দ্বিতীয় দিনশেষে ২২৬ রানে পিছিয়ে টাইগাররা- শচীন-দ্রাবিড়ের জোড়া সেঞ্চুরি by আরিফুর রহমান বাবু
সংশয় সত্যি হলো। চট্টগ্রামের মতো ঢাকায় আর প্রথম ইনিংসে ভারতের কাছাকাছি থাকা হলো না বাংলাদেশের। অন্যভাবে বললে এবার আর প্রথম থেকেই ধোনি বাহিনীর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে পারল না টাইগাররা।
চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে প্রাণপণ লড়ে মাত্র ১ রান পেছনে থাকা শাকিব বাহিনী দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষেই পিছিয়ে পড়েছে ২২৬ রানে। লিটল মাস্টার শচীন তেন্ডুলকর আর মিস্টার ডিপেন্ডেবল রাহুল দ্রাবিড় ভারতকে ইতোমধ্যেই সুবিধাজনক অবস্থানে পেঁৗছে দিয়েছেন। এই দুই বিশ্ব তারকার উইলোবাজির মুখেই আসলে চাপে পড়েছে স্বাগতিকরা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল জোড়া সেঞ্চুরি হয়েছে, যা শচীন ও রাহুল দ্রাবিড় মিলেই ভাগ করে নিয়েছেন। ওই জুটির দৃঢ়তার কাছেই নুয়ে পড়েছে রাজিব, শফিউল, রম্নবেল ও শাকিবের বোলিং। বাংলাদেশকে ২৩৩ রানে বেঁধে ফেলে প্রথম দিনশেষে বিনা উইকেটে ৬৯ রান করা ভারত সোমবার দ্বিতীয় দিনশেষে তুলেছে ৪৫৯। কতটা বাড়বে, তা বলা না গেলেও ধোনির দল আরও সামনে যাবে। ভারতের প্রথম ইনিংসের দৈর্ঘ্য বাড়বে অবশ্যই। কারণ সবে ইনিংসের প্রথম অর্ধেক শেষ হয়েছে। দুই ওপেনার সেবাগ, গাম্ভীর, শচীন তেন্ডুলকর, মুরালি বিজয় ও নাইটওয়াচম্যান হরভজন সিং আউট হয়ে সাজঘরে। ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ২২ রানে ক্রিজে। দ্বিতীয় দিনের শেষ ওভারে শফিউলের বলে হরভজন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে দিনের খেলা। ২৭ ও ৫৩ রানে দুই দুইবার জীবন পেয়ে বেঁচে যাওয়া শচীন শেষ পর্যনত্ম ক্যারিয়ারের ৪৫ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ১৪৩ রানে আউট হয়েছেন। কিন্তু আরেক সেঞ্চুরিয়ান রাহুল দ্রাবিড় আউট হননি। তার পরও দল তাঁর সার্ভিস আর পাবে কি না সন্দেহ। বাংলাদেশ পেসার রাজিবের বলে চোয়ালে গুরম্নতর আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন দ্রাবিড়। মাঠ ছেড়ে হোটেলরম্নমে বিশ্রাম নিতে পারেননি। চোয়ালে ছোটখাটো ফ্র্যাকচার ধরা পড়ায় স্কোয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার রাত তাঁর স্কোয়ার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই কেটেছে। তবে শেষ খবর, আঘাত তত গুরম্নতর ও জটিল নয়। আজ মঙ্গলবারই হয়ত হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারবেন।১১১ রানে মাঠ ছাড়া দ্রাবিড় আর ফিরে না আসলে এক উইকেট কম থাকবে। তার পরও চার উইকেট আছে। যেখানে ধোনি-যুবরাজ সিংয়ের মতো ব্যাটসম্যানও আছেন। কাজেই ভারত যে আজ তৃতীয় দিন প্রথম সেশনের পুরো সময় খেলার চেষ্টা করবে তাতে সন্দেহ নেই। সম্ভব হলে তার পরও কিছু সময় ব্যাট করতে পারে। ভারত কোথায় গিয়ে থামবে? বা আদৌ ইনিংস ঘোষণা করবে কি না, কালকের খেলা শেষে এ প্রশ্নই ঘুরেফিরে উঠেছে। তবে দ্বিতীয় দিনশেষের অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে যিনি কথা বলেছেন, সেই শচীন তেন্ডুলকর জানাতে পারেননি, তাঁর দল কোথায় গিয়ে থামতে চায়। শচীন জানাতে পারম্নন আর না-ই পারম্নন, এর আগে যা বলা হয়েছে, হয়ত তাই-ই হবে। ধোনি দ্বিতীয়বার ব্যাটিং করার ইচ্ছা নাও করতে পারেন। কাজেই অনত্মত ৪০০ রানের লিড হলেই হয়ত বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে পাঠানোর চিনত্মা করতে পারেন। এতে করে বাংলাদেশের ইনিংস পরাজয় এড়ানোর কঠিন সংগ্রাম করতে হবে।
উইকেটের যে অবস্থা, তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০০ রান করা অনেক কঠিন। সারা বিশ্ব যার উইলোর দাপটে কম্পমান, সেই শচীন তেন্ডুলকরও কাল খেলাশেষেই জানিয়ে দিয়েছেন, উইকেটের অবস্থা তেমন ভাল নয়। গতি ও বাউন্স দুটোই দু'রকমের হচ্ছে। কখনও দ্রম্নত আসছে, আবার কখনও একটু থেমে। কোন বল একটু উঠছে, আবার কোনটা নিচু হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, শচীনের ধারণা, যতই সময় গড়াবে, পিচ ততই ভাঙবে। কাজেই ক্রমেই ভেঙ্গে যাওয়া উইকেটে ভারতীয় স্পিনাররা আবার জেঁকে বসতে পারেন। তখন হরভজন সিং আর প্রজ্ঞান ওঝা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। সব মিলে সামনে ঘোর অন্ধকার। প্রথম ইনিংসে যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ে হয়েছে আসল সর্বনাশ। আর কাল ফিল্ডিং-ক্যাচিং ব্যর্থতায় সর্বনাশ নেমে এসেছে আরও। এক রকিবুল শচীনকে দুই দুইবার জীবন দিয়েছেন। গালিতে দাঁড়িয়ে দুটি ক্যাচ ফেলেছেন শচীনের। যার প্রথমটি ছিল হাতের মুঠোয়। তখন লিটল মাস্টার ছিলেন ২৭ রানে। এর পর ৫৩ রানে আবার ক্যাচ ফেললে আর ভুল হয়নি বিশ্বসেরা ব্যাটিং প্রতিভার। ওই ক্যাচ ফেলে দেয়ার মাসুল কিভাবে গুনতে হয় তা আজ তৃতীয় দিনই বোঝা যাবে। যদিও কালকের খেলাশেষে পেসার রাজিব বেশ আস্থার সঙ্গে বলেছেন, আমরা মঙ্গলবার সকালের সেশনে ভারতীয় ইনিংসের বাকি ৫ উইকেটের পতন ঘটাব। কিন্তু তার পর? তার পরের কাজ তো ব্যাটসম্যানদের। রাজিব কি করবেন? কিছু করতে না পারলেও ব্যাটসম্যানদের করণীয় যে খুব ভাল ব্যাটিং, তা ঠিকই বুঝেছেন রাজিব। তাই বলেছেন, আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসে খুব ভাল ব্যাটিং করতে হবে। আসলেও করতে হবে। প্রথম ইনিংস এবং চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ইনিংসের চেয়েও ভাল। তা না হলে এবার আর জয়-পরাজয়ের সন্ধিণে দাঁড়ানো যাবে না। আগেই করম্নণ পরাজয়ের লজ্জায় ডুবতে হবে।
No comments