ব্রংকিয়াল এ্যাজমা বা হাঁপানি by ডা. আবু হেনা মোসত্মফা কামাল
এখন শীতকাল তাই হাঁপানির প্রকোপ চলছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং সচেতন হোন হাঁপানির প্রকোপ থেকে রৰা পেতে।
হাঁপানির সংজ্ঞা প্রদাহজনিত কারণে শ্বাসনালী সংবেদনশীল থাকায় উহা সঙ্কোচনশীল হয়, ভিতরের প্রলেপ ফুলে থাকে এবং গায়ে প্রদাহ সংশিস্নষ্ট সেল জমে থাকে। এর কারণে মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট হওয়া, কাশি হওয়ার নামই হাঁপানি বা ব্রংকিয়াল এ্যাজমা।ধরন বা প্রকার : ১। অটোপিক বা এলার্জিজনিত (ওমঊ দ্বারা হয়)
২। নন এটোপিক (ওমঊ ছাড়া হয়)।
যেসব রোগী এটোপিক অর্থাৎ ওমঊ দ্বারা হয় তারা মাঝেমধ্যে আক্রানত্ম হয় এবং অন্য সময় ভাল থাকে।
যেসব রোগী নন এটোপিক তারা সবসময়ের জন্য অল্প অল্প ভুগে থাকে এবং মাঝেমধ্যে তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
হাঁপানি রোগ বংশগতভাবে হয়ে থাকে। যে বংশে এ্যাজমার রোগী আছে সেই বংশের অন্য কোন সদস্য এ রোগ দ্বারা আক্রানত্ম হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এটা কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। পাশাপাশি অবস্থানের কারণে এটা ছড়ানোর কোন সম্ভাবনা নেই।
শিশুদের এ্যাজমা রোগ পরবতর্ীকালে ভাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কারও কারও ৰেত্রে এটা স্থায়ীরূপ ধারণ করতে পারে।
এ্যাজমা রোগ বৃদ্ধির কারণ : সংক্রমণজনিত কারণে এটা বৃদ্ধি পায় বেশি। তবে অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে ব্যায়াম, ঠা-া বাতাস, এলার্জেনের সংস্পর্শে আসা, কেমিক্যাল ও ড্রাগ।
এলার্জেনের উৎস হচ্ছে_ ফুলের রেণু, কম্বল, ঘরের কার্পেট, গোবর, ধুলো ইত্যাদি।
উপসর্গ : শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বুকে শব্দ হওয়া_এই তিনটিই মূল উপসর্গ। তবে ৰেত্র বিশেষে জ্বর ও বুক ধরা মনে হতে পারে। কখনও কখনও এ রোগ চরম আকার ধারণ করতে পারে। তখন রোগী নিসত্মেজ হয়ে যেতে পারে, কথা বলতে অসুবিধা হয় এবং শরীর নীলচে বর্ণ ধারণ করে। এমতাবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে স্থানানত্মর আবশ্যক, নতুবা রোগীর মৃতু্য হতে পারে।
পরীৰা-নিরীৰা : রোগ নির্ণয়ের ৰেত্রে পরীৰার খুব একটা প্রয়োজন হয় না। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ইতিহাস শুনে এবং রোগী দেখেই রোগ নির্ণয় করতে সৰম।
বিশেষ ৰেত্রে যেগুলো করা হয়_ঈইঈ, ঝবৎঁস ওমঊ, বুকের ঢ-ৎধু, ঊঈএ ইত্যাদি। মরণাপন্ন রোগীর ৰেত্রে আরও পরীৰার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা : চিকিৎসার শুরম্নতেই প্রতিরোধের উপায়গুলো বলি_
১। ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করা।
২। শীতে কম্বলের পরিবর্তে লেপ ব্যবহার করা।
৩। বাড়িতে পশু, পাখি না রাখা।
৪। ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা।
উপসর্গ নিরাময়ে শ্বাসনালীর প্রসারক ওষুধ ব্যবহার করা হয় যেমন_ স্যালবিউটামল, টারবুটালিন, থিওফাইলিন, ব্যাসবুটেরল ইত্যাদি।
শ্বাসনালীর প্রদাহ কমানোর জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়।
এসব ওষুধ ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় এবং ইনহেলার আকারেও পাওয়া যায়। ইনহেলারগুলো ব্যবহারে কার্যকরী ৰমতাও বেশি। এবং পাশর্্বপ্রতিক্রিয়াও কম হয়। সব রোগীর ৰেত্রে সব ধরনের ওষুধ একসঙ্গে ব্যবহার প্রয়োজন পড়ে না। রোগের ধরন এবং তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। এ্যাজমাকে অবহেলা করলে যেমন মৃতু্যর ঝুঁকি থাকে তেমনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। তাই দেরি না করে আপনার পাশের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করম্নন।
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
No comments