বিচারের সকল প্রক্রিয়া শেষ আদেশের অপেৰা- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা
বিকাশ দত্ত শেষ হলো বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের সকল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দ-প্রাপ্ত পাঁচ খুনীর সুপ্রীমকোর্টের রায় রিভিউয়ের শুনানি মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম ঘোষণা করবেন রিভিউ শুনানির আদেশ। ২৪ জানুয়ারি থেকে রিভিউ শুনানি শুরম্ন হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তৃতীয় দিনে শুনানি শুরম্ন হয়। প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে তৃতীয় দিনের শুনানিতে অংশ নেয় সরকার ও আসামিপৰের আইনজীবীগণ। পাঁচ খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক হমান, লে. কর্নেল (অব) মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার) ও মেজর (অব) বজলুল হুদা আপীল রায়ের ওপর রিভিউ পিটিশন দাখিল করে।শুনানিতে সরকারপৰের আইনজীবীগণ বলেন, ৫টি রিভিউয়ে আসামিপৰের আইনজীবীগণ যে গ্রাউন্ড তুলে ধরেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনটি আদালত বিচার-বিশেস্নষণ করে রায় দিয়েছে। এখানে রিভিউয়ের কোন স্কোপ নেই। কাজেই তাদের রিভিউ নাকচ করা হোক। অন্যদিকে আসামিপৰের আইনজীবীদের কথা, "বিবেকটা গ্রেফতার হয়ে গেছে। গদাধর বাবু সব পারেন, পারেন না শুধু বিধিলিপি খ-াতে।" বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আইনসম্মত হয়নি। ঘটনাটি ছিল সেনা বিদ্রোহ। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদালত ঘটনার মধ্যে সেনাবিদ্রোহ নেই বলে মনত্মব্য করেছে।
মঙ্গলবার সকাল নয়টা ২০ মিনিটে রিভিউ শুনানি শুরম্ন হয়। তৃতীয় দিনেও সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রধান ফটকে তলস্নাশি করে গাড়ি ঢুকতে দেয়া হয়। আদালতে আগতদের প্রয়োজনবশত তলস্নাশি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিল। তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানির শুরম্নতেই বক্তব্য রাখেন আসামিপৰের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান,্ এরপর সরকারপৰের প্রধান কেঁৗসুলি আনিসুল হক, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ড. তৌফিক নেওয়াজ। তাঁদের বক্তব্য শেষ হলেই আসামিপৰের অপর দুই আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান ও ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুন শুনানিতে অংশ নেন। সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শুনানি শেষ হয়। এ সময় আদালত আদেশের জন্য বুধবার নির্ধারণ করে।
শুনানি শেষে রাষ্ট্রপৰের প্রধান কেঁৗসুলি আনিসুল হক, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আসামিপৰের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান, ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুন ও আব্দুর রেজ্জাক খান সাংবাদিকদেরকে ব্রিফিং করেন। রাষ্ট্রপৰের প্রধান কেঁৗসুলি এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ আসামি পৃথক পৃথকভাবে রিভিউয়ের আবেদন জানিয়েছিল। আদালতে বলেছি ৫টি রিভিউয়ে যে সমসত্ম গ্রাউন্ড দেখানো হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আসামিপৰ ও সরকারপৰ আপীল বিভাগে যুক্তি দেখিয়েছে। আপিল বিভাগে সবকিছু পর্যালোচনা করেই রায় প্রদান করেছে। ৫টি রিভিউয়ের গ্রাউন্ডে সেনা বিদ্রোহ ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। আপীল বিভাগে প্রত্যেকটি বিষয়ের ওপর পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়েছে। এইগুলো ভুল পরিলৰিত হয়, তা হলেই রিভিউ করা যাবে। এই উপমহাদেশে বাংলাদেশসহ রিভিউয়ের ওপর অনেক রায় আছে। শতকরা ৯৭ ভাগ ৰেত্রে খারিজ হয়ে যায়। মাত্র ৩ ভাগ গ্রহণযোগ্য হয়। আগের ফ্যাক্টসে আপীল বিভাগে বক্তব্য দেয়া হয়েছে। সেই ব্যাপারে নতুন করে রিভিউয়ে কিছু বলা যাবে না। আসামি পৰ আদালতে বক্তব্য দেয়ার পুরো অধিকার পেয়েছে।
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আসামিরা যে পাঁচটি রিভিউ পিটিশন দিয়েছে, তা টিকতে পারে না। এটা নাকচ করা হোক। কারণ তারা আপীল বিভাগে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। আপীল বিভাগে যে রায় হয়েছে রিভিউয়ে তার ভিন্ন রায় দেয়ার অবকাশ নেই। চোখে দেখলেই বোঝা যাবে এখানে ত্রম্নটি নেই। বিচারিক আদালত, হাইকোর্ট এবং সুপ্রীমকোর্ট বিচার-বিশেস্নষণ করে রায় দিয়েছে। এখানে রিভিউ করার কোন স্কোপ নেই।
লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমানের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, "বিবেকটা গ্রেফতার হয়ে গেছে। নদাধর বাবু সব পারেন, পারেন না শুধু বিধি খ-াতে"। তিনি বলেন, এটা সেনা বিদ্রোহের ভিত্তিতে অবস্থান করে। সে ৰেত্রে সেনা বিদ্রোহের প্রথম বিষয় হবে সেনা আইনে এবং পরবতর্ীতে কোন অপরাধ থাকলে সেগুলো নিজ নিজ আইনে বিচার হবে। এ ৰেত্রে প্রারম্ভেই হত্যার বিচার হয়নি। '৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছিল সেনা বিদ্রোহ। তা সত্ত্বেও আদালত ঘটনার মধ্যে কোন সেনা বিদ্রোহ নাই বলে মনত্মব্য করেছে।
মেজর (অব) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)-এর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুন বলেন, আমরা ইনডেমনিটি ও মিউনিটির ওপর বক্তব্য তুলে ধরেছি। আদালত বলেছে, বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর লোক ছিল না। সুতরাং এই ৰেত্রে এটা মিউনিটি নয়। অথরিটিকে চ্যালেঞ্জ করলেই সেটা মিউনিটি হবে। এখানে আমরা আদালতকে প্রশ্ন করেছি, রাষ্ট্রপতি ল ফুল অথরিটি কিনা। সংবিধান, আর্মি এ্যাক্ট, নেভি এ্যাক্ট, এয়ারফোর্স এ্যাক্ট অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ল ফুল অথরিটি। তিনি শুধু কমান্ডার চীফ নন, তিন বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যায় যাতে খুনীদের বিচার না হয়, সেজন্য খোন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করে। শুধু তাই নয়, পরবতর্ীতে খুনীদের পুরস্কার হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি ন্যসত্ম করা হয়। খোন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়ার সময় এ সমসত্ম খুনী প্রত্যৰ ও পরোৰভাবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ৰমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন করে। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ খুনীকে ফায়ারিং স্কোয়াডে অথবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদ- প্রদান করেন। মৃতু্যদ- নিশ্চিতকরণের শুনানি হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই মামলার দ্বিধাবিভক্ত রায় প্রদান করে। পরে তৃতীয় বেঞ্চ ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ১২ জনের মৃতু্যদ- অনুমোদন করে রায় দেয়। এই রায়ের বিরম্নদ্ধে কারাগারে আটক ৫ খুনী আপীল করে।
২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়। ২৯ দিন শুনানি শেষে ১৯ নবেম্বর ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়।
আপীল বিভাগের রায়ের ওপর কারাগারে আটক পাঁচ খুনী রিভিউ আবেদন করে। তিনদিন শুনানি শেষে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বুধবার আদেশের দিন নির্বাচন করেছে। রিভিউ আবেদন নাকচ হলে কারা কর্তৃপৰ তাদের প্রশাসনিক কাজ শুরম্ন করতে পারবে।
No comments