আইএমইডি শক্তিশালী করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেৰা!- ঢাকা ছাড়ার বদলি আতঙ্কে কমিটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমলে নেয়নি
জাফর আহমেদ সরকারী উন্নয়ন কাজ বাসত্মবায়ন, পরীবিণ এবং মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপো করে চূড়ানত্ম প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আইএমইডিকে শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ দেশের সাবেক বৃহত্তর ২১ জেলা এবং প্রতিটি বিভাগে একটি করে পর্যবেণ অফিস স্থাপনের সুপারিশ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু কমিটি তাদের সুপারিশে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে আমলে নেয়নি। এ ছাড়াও সুপারিশে বিভাগটির জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় আইটি সেক্টরের লোকবল নিয়োগের েেত্র পেশাদারিত্ব অনুসরণ করার জন্য কোন সুপারিশও করা হয়নি। সংশিস্নষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভাগীয় শহর ও ২১ বৃহত্তর জেলায় আইএমইডির মনিটরিং অফিস স্থাপন করলে সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের ঢাকা ছেড়ে ওসব স্থানে বদলি হয়ে যেতে হতে পারে। কর্মকর্তাদের যাতে ঢাকা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে না হয় সে জন্য গঠিত কমিটির সবাই একমত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ উপো করে। আইএমইডিকে এ সুপারিশ অনুযায়ী নতুনভাবে সাজানো হলে দেশে গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন কাজ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য সফল হবে না।
সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই মাসে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী উন্নয়ন কাজের যথাযথ বাসত্মবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আইএমইডিকে শক্তিশালীকরণের নির্দেশ দেন। ওই সময়ে তিনি বলেছিলেন, আইএমইডির গৌরবময় ইতিহাস ফিরিয়ে এনে দেশের উন্নয়ন কাজের যথাযথ বাসত্মবায়ন করতে পারলে, দেশকে আশাতীতভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তাই তিনি এ বিভাগের জনবল সঙ্কটসহ সব সমস্যা চিহ্নিত করে শক্তিশালী করার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি স্পষ্ট করে নির্দেশ দেন, দেশের সব স্থানে চলমান উন্নয়ন কাজ তদারকি সহজ করা এবং সর্বণিক মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় মনিটরিং অফিস স্থাপন করতে হবে।
এ সময় তিনি আরও স্পষ্ট নির্দেশ দেন যে, আইএমইডিকে শক্তিশালী করতে সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি কমিটি তৈরি করতে হবে। ওই কমিটির সুপারিশে যেন অবশ্যই ১৯৮০ সালের আগ পর্যনত্ম দেশে যে ২১টি বৃহত্তর জেলা ছিল সে সব জেলায় একটি করে মনিটরিং অফিস স্থাপন করার পরামর্শ থাকে। এ ছাড়াও বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি বিভাগে অনত্মত একটি করে মনিটরিং অফিস স্থাপন করার সুপারিশ করার জন্যও তিনি নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী বিগত ২০০৯ সালের আগস্টে আইএমইডি প্রধান খোদেজা বেগমকে প্রধান করে আইএমইডিকে শক্তিশালীকরণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন_ আইএমইডির পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সমন্বয়ের পরিচালক রাশিদা খাতুন, উপ-সচিব মোহম্মদ ইউনুস ফকির, সিপিটিইউর মহাপরিচালক অমূল্য কুমার দেবনাথ, মহাপরিচালক মোহাঃ জবিউলস্না, মহাপরিচালক জাহিদ হোসেন, মহাপরিচালক মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন, মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিচালক সৈয়দ হায়দার আলী এবং যুগ্ম সচিব দিলীপ কুমার শর্মাসহ মোট ১০ জন।
জানা যায়, আইএমইডি শক্তিশালীকরণে গঠিত এই কমিটি প্রায় ৭/৮টি বৈঠকে মিলিত হয়ে কয়েক রকম সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করে। প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকার বাইরে মনিটরিং অফিস স্থাপনের সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পরের বৈঠকে আবার এ সিদ্ধানত্ম থেকে সরে আসে কমিটি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, কমিটির অর্থনৈতিক এবং প্রশাসন দুই ধরনের ক্যাডারই ঢাকার বাইরে মনিটরিং অফিস স্থাপনের সুপারিশ না করার জন্য ঐকমত্যে পেঁৗছায়। কারণ কমিটি মনে করে, ঢাকার বাইরে মনিটরিং অফিস স্থাপন করা হলে ওসব অফিসে তাদেরই বদলি করা হতে পারে। এতে তাদের ঢাকা শহর ছাড়তে হতে পারে। এই ভয়ে ঢাকার বাইরে মনিটরিং অফিস স্থাপনের সুপারিশ থেকে সরে আসে। এ ছাড়াও ঢাকার বাইরের কোন প্রকল্পে পরিদর্শনে গেলে পরিদর্শকরা টিএডিএ, প্রকল্পের ঠিকাদার বা সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে উপঢৌকন পাওয়া যায় তাও বন্ধ হয়ে যাবে। এসব চিনত্মা করে শেষ পর্যনত্ম আইএমইডিকে ঢাকার বাইরে মনিটরিং অফিস স্থাপনে সুপারিশ করা হয়নি।
এ ছাড়া ওই কমিটি বিভাগের অন্যতম প্রয়োজনীয় আইটি সেক্টরকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালনার কোন সুপারিশ করা হয়নি। এ খাতে নিয়োজিত ডাটাএন্ট্রি অপারেটরদের কোন ধরনের পদোন্নতির সুযোগও রাখা হয়নি।
এদিকে আইএমইডিকে শক্তিশালীকরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। স্বল্পমেয়াদী সুপারিশগুলো হচ্ছে, একজন জ্যেষ্ঠ সচিবের অধীনে সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় ন্যসত্ম করা যায়। আইএমইডির বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ শূন্য কর্মকর্তার পদ পূরণ করা। এ জন্য প্রয়োজনে জরম্নরী ভিত্তিতে বিসিএস পরীার মাধ্যমে এ জনবল সঙ্কট পূরণ করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সিপিটিইউর ১১টি পদ বিসিএস ক্যাডার দিয়ে পূরণ করা যেতে পারে। মনিটরিং দল এবং কর্মকর্তাদের আনা-নেয়াসহ মোট মোট ১০টি জিপ গাড়ির সংস্থান করতে হবে এবং মনিটরিং, ক্রয়কাজে (সিপিটিইউ) নিয়োজিতদের এবং পর্যবেণ দলের জন্য প্রশিণের ব্যবস্থা করা।
মধ্যমেয়াদী সুপারিশে এমআইএস সেক্টরে একটি মহাপরিচালক ও বিদ্যমান পদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রোগ্রামার পদের জন্য ৭টি পদ সৃষ্টির করার সুপারিশ থাকলেও বিদ্যমান ডাটাএন্ট্রি অপারেটরদের জন্য কোন পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়নি।
অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে বাসত্মাবায়নের জন্য প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য আরও লোকবল নিয়োগ, গবেষণা, দেশী-বিদেশী প্রশিণ এবং আইটি সেটআপ করার সুপারিশ করে এ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আইএমইডি শক্তিশালীকরণ কমিটির সভাপতি ও প্রধান খোদেজা বেগমের কাছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও কেন বৃহত্তর ২১ জেলা এবং বিভাগীয় শহরে মনিটরিং অফিস স্থাপনের সুপারিশ প্রতিবেদনে নেই_ জানতে চাইলে তিনি এখন অসুস্থ বলে ব্যাপারটি এড়িয়ে যান।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পেঁৗছে দেয়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন সর্বোৎকৃষ্ট হিসেবে বিবেচিত মালয়েশিয়ার প্রকল্প বাসত্মবায়ন বু্যরোর (পিআইবি) আদলে এ প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় পিআইবি। ওই সময়ে মালয়েশিয়ার পিআইবির মতো করে প্রতিষ্ঠানের সব অঙ্গ প্রয়োজনের নিরিখে ঢেলে সাজানো হয়। তখন এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য বরাদ্দ ছিল একটি হেলিকপ্টার। ওই হেলিকপ্টার দিয়ে সংশিস্নষ্ট মন্ত্রী, সচিব, সহকারী সচিবসহ সংশিস্নষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিদর্শনে যেতেন। ওই সময়ে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাসত্মবায়ন করে দেশে উলেস্নখযোগ্য উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু ১৯৭৭ সালে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান মতা নিয়ে তার পার্শ্ববর্তী দুষ্ট লোকের প্ররোচনায় এ প্রতিষ্ঠানটিকে একটি বিভাগ করা হলেও এর প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো কেটে প্রকল্প পর্যবেণ বিভাগ (পিএমডি) নামকরণ করা হয়। পরে ১৯৮২ সালে এরশাদ সরকারের আমলে এ বিভাগকে আরও অকার্যকর করে আইএমইডি নামকরণ করা হয়।
No comments