সরকারীকরণ
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও অবহেলিত শিক্ষক সমাজের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োচিত ও প্রশংসনীয় প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ধাপ হচ্ছে প্রাইমারী শিক্ষা।
প্রাথমিক শিক্ষকরাই তৃণমূল পর্যায়ের অগণিত শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে জীবন গড়ার ভিত্তি তৈরি করে দেন। জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যত কর্ণধার শিশুদের জীবনের ভিত্তিস্তর নির্মাণের মহান কারিগর প্রাইমারী শিক্ষকদের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের জীবন-জীবিকার কথা স্বাধীনতাপূর্বকালে তেমনটা ভাবা হয়নি। সে সময় এসব স্কুলের শিক্ষকরা সরকার থেকে সামান্য বেতন পেতেন। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের সংবিধানের আলোকে প্রাইমারী শিক্ষা ব্যবস্থায় যেমন নতুন সম্ভাবনার সূচনা হলো তেমনি অবহেলিত প্রাইমারী শিক্ষকদের ভাগ্যও রাতারাতি পাল্টে গেল। প্রথমবারের মতো তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ গড়ার কারিগরদের অবদানের উপযুক্ত মূল্যায়ন করলেন স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতাউত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের হাজারও সমস্যার মধ্যে তিনি প্রাইমারী শিক্ষার মানোন্নয়নকল্পে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ১৯৭৩ সালে। সে সময় ৩৬ হাজার ১৬৫টি বেসরকারী প্রাইমারী স্কুল এবং সেসব স্কুলের ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়। আর এভাবেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে চালু ঘুণেধরা শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।জাতির পিতার সেই ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছেন প্রাইমারী শিক্ষকদের কল্যাণে। গত ৯ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক শিক্ষক মহাসমাবেশে তিনি দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাইমারী স্কুল ও সেসব স্কুলের ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণের ঘোষণা দেন। ২২ হাজার ৯৮১টি স্কুল ও ৯১ হাজার ২৪ শিক্ষকের ক্ষেত্রে এই ঘোষণা কার্যকর হয়েছে এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। বাকিদের ক্ষেত্রে দুটি পর্যায়েÑ আগামী ১ জুলাই ও আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও অবহেলিত শিক্ষক সমাজের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োচিত ও প্রশংসনীয়। বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাদের চাকরি সরকারীকরণের। তাদের অবহেলিত জীবনের নানা দুঃখ-কষ্টের কথা পত্র-পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হয়েছে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। কিন্তু তাদের সে দুর্দশার অবসান হয়নি হাজারও দাবি-দাওয়া, মিছিল-বিক্ষোভ আর আন্দোলনের পরও। একারণেই প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাটি তাদের কাছে ছিল পরম আনন্দের উপলক্ষ। গ্রাম-গ্রামান্তরের লক্ষাধিক বেসরকারী প্রাইমারী শিক্ষক মহানন্দে সমবেত হয়েছিলেন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। সেই মহাসমাবেশে তাদের চাকরি সরকারীকরণের ঘোষণা আসে বঙ্গবন্ধুকন্যার মুখ থেকে, যা সম্ভবত তাদের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।
শিক্ষকদের চাকরি সরকারী হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন। সমাজেও তাঁরা সম্মান পাবেন। এখন তাঁদের দায়িত্ব হবে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করা। সেই লক্ষ্যে তাঁরা নিবেদিত হয়ে কাজ করলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার হার যেমন বাড়বে তেমনি তার গুণগত উৎকর্ষও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
No comments