দক্ষিণ এশিয়া ॥ পারিবারিক শাসন ও দারিদ্র্য
দক্ষিণ এশিয়া সর্বাধিক মাত্রায় বংশীয় রাজনীতিপ্রবণ। ভাবতে অবাক লাগে বিশ্বে যত গরিব আছে তাদের ৫১ শতাংশ কেন দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করে?
বংশানুক্রমিক রাজনীতি হলো একই পরিবার বা বংশের একের পর এক শাসকদের ক্ষমতায় আগমন।
উত্তর কোরিয়ায় কিম জং ইন তাঁর পিতা কিম ইল সুংয়ের হাত থেকে ক্ষমতার রাস গ্রহণ করেন। সিরিয়ার নবম প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের উত্তরসূরি হিসেবে দেশের দশম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন বাশার আল-আসাদ। ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে পিতা-কন্যা ও দৌহিত্র পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেছেন। যেমন জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী। জেনারেল জিয়াউর রহমান ও তাঁর বিধবা স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উভয়েই বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা।বংশানুক্রমিক রাজনীতি হলো একই পরিবার বা বংশের একের পর এক শাসকদের ক্ষমতায় আগমন।
শ্রীলঙ্কায় সলোমন বন্দরনায়েক এবং তাঁর বিধবা স্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক উভয়েই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বন্দরনায়েকের কন্যা চন্দ্রিমা কুমারাতুঙ্গা দেশের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নেপালে গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা ও মাতৃকা প্রসাদ কৈরালা এই তিন ভাইয়ের সবাই প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন।
যে কারণেই হোক না কেন বংশানুক্রমিক রাজনীতি ও দারিদ্র্যের সহাবস্থান করার প্রবণতা আছে। বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যের নির্দেশক মাথাপিছু আয় দৈনিক ২ ডলারের হিসাবে ভারতের জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র। বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ দরিদ্র। নেপাল ও পাকিস্তানে দরিদ্র যথাক্রমে ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৬০ দশমিক ২ শতাংশ।
পাকিস্তানে সিন্ধু প্রদেশের দিকে তাকান। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, লারকানা থেকে দু’জন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছেন। অথচ লারকানার অধিবাসীদের ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং সাক্ষরতার হারও অত্যন্ত শোচনীয় ৩২ শতাংশ।
জাতীয় পরিষদের স্পীকার ডা. ফাহমিদা মীর্জার নির্বাচনী এলাকা বাদিন। সেখানকার সাক্ষরতার হার লারকানার চেয়েও কম মাত্র ২৩ শতাংশ। শিকারপুর ও থাট্টা হলো সিন্ধুর দরিদ্রতম দুটি জেলা যেখানে জনগোষ্ঠীর অর্ধেক প্রকৃত পক্ষে দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। পাঞ্জাব প্রদেশের দিকে ব্যাপক পরিসরে দৃষ্টি দিন। সেখানকার ঝিলাম হলো পাঞ্জাবের সবচেয়ে কম দরিদ্র জেলা। দারিদ্র্যের হার মাত্র ৩ শতাংশ। এর পরে রয়েছে গুজরাট, চাকওয়ান, মান্দি বাহাউদ্দিন, গুজরানওয়ালা, শিয়ালকোট, রাওয়ালপিন্ডি ও ফয়সালাবাদের স্থান যেখানে দারিদ্র্যের হার এককের ঘরে।
অথচ ঝিলাম থেকে মাত্র ৫শ’ কিলোমিটার দূরে রাজনপুর পাঞ্জাবের দরিদ্রতম জেলা। অনুমান করুন কেন। এরপর আছে মুজাফফরপুর ও ডেরাগাজীখান যেখানে দারিদ্র্যর হার ৪০ শতাংশ। এ সবই হলো লেঘারী, মাজারী, খোকসা, দ্রেশাক ও খারদের ঘাঁটি এলাকা।
যেভাবেই হোক না কেন সাক্ষরতা ও দারিদ্র্য পরস্পর সহাবস্থানপ্রবণ। পাকিস্তানের সকল জেলার মধ্যে নাসিরাবাদ, ঝাল মাগসি, কোহলু, ডেরা বুগতি, কোহিস্তান ও মুসাখেল জেলায় সাক্ষরতার হার সবচেয়ে কম। ঘটনাচক্রে এই জেলাগুলো আবার দরিদ্রতমও বটে।
বংশানুক্রমিক রাজনীতি সেখানেই সবচেয়ে শক্তিশালী যেখানে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল এবং ব্যক্তিত্বই আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো পারিবারিক জায়গিরদারী থেকে রূপান্তরিত হয়ে সত্যিকারের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে অস্বীকৃতি জানায়।
বংশানুক্রমিক রাজনীতির পুরো ব্যাপারটাই হলো রাজনীতি বিবর্জিত। তার পরিণতিতে অর্থনীতিকেও বাদ দেয়া হয় যার ফলে ব্যাপক দারিদ্র্য দেখা দেয়।
ইতিহাসগতভাবে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি বংশানুক্রমিক রাজনীতিপ্রবণ। বিশ্বে গরিব লোকের সংখ্যা ১৭০ কোটি। কখনও কি ভেবে দেখেছেন বিশ্বের যাবতীয় গরিব মানুষের ৫১ শতাংশ কেন দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করে?
চলমান ডেস্ক
No comments