তৃণ ও অ্যাংরি বার্ডস এম. এন. সালেহ্ বায়েজীদ
বাসায় কেউ নেই, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে। তৃণ কম্পিউটারের বসে অ্যাংরি বার্ডস খেলছে। তৃণ এবার ক্লাস টুতে উঠবে। ও পড়ে মেপলস্্ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। তৃণ নামের ছেলেটি অ্যাংরি বার্ডস গেমের খুব ভক্ত।
ওর বাবা-মা দু’জনেই চাকরিজীবী। অবশ্য ওর মা সন্ধ্যার দিকে চলে আসে বাসায়, আর ওর আব্বুর আসতে আসতে সে ঘুমের রাজ্যে চলে যায়। আজ স্কুল ফাঁকি দিয়ে তৃণ বাসায় চলে আসে কেবল ভিডিও গেমস খেলার জন্য। ম্যামকে সে বলে যে, তার মাথা ব্যথা করছে এ জন্য বাসায় চলে যাবে। প্রতিদিন বিকেল বেলা তৃণ একা একা থাকতে থাকতে কেমন জানি হয়ে গেছে। বাইরে একটু খেলার মাঠ নেই যে সে সেখানে গিয়ে একটু খেলবে। তাছাড়া মুরগির খোঁয়ারের মতো এসব ফ্ল্যাট বাড়ি ওর ভাল লাগে না। বাইরে বৃষ্টি হলে সে শব্দও ও টের পায় না। অথচ ওদের দাদা বাড়িতে বৃষ্টির শব্দে সে কি মধুর আমেজ। সে স্মৃতি তৃণকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ওর মা কিছুতেই ওকে গেমস খেলতে দেবে না। তাই তো আজ মিথ্যা কথা বলে সে স্কুল থেকে বাড়ি আসে অ্যাংরি বার্ডস গেমস খেলার জন্য। এ গেমস ওর সবচে ভাল লাগে, কালো ক্ষেপাটে পাখিটাকে। ও অত ভালবাসে এ গেমসটাকে যার জন্য সে তার ঘরে ইয়া বড় এক পোস্টার আটকে দেয় অ্যাংরি বার্ডসদের। ওর কত সুন্দর সুন্দর টি-শার্ট আছে অ্যাংরি বার্ডসের ছবিসহ। তাছাড়াও ওর মগে পর্যন্ত অ্যাংরি বার্ডস। এ গেমস খেলতে খেলতে মাঝে মাঝে পড়ালেখা, গোসল এমনকি ঘুমাতে পর্যন্ত ভুলে যায় তৃণ। যার জন্য মিডটার্মস পরীক্ষায় খুব একটা ভাল রেজাল্ট করতে পারেনি। লুকিয়ে লুকিয়ে যখনই সুযোগ পায় কেবল অ্যাংরি বার্ডস গেমস খেলে। সেদিন ওর মা এসে ধরে ফেলে যে সে অ্যাংরি বার্ডস গেমস খেলছে। আচ্ছা করে পেদানি দেয় তার মা। আর তৃণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে, ‘আমি আর অ্যাংরি বার্ডস গেমস খেলব না যদি আমাকে খেলার জন্য সুন্দর একটা মাঠ দাও।’ তৃণ এ কথায় তার মা বেশ ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যিই তো আমরা এই যে এত বিশাল বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ি করছি ওদের জন্য তো একটু খেলার মাঠ রাখছি না। সেদিনের পর থেকে তৃণ এর মা ওকে নিয়ে প্রায়ই দূরে একটা খেলার মাঠে নিয়ে যায়। তৃণ এখন অ্যাংরি বার্ডস গেমস খেলে তবে মাঝে মাঝে। তৃণ তার মাকে খুব ভালোবাসে বলেই মার কথামতো অ্যাংরি বার্ডস গেমস খেলা কমিয়ে দেয়। আর তাতে করে ওর মাও বেশ খুশি।
No comments