তীব্র শীতে হাসপাতাল ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে by নিখিল মানখিন
সারাদেশে শীতজনিতরোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভিড় বাড়ছে সর্দি-কাশি জ্বর, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীদের ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শীতজনিত রোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ সময় শীতজনিত রোগের প্রকোপ থাকবেই। প্রতি বছরই এমনটি হয়ে থাকে। তবে কিছুতেই ঠা-া লাগানো যাবে না। সাবধানতা অবলম্বন না করলে সাধারণ ব্যাধিই অনেক সময় স্থায়ী ও জটিল ব্যাধিতে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে রোগীর কাশি অনেক সময় রূপ নিচ্ছে শ্বাসকষ্টে। কেউ কেউ আক্রান্ত হয় নিউমোনিয়ায়। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রকোপ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। তবে সর্দি-কাশির মতো মৌসুমী জ্বরের জন্য তেমন চিকিৎসা লাগে না। জ্বরে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা হতে পারে। তিন দিন পর্যন্ত এ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তিন দিন পরও জ্বর না কমলে, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে।গত বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের ওপর মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীত ও শীতজনিত রোগে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নগরীতেও সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের হিড়িক পড়েছে। একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের কোনো সদস্যই রেহাই পাচ্ছে না। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও বিএমএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. আব্দুর রউফ সর্দার বলেন, সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে। প্যারাসিটামল ও এ্যান্টিহিস্টাসিন খেলেই এটি ভাল হয়ে যায়। ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভাল। বিশ্রামে থাকতে হবে। হাঁচি দেয়ার সময় রুমাল বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও এ সব রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, আগের তুলনায় মৌসুমী জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। আমার ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর আগমন বেড়েছে। সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে। চেম্বারে প্রতিদিন ১৬ থেকে ২২ জন রোগী আসছে। তিনি জানান, এটি ভাইরাসজনিত রোগ। আর ভাইরাসজনিত এ সব রোগ অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত হতে সহায়তা দেয়। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কারণে এ সব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাইরের খোলা জায়গার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া উচিত। নিয়মিত শরীর মুছে দিতে হবে। শীতজনিত রোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ সময় শীতজনিত রোগের প্রকোপ থাকবেই। প্রতি বছরই এমনটি হয়ে থাকে। তবে কিছুতেই ঠা-া লাগানো যাবে না। সাবধানতা অবলম্বন না করলে সাধারণ ব্যাধিই অনেক সময় স্থায়ী ও জটিল ব্যাধিতে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রকোপ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সকল বয়সের মানুষেরই গরম কাপড় ব্যবহার করা দরকার। পাশাপাশি খাবার পানি এমনকি গোসলের পানি পর্যন্ত কুসুম গরম হলে ভালো হয়। শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) উর্ধতন বৈজ্ঞানিক মুশতাক হোসেনও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, সর্দি-কাশি জ্বর নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। আতঙ্কের কিছু নেই। তবে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। ভাইরাসবাহিত অসুখে আক্রান্ত হলে বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। পেটের পীড়া ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। জ্বর হলে স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়া এবং নাক দিয়ে পড়া পানি মুছতে পরিষ্কার রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। জ্বর সাধারণত ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট হলে বড়দের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো হবে।
No comments