবিভূঁইয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের এই মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের ক্ষতি কোন কিছু দিয়েই পূরণ করা যায় না। অনেক স্বপ্ন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এসব যুবক দূরদেশে গিয়েছিলেন ভাগ্যের অন্বেষণে; নিজের জীবন এবং স্বজনদের জীবন আরও একটু পরিপাটি করে সাজাবার আশায়। বিদেশের মাটিতে তাঁরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করছিলেন। সাত থেকে দশজন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকছিলেন কিছু অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে, যাতে অপেক্ষাকৃত বেশি অর্থ দেশে স্বজনদের কাছে পাঠানো যায়। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তাদের সব আশা, সব স্বপ্ন ধূলিসাত করে দিলো। আগুনের লেলীহানশিখায় শুধু কিছু মানবীয় শরীর নয়, সেই সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো অনেক সম্ভাবনার স্বর্ণসঞ্চয়ও। এতদিন যেসব পরিবারে ছিল হাসি-আনন্দ আর নানা রকম ইতিবাচক পরিকল্পনা; সেসব পরিবারে আজ শুধুই আহাজারি, বুকফাটা কান্না আর শোকের মাতম।
অগ্নিকা-ের পরপরই অগ্নিনির্বাপক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজে অংশ নেয়; যার কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন। বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স খলিফা বিন সালমান আল খলিফা আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থাসহ নিহতদের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, নিহত শ্রমিকদের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করার জন্য বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি ঘোষণা করেছেন, লাশগুলো দেশে আসার পর দাফনের খরচ হিসেবে পরিবারপিছু ৩৫ হাজার এবং সেই সঙ্গে দুই লাখ করে টাকা দেয়া হবে ।
সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে বলেই আশা করা যায়। যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না, এটাই নির্মম বাস্তবতা। তবে যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন এবং নিহতদের প্রতি নির্ভরশীল যেসব মানুষ, তাদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। আহতরা যাতে সুচিকিৎসা পেয়ে আরোগ্যলাভ করতে পারেন ও পুনরায় কাজে ফিরতে পারেন; আর নিহতদের পরিবারগুলো যাতে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে ভেসে না যায়, সে লক্ষ্যে বাহরাইন সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সকলের একান্ত প্রত্যাশা। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও সবাই আশা করেন।
No comments