বৃহস্পতিবার সংসদে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
৬৩ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার পর কাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে কাল বিকেল তিনটায় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের সভা আহবান করছে দলটি।
বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় দলের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। সেৰেত্রে সংসদীয় দলের সভা শেষে বৃহস্পতিবার আছর নামাজের বিরতির পর বিরোধী দলের অধিবেশনে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। দীর্ঘদিন সংসদ অধিবেশন নিষ্প্রাণ অবস্থায় আছে। বিরোধী দলের যোগদানের মধ্য দিয়ে সংসদ অধিবেশন আবার উত্তপ্ত ও প্রাণবনত্ম হয়ে উঠবে। প্রাণবনত্ম বিতর্ক, দফায় দফায় ওয়াকআউট এবং একে অপরকে ঘায়েল করার নানা কৌশলী পন্থা অবলম্বনের চিরায়িত চিত্র দেখার অপেৰায় এখন গোটা জাতি। বৃহস্পতিবার যোগ দেয়ার পর দিনের কার্যসূচীতে অংশ নেয়ার পর পয়েন্ট অব অর্ডারে ফোর চাইবেন বিরোধী দলের সদস্যরা। সরকারী দলকে চাপে রাখতে যোগ দেয়ার প্রথম দিনই সংসদ অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করতে পারে বিরোধী দল। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরাও সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন। বিরোধী দলের একাধিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর সেই আভাসই পাওয়া গেছে।গত কয়েকদিন ধরে বিরোধী দলের সদস্যরা বলাবলি করে আসছেন শীঘ্রই বিএনপি অধিবেশনে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারম্নকসহ দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য ও সিনিয়র নেতা সাৰাত করেন। সংসদে যোগ দেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। সংসদীয় দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকালে সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের সভা করার সিদ্ধানত্ম হয়। কী কী বিষয় নিয়ে অধিবেশনে কথা বলবেন তাও সংসদীয় দলের সভায় আলোচনা হবে।
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারম্নকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের সভা আহবান করা হয়েছে। সভায় সংসদীয় দলের প্রধান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করবেন। ওই সভায় চূড়ানত্ম হবে বিএনপি কখন অধিবেশনে যোগ দেবে। সংসদে যোগ ব্যাপারে সভায় ইতিবাচক সিদ্ধানত্ম আসবে বলে আশা করছেন বিরোধী দলের চীফ হুইপ।
উলেস্নখ্য, সংসদের সামনের সারিতে আসন বাড়ানোর দাবিতে প্রথম অধিবেশন থেকেই বিরোধী দল বিএনপি সংসদ বর্জন করে আসছে। বর্তমানে নবম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন চলছে। প্রথম অধিবেশনের পর বিএনপি আর সংসদে ফিরে যায়নি। ইতোমধ্যে সামনের সারিতে আসন বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের কাছে ১০টি শর্ত পূরণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। নবম জাতীয় সংসদে টানা ৬১ কার্যদিবস অনুপস্থিত রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। বৃহস্পতিবার পর্যনত্ম টানা ৬৩ কার্যদিবস অনুপস্থিত হবে। সেৰেত্রে আর ২৯ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলেই সংবিধান অনুযায়ী সবার সদস্যপদ শূন্য হয়ে যাবে। এমনিতেই বড় কোন ইসু্য ছাড়াই সংসদ বর্জনের কারণে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। উপরন্তু ৯০ কার্যদিবস পূরণ হওয়ার আগে শুধু সংসদে সদস্য পদ রৰায় সংসদে গেলে আরও সমালোচনার মুখে পড়তে হবে তাদের। এসব বিষয় সামনে রেখে এক ঢিলে তিন পাখি মারার কৌশলী পরিকল্পনায় চলতে সংসদ অধিবেশনেই ফিরার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে বিরোধী দল। বৃহস্পতিবার আছর নামাজের বিরতির পর তাদের অধিবেশনেই যোগ দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে বৃহত্তর স্বার্থ রৰার জন্যই বিরোধী দলকে সংসদে যেতে হবে বলে মনত্মব্য করেন বিএনপির এক নেতা। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে তা জাতির সামনে তুলে ধরতেই আমরা সংসদে গিয়ে কথা বলব।
সংসদে একমাত্র পয়েন্ট অব অর্ডার ছাড়া কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ফ্রিস্টাইল বক্তব্যে রাখার সুযোগ নেই। এখন সংসদে চলছে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা। এতে ৩০ ঘণ্টার নির্ধারিত বক্তব্যে সংখ্যানুপাতিক হারে পর্যাপ্ত সময় পাবেন তাঁরা। আর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার সুযোগ নিয়ে সরকার বিরোধী সত্য-মিথ্যার সমাহার ঘটিয়ে ফ্রিস্টাইল বক্তব্য দেয়ার সুযোগ রয়েছে। তাতে স্পীকার বাধা দিতে পারবেন না। এই সুযোগটি নিতেই দ্রম্নত সংসদে যোগদানের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে বিএনপি। জানা গেছে, অধিবেশনেই যোগ দিয়েই নানা ইসু্যতে সংসদ উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালাবেন তাঁরা। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর, সম্পাদিত নানা চুক্তিসহ নানা ইসু্যতে ফ্রিস্টাইলে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে বিরোধী দল।
একটি সূত্র দাবি করছে সুনির্দিষ্ট চার টার্গেট পূরণের লৰ্য নিয়ে সংসদে ফিরছে বিরোধী দল। টার্গেট তিনটি হলো সংসদ সদস্যপদ রৰা, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় ফ্রিস্টাইলে বক্তব্য রাখার সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরসহ নানা ইসু্যতে সংসদকে উত্তপ্ত করে স্থায়ী বর্জনের পথ খোঁজা, সরকারকে চাপে ফেলে সংসদ বর্জন করে রাজপথের আন্দোলনের ইসু্য সৃষ্টি, সর্বশেষ বিনা ইসু্যতে সংসদ বর্জনের সমালোচনার দায় ঘোচানো। এই চার টার্গেট পূরণে বিরোধী দল কৌশলী পন্থা নিলেও বসে নেই সরকারী দল। সংসদে বিরোধী দলকে মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ফলে দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ থাকা সংসদ আবারও প্রাণবনত্ম-উত্তপ্ত, দফায় দফায় ওয়াক-আউটের চিরচেনা রূপে ফিরতে পারে। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সংসদে ফিরে বিরোধী দল এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবে যাতে সরকারী দল বাধা দেয়। আর বাধা দিলেই 'সরকার সংসদে কথা বলতে দেয়নি'_ এই অজুহাত তুলে আবারও সংসদ বর্জন করে রাজপথের আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এদিকে চার দিন বিরতির পর সংসদের মুলতবি অধিবেশন মঙ্গলবার বিকেলে আবার শুরম্ন হয়েছে। স্পীকার এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরম্ন হয়। দিনের কার্যসূচী অনুযায়ী আজ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর, জরম্নরী জনগুরম্নত্বসম্পন্ন মনোযোগ আকর্ষণী নোটিস, পাবলিক সার্ভিস (রিটায়ারমেন্ট) (এমেন্ডমেন্ট) বিল-২০১০ সম্পর্কে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট পেশ, রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রসত্মাবের ওপর আলোচনা করা হয় অধিবেশনে।
No comments