তিন দিনে ২ হাজার কিউসেক পানি কমে গেছে তিসত্মায়- কমেছে ভারতের অংশেও by তাহমিন হক ববি
নীলফামারী থেকে শুষ্ক মৌসুমে গত কয়েকদিনে উজান থেকে তিসত্মা নদীতে যে ঢল নেমেছিল এতে মনে করা হচ্ছিল অতীত স্মৃতিময় দিনগুলো ফিরে পেতে যাচ্ছে তিসত্মা। শুষ্ক মৌসুমে তিসত্মায় যেন ঢল নেমেছে। তিসত্মায় উজানের পানির তোড় বাড়ছে।
তিসত্মা প্রাণ পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তিসত্মায় পানি ৫ হাজার কিউসেক থেকে ৬ হাজার ৩৯৬ কিউসেকে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এখন তা কমে গেছে। ভাটি অঞ্চলে তিসত্মায় আর পানি নেই। নদীর নাব্য ফের হারিয়ে যেতে বসেছে। হঠাৎ করে তিসত্মায় ঢল, আবার সেই ঢল থেমে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ এখন দিন দিন কমছে তো কমছে। কিন্তু কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর সংশিস্নষ্টরা পরিষ্কারভাবে বলতে পারলেন না। তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দাবি করে বলছেন তিসত্মার পানি ভারত অংশেও হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া সে দেশেও সেচ কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে তাদের তিসত্মার পানি দিয়ে।মঙ্গলবার তিসত্মার পানি কমে নেমে এসেছে ৩ হাজার ৯৮০ কিউসেকে। আগের দুই দিন ছিল ৪ হাজার ৮শ' কিউসেক, পরের দিন তা আরও কমে এসে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩০৫ কিউসেক। গড়ে তিসত্মায় গত তিন দিনে পানি কমে গেছে ২ হাজার কিউসেক। উজানের পানির গতি এখন দিন দিন কমছে বলে তিসত্মা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন ম-ল স্বীকার করেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিসত্মা ব্যারাজের ৪৪ টি সস্নুইসগেট বন্ধ করে রেখে উজানের পানি আটকিয়ে সেচ খালে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ফলে তিসত্মার ভাটি অঞ্চলে এত দিন যে পানি ছাড়া ছিল তা বন্ধ করতে হয়েছে সংশিস্নষ্টদের। তবে উপসহকারী প্রকৌশলী বললেন, ব্যারাজের দু'টি গেট খুলে রেখে ভাটি অঞ্চলের তিসত্মার চিহ্ন ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মতে দিন দিন যেভাবে পানি কমছে তাতে সেচনির্ভর বোরো আবাদে তিসত্মা সেচ প্রকল্প কৃষকদের সেচ দিতে ব্যর্থ হবেন তাঁরা। কৃষকরা বলছেন, এখন তাঁরা জমি তৈরি করে বোরোর রোপা বুনছেন। তিসত্মার সেচের পানি এখনও পাচ্ছেন। তবে সামনে পিক সময় পর্যনত্ম পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি লাগবে। তখন পানি পাওয়া না গেলে ৰেত বাঁচানো যাবে না। তিসত্মা ব্যারাজের সংশিস্নষ্টরা বলছেন পানি কমে যাওয়ায় তিসত্মার ভাটি অঞ্চলের পানি আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। উজানের পানি ধারণ করে তা সেচখালে দিয়ে বোরো চারা রোপণের জন্য কৃষকদের সেচ দেয়া হচ্ছে। ফেব্রম্নয়ারিতে তিসত্মায় উজানের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি না পেলে বোরো আবাদে নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুর জেলার ১৩ উপজেলায় ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ দেয়া সম্ভব হবে না। এতে কৃষকদের মহা বিপাকে পড়তে হবে।
এদিকে গত কয়েকদিনে উজান থেকে তিসত্মায় যে পরিমাণ পানি আসছিল তাতে সকলে মনে করছিল শেখ হাসিনার ভারত সফর এবং তিসত্মার পানি চুক্তি আলোচনার ফিডব্যাক হিসাবে ভারত এই শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে পানি দিতে শুরম্ন করেছে। আশা করা হচ্ছিল পানিপ্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু জানুয়ারিতে সেই পানি বেড়ে আবার মাত্র তিন দিনে মাথায় দুই হাজার কিউসেক পানি কমে যায়।
এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে বাংলাদেশের ডালিয়ায় দোয়ানীতে অবস্থিত তিসত্মা ব্যারাজের ১২০ কিলোমিটার উজানে ভারতেন গোজলডোবার সেচ প্রকল্প ব্যারাজ রয়েছে। আর বাংলাদেশের তিসত্মা ব্যারাজের উজানে মাত্র ২০ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশের নদী। যা তিসত্মা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জ জিরো পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সূত্র মতে ভারত তাদের গোজলডোবায় প্রায় ২২১ দশমিক ৫৩ মিটার দীর্ঘ ব্যারাজটিতে ৪৫টি সস্নুইসগেট করে সেচ কার্যের জন্য ১৯৮৭ সালের ২৯ জানুয়ারি উন্মুক্ত করে। ভারত গোজলডোবা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে। প্রথম পর্যায় সেচ প্রকল্প, দ্বিতীয় পর্যায়ে জল বিদু্যত প্রকল্প ও তৃতীয় পর্যায়ে গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র লিং ক্যানেল করে নৌপথ গড়ে তোলা।
বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে জলপাইগুরি জেলার ৬১ হাজার, দার্জিলিং জেলার ১৭ হাজার, মালদহ জেলার ৩৮ হাজার দণি ও উত্তর দিনাজপুর জেলার ২ লাখ ৪ হাজার একরসহ মোট ৩ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে সেচ প্রদান করছে। তাদেরও পানি ঘাটতি হয়েছে বলে দিন দিন তারা গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে তিসত্মার পানি আটকিয়ে তাদের সেচ কার্যক্রম পরিচালিত করছে। আর তিসত্মায় বাংলাদেশ অংশে পানি কমে যাওয়ায় তিসত্মা ব্যারাজের উজানের ২০ কিলোমিটার তিসত্মার প্রাণ থাকলেও তিসত্মা ব্যারাজের সস্নুইসগেট বন্ধ করে রাখায় তিসত্মার ভাটির ২ শ' কিলোমিটার ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তিসত্মার পানি চুক্তির বিষয়টি স্বাৰরিত হলে হয়ত পানি পাওয়া যেতে পারে বলে সংশিস্নষ্টরা মনে করছে।
No comments