উন্নয়ন ধরে রাখতে ফের সুযোগ দিন ॥ জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ০ মাইনাস টু ফর্মুলা প্রবর্তনকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাচ্ছে ০ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করলে জাতি ক্ষমা করবে না ০ নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী ০ দুদক কাজ করছে স্বাধীনভাবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং অর্থনৈতিক মুক্তির যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে আবারও দেশ পরিচালনার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
(ভাষণের পূর্ণ বিবরণী পৃষ্ঠা-৩-এ) দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় যারা ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা প্রবর্র্তন করতে চেয়েছিল তারা এখনও সক্রিয়। মাঝে মাঝেই তারা মাথাচাড়া দিয়ে উড়তে চাচ্ছে। সংঘাতের পথ পরিহার করার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না। তাহলে জাতি আপনাদের কখনই ক্ষমা করবে না। আসুন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, সকলে মিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তা বাস্তবে রূপ দেই। ভবিষ্যতে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার যেন কোন মহল কেড়ে নিতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দল (আওয়ামী লীগ) জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, জীবন দেয়Ñ তাদের হাতে জনগণের ভোটের অধিকার সব সময় নিশ্চিত থাকবে। নির্বাচন কমিশনে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। জনগণ যাকে খুশী তাকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসাবে।আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশনও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সম্প্রচার করে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, চার বছর পর আমরা গর্বভরে বলতে পারছি, নির্বাচনের প্রাক্কালে যেসব অঙ্গীকার দেশবাসীর কাছে দিয়েছিলাম, নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। কোন কোন ক্ষেত্রে লক্ষ্যের চেয়েও বেশি অর্জন করেছি। সামনের দিনগুলোতেও আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। তিনি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেও কাজ শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাঁকে মাঝ পথে স্তব্ধ করে দেয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করছি। বিশ্ব এখন বলছে, বর্তমান সরকারের ব্যাপক কর্মকা- বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপূর্ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন। আপনারাই পারেন আমাদের সেই সুযোগ দিতে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে। প্রধানমন্ত্রী সকলে মিলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচার আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। বাংলার শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ ও আপামর মা-বোনসহ প্রতিটি মানুষই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তিনি বলেন, এ দাবিকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মাঠে নেমেছে। নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। জামায়াত ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য নতুন কিছু নয়। তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে অবৈধ মার্শাল ল’ সরকার গঠন করে। তারপর যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন শুরু করে। তাদের জেল থেকে মুক্ত করে। অনেককে দেশে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেন। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা-মন্ত্রী বানান।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে দেশবাসীর সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত যত ষড়যন্ত্র করুক, যত অপচেষ্টা করুক- যুদ্ধাপরাধী, যারা মা-বোনদের সম্ভ্রমহরণকারী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, বাঙালীর ঘরে ঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনকারী, তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। আমি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করি ও দোয়া চাই।
তত্ত্বাবধায়কের নামে বিগত ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ভয়াবহ অবস্থার কথা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখে। এক পর্যায়ে তারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার প্রয়াস চালায়। সমগ্র দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। শিক্ষক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার হয়রানি করা শুরু হয়। গ্রামে গ্রামে হাটবাজার ভেঙ্গে ফেলা, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি সাধন করাসহ নানা ঘটনায় মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠে। মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করে। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে নির্যাতন চলতে থাকে।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের এমন নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ দেশে ও বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় তোলে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক পর্যায়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, একটি বিষয় লক্ষণীয় সেদিন যারা মাইনাস টু ফর্মুলা প্রবর্তন করতে চেয়েছিল তারা এখনও সক্রিয়, মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাচ্ছে।
তুলনামূলক বিচারের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। এজন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের পর কখনও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়নি। একমাত্র ২০০১ সালের ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর পূর্ণ করে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করে। অতীতে কোন সরকারের আমলেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি।
বর্তমান মহাজোট সরকারের চার বছর মেয়াদে অনুষ্ঠিত প্রায় ৬ হাজার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু অনুষ্ঠানের কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত চার বছরে নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় সংসদের ১৪টি উপনির্বাচনসহ সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের মোট ৫ হাজার ৫০৯টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বমোট ৬৩ হাজার ১৯৪ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কোথাও কোন অভিযোগ ওঠেনি।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার, উপনির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীও পরাজিত হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনরকম হস্তক্ষেপ করেনি। আমরা জনগণের রায় মাথা পেতে নিয়েছি। অতীতে কোন সরকারের আমলেই এ ধরনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি। তিনি বলেন, জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষার জন্য জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। এভাবেই সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এর ফলে জনগণ সরকারের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পাবে, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম মহামান্য রাষ্ট্রপতি কোন বাধ্যবাদকতা না থাকা সত্ত্বেও সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেন। তিনি এই সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন অফিস চালু হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকে। নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছানুযায়ী নিয়োগ ও বদলি হয়ে থাকে। নির্বাচন কমিশনে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠুভাবে করতে পারেনি। তারা ঢাকার মিরপুর ও মাগুরার উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সন্ত্রাস করে। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে জাতির পিতার হত্যাকারী খুনী কর্নেল রশিদ ও মেজর হুদাকে সংসদ সদস্য করে আনে। সেই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাস করে। জনগণ সেই নির্বাচন মেনে নেয়নি। গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ বিএনপি সরকারের পতন ঘটে।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালেও বিএনপি একই ঘটনা ঘটায়। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা তৈরি করে। বিতর্কিত ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার করে। নিজ দলীয় রাষ্ট্রপতিকেই প্রধান উপদেষ্টা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভোট কারচুপি করে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়া। কিন্তু জনগণ বিএনপির এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ায়। আন্দোলন গড়ে তোলে, প্রতিবাদ করে। ১০ জন করে উপদেষ্টা নিয়োগ হতে থাকে, আর নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়ে অধিকাংশ উপদেষ্টা দফায় দফায় পদত্যাগ করে। তিনি বলেন, এরই এক পর্যায়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন, ফলে ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করা হয়েছে। দুদক এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে দুদক, মন্ত্রী-উপদেষ্টা-এমপি-সচিবকে তলব করছে। বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছে। মামলা দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় কি এমনটা কল্পনাও করা যেত? দেশবাসীর ওপরই বিচারের ভার তুলে দিয়ে তিনি বলেন, সকল অনিয়ম দূর করার স্বার্থে হলমার্ক ও ডেসটিনির অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। অর্থ পাচার রোধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করেছি। পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে।
সরকারের গত চার বছরের উন্নয়ন ও সাফল্যে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই তখন দেশে চরম দুরবস্থা বিরাজ করছিল। সর্বত্র এক ভীতিকর অবস্থা, থমথমে ভাব। খাদ্যপণ্যের দাম ছিল আকাশচুম্বী। লোডশেডিংয়ে জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত, ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীরা ছিল আতঙ্কিত। কৃষিজীবী ভাই-বোনেরা সেচ, সার ও বীজের দুর্মূল্যের কারণে চাষাবাদ করতে পারছিল না। জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছিলেন। মানবাধিকার ছিল বিপন্ন, স্বাধীন মত প্রকাশেরও কোন সুযোগ ছিল না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর্থিক সঙ্কট ও মন্দা চলছিল। খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের পর এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে পড়েছিলাম। তাই সরকারের প্রথম দিনই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক করে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী করণীয় নির্ধারণ করি। শুরু হয় সরকারের এক মহাকর্মযজ্ঞ। এই চার বছর সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। দেশবাসীও আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। দেশ দ্রুত এগিয়ে গেছে, প্রতিটি পরিবারে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও আমরা গড়ে সাড়ে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। চার বছরে ২০ লাখ ৪০ হাজার জনশক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে, রেমিটেন্স এসেছে প্রায় ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৬ সালে মাত্র ৩ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে বিরাট অর্জন বলে আখ্যায়িত করেছে। দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ দেশ। বাংলাদেশকে ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি-ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
No comments