বিরোধী দলের মানবপ্রাচীর- ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সমর্থন চাইল বিএনপি
নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতাদের জোর সমর্থন চেয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে ১৮ দলের মানবপ্রাচীর কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির মুখপাত্র ও সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম এই সমর্থন চান।
তিনি বলেন, ‘সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ীরা হরতাল চান না। আমরা বিকল্প কর্মসূচি দিচ্ছি। লাখ লাখ মানুষ এতে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি গণ-অনাস্থা জানিয়েছে। তাই সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতাদের উচিত, জনগণের দাবির প্রতি একাত্ম হয়ে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। নইলে ভবিষ্যতে কঠিন কর্মসূচি দিলে তখন আমাদের দোষ দিতে পারবেন না।’নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ‘গুম-হত্যা-অপহরণের’ প্রতিবাদে গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মহাখালীর উড়ালসড়কের নিচ থেকে শুরু করে সাতরাস্তার মোড়, মগবাজার, মৎস্য ভবন, শিক্ষা ভবন ও গুলিস্তান মাজার হয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত সড়কের এক পাশে মানবপ্রাচীর তৈরি করেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। দেশের অন্যান্য মহানগর ও জেলা সদরেও একই কর্মসূচি পালন করা হয়।
বেলা একটার দিকে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশের ৬৪ জেলায় মানবপ্রাচীরে লাখো মানুষ অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি গণ-অনাস্থা জানিয়েছে। সরকারের উচিত জনগণের হূৎস্পন্দন বুঝে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দেওয়া। নইলে এর পরিণতি খারাপ হবে। এর দায় সরকারকে বহন করতে হবে।’
কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সড়কে জড়ো হতে থাকেন। মহাখালী থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত সড়কের এক পাশের ফুটপাতে মানবপ্রাচীর করার কথা থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় তা রাস্তা পর্যন্ত গড়ায়। এ কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট হয়।
মানবপ্রাচীরে কর্মীদের সঙ্গে মহাখালীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, সাতরাস্তার মোড়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মগবাজার রেলগেটে আবদুল মঈন খান, মগবাজার চৌরাস্তায় এম কে আনোয়ার, মৎস্য ভবনের সামনে মির্জা আব্বাস, হাইকোর্টের সামনে মওদুদ আহমদ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া, রায়সাহেব বাজার এলাকায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আদালত-সংলগ্ন এলাকায় সাদেক হোসেন খোকাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
বিএনপি ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের প্রতিকৃতি ও ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান। জোটের শরিক জামায়াত-শিবিরের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁরা নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদীসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রতিকৃতি নিয়ে তাঁদের মুক্তির দাবিতে মিছিল করেন। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতাকে এ কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।
মৎস্য ভবনসংলগ্ন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা ভবনের মাঝের সড়কের ফুটপাতে ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জাগপা, এনপিপি, এনডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
মানবপ্রাচীরের পথ ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয় ঢাকা জেলা দায়রা জজ আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় হাজিরা দিতে যান। এ কারণে ঢাকায় এক ঘণ্টার মানবপ্রাচীর কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার পর খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে রওনা হন। তাঁর যাত্রার পেছন পেছন মানবপ্রাচীর ভাঙতে থাকে।
বেলা সোয়া দুইটার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছান। তাঁর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় ১৮ দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সমবেত হন। তাঁরা রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আদালতপাড়াসহ রাজধানীর সড়কগুলোতে বাড়তি পুলিশ ও র্যা ব মোতায়েন করা হয়।
No comments