প্রতিমাসে ২০ কেজি চাল পাবে ঢাকার ৪ লাখ দরিদ্র মানুষ- সিদ্ধানত্ম নিয়েছেন- প্রধানমন্ত্রী by মিজান চৌধুরী
খুব শীঘ্রই ঢাকার এক শ' ওয়ার্ডে ৪ লাখ অতিদরিদ্র মানুষকে কার্ডের মাধ্যমে কম দামে চাল দেয়া হবে। একজন প্রতিমাসে ২০ কেজি চাল পাবেন। প্রতি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৪ হাজার লোককে কম মূল্যে চাল দেয়া হবে।
খুব শীঘ্র মহানগরীর ১৫ সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে প্রত্যেক ওয়ার্ডে অতিদরিদ্র লোকের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরম্নু হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধানত্মের আলোকে প্রতি নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।এদিকে অর্থনীতিবিদ ও সরকারের নীতিনির্ধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জনকণ্ঠকে বলেন, দুস্থ মানুষের তালিকা সঠিকভাবে তৈরি ও সত্যিকার হতদরিদ্র মানুষের হাতে চাল পেঁৗছানো হবে সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ। সঠিক তালিকার অভাবে ঢাকার বাইরে অতীতে এ ধরনের কাজ ব্যর্থ হয়েছে। তালিকাতে সত্যিকার হতদরিদ্র মানুষ স্থান পায়নি। ওই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ তালিকা তৈরি করতে পারলে গরিব মানুষ উপকৃত হবে।
সূত্র মতে, বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ওই সিদ্ধানত্ম বাসত্মবায়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে। ওএমএস কার্যক্রম আগামী বোরো মৌসুম পর্যনত্ম চালানো যাবে। বর্তমান ওএমএস কার্যক্রম চালু থাকার ফলে খুচরা বাজারে মোটা চালের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া শহরের প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে চার হাজার লোকের তালিকা তৈরি করার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়।
সূত্র মতে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারম্নক খান ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ মোটা চালের মূল্য বৃদ্ধি ও ওএমএস কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধানত্ম হয় ঢাকায় অতিদরিদ্র লোকের তালিকা তৈরি করে কার্ডের মাধ্যমে তাদের হাতে কম দামে চাল পেঁৗছে দেয়া হবে। ওই সিদ্ধানত্মের আলোকে খুব শীঘ্র এ কার্যক্রম শুরম্ন করতে যাচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে রাজধানী ঢাকাসহ ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরম্ন হয়। ৭০টি ট্রাকের মাধ্যমে রাজধানীতে বর্তমান খাদ্য অধিদফতর খোলা বাজারে চাল বিক্রি করছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ৫০ ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি হচ্ছে। কিনত্মু অন্যান্য সময় চালের জন্য লাইন পড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ওএমএস চাল কেনার ব্যাপারে আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। কিনত্মু বাজারে মোটা চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের হাতে চাল পেঁৗছে দেয়ার ব্যবস্থা হিসেবে খোদ শহরে কার্ড পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলাতে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ভিজিএফ, টিআরসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষের হাতে চাল তুলে দেয়া হয়। কিনত্মু এবার ঢাকায় এ ধরনের কর্মসূচী শুরম্ন করা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে প্রত্যেক ওয়র্াডে হতদরিদ্র লোকজনের তালিকা তৈরি করা হবে। ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ও কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। এরপর কার্যক্রম শুরম্ন করা হবে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, এর আগে ঢাকায় এ ধরনের কার্যক্রম হয়নি। এ সরকার প্রথম শহরের মধ্যে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এটা একটি ভাল সিদ্ধানত্ম। তবে তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাচাই-বাছাই করে সঠিক তালিকা তৈরি করতে হবে। এ কার্যক্রমের ফলে অতিদরিদ্র মানুষের হাতে কম দামে চাল পেঁৗছবে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার চালের মূল্য নিয়ে চিনত্মিত আছে। মোটা চাল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ টাকা দরে। টিসিবির হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের কেজিতে শতাংশ হিসেবে বেড়েছে এক দশমিক ৮৯ শতাংশ। চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যমতে গেল পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে নবেম্বরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ৭.৮৪ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ৭.৭৮ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে শহরে সবচেয়ে বেশি। নবেম্বরে শহরের খাদ্য মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ৯.৮৩ শতাংশ এবং অক্টোবরে এ হার হলো ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে এবং চালের মূল্য বাড়াতে সরকার শহুরে হতদরিদ্র লোকজনকে কম দামে চাল খাওয়ানোর সিদ্ধানত্ম নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. এমকে মুজেরী জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে কমে আসার কোন লক্ষণ নেই। মূল্যস্ফীতি বাড়বেই। এক্ষেত্রে চার লাখ লোককে কম দামে চাল খাওয়ানোর সিদ্ধানত্ম ভাল। তবে সঠিকভাবে তালিকা তৈরি ও সত্যিকার অতিদরিদ্র মানুষ যদি চাল পায় তাহলে গরিব মানুষ উপকৃত হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা পাবে। ঢাকার বাইরে অতীতে এ ধরনের কর্মসূচী নিয়েছে। কিনত্মু দেখা গেছে সত্যিকার গরিব মানুষ কার্ড পায়নি। ফলে কর্মসূচী নিয়ে কোন লাভ হয়নি। অতীতের এ অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে সঠিকভাবে তালিকা তৈরি করা হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের সিদ্ধানত্ম
আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের ছয়টি বিভাগে ওএমএস চালু করা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২৫ ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ২৫ টন করে চাল বিক্রি করা হবে। রংপুর শহরেও এ কার্যক্রম চলবে। এছাড়া ঢাকায় ৭০ ট্রাকের সঙ্গে আরও ৩০ ট্রাক যোগ হয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে এক শ' ট্রাকের মাধ্যমে খোলা বাজারে চাল বিক্রি হবে।
No comments