ফিরে দেখা ১/১১, ‘এগোয়নি এক বিন্দুও’ by কাজল ঘোষ
১/১১ কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন
পরিবর্তন এনে দিয়েছে? রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি বদলে দিয়েছে? ১/১১ নিয়ে নানা
আলোচনা ও সমালোচনা। দেশের বিশিষ্টজনদের মতে, ১/১১ পরবর্তীতে সার্বিক
পরিস্থিতি এক বিন্দুও এগোয়নি।
বরং
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামী দিনে ওয়ান ইলেভেনের চেয়েও ভয়াবহ বিপর্যয়
দেখছেন বিশিষ্টজনরা। বিশেষত নির্বাচন প্রশ্নে বড় দু’দলের মধ্যে যে ধরনের
অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে সঙ্কট বাড়বে। তাদের মতে যেখানে টেকসই গণতন্ত্র
নেই, রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা নেই সেখানে এক এগারোর মতো অশুভ তারিখের
বারবার ফিরে আসা অস্বাভাবিক নয়। ২০০৭ সালে রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তার মধ্যে
দৃশ্যপট বদলে যায় বাংলাদেশে। একতরফা নির্বাচন বাতিলে তৈরি হয় অচলাবস্থা। বড়
দু’দলের দ্বিমুখী অবস্থানে সংঘাত গড়ায় মাঠে। আসে ওয়ান ইলেভেন। এদিন শীর্ষ
সেনা কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ
থেকে পদত্যাগ করেন ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। পরে ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের
নেতৃত্বাধীন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। দেশে জরুরি অবস্থা জারি
করা হয়। গ্রেপ্তার হন দুই নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়াসহ প্রায়
১৫ হাজার রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নেরও চেষ্টা
হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ওয়ান ইলেভেন এখনও আলোচনায়। ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী
প্রেক্ষাপট কারও অজানা নয়। বাংলাদেশে আবারও নির্বাচন প্রশ্নে বিতর্ক চলছে।
রাজনীতির আকাশে নানা দুর্যোগের রেখা। কি হতে চলেছে? মানবজমিন-এর সঙ্গে
সাবেক উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামনিস্ট
খোলামেলা কথা বলেছেন-
সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, আগেও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতিতে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও ওদিকে যাবার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো অচলাবস্থা ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বলেই এক এগারো হয়েছিল উল্লেখ করে সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বর্তমানেও সে ঘটনা থেকে রাজনীতিকরা যদি শিক্ষা না নেন তবে পরিস্থিতি আবারও সেদিকে যেতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে যে ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার সমাধান না হলে দেশ কোন দিকে যাবে বলা যায় না? এখনও পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে গন্তব্য অনিশ্চয়তার দিকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, যে গুণগত পরিবর্তনের কথা অলোচনায় ছিল তা একবিন্দুও হয়নি। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে। ক্ষমতায় থাকার আকাঙক্ষার পাশাপাশি অসহিষ্ণুতাও বেড়েছে। দেশ চলছে অনেকটাই একনায়কতন্ত্রের আমেজে। গণতন্ত্র আছে; সংসদও আছে। তবে তা চলছে শুধুই প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিতে। গণতন্ত্রে মূল্যবোধের ভিত্তি একবিন্দুও এগোয়নি।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, রাজনীতির ধারায় উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন আসেনি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে দু’দল সমঝোতায় এলেই সমাধান সম্ভব। তা না হলে সংঘাত অনিবার্য।
প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের মতো দেশে যেখানে টেকসই গণতন্ত্র নেই, রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা নেই। সেখানে এক এগারোর মতো অশুভ তারিখের বারবার ফিরে আসা অস্বাভাবিক নয়। এক এগারো আসে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে; জনগণের কারণে নয়। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জনগনের মধ্যে এ ধরনের একটি শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে দু’পক্ষের কারণে। সুতরাং, আশা করি, এবার ওই জাতীয় কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। দেশের স্বার্থে দু’পক্ষই পরস্পরের কাছে আসবে।
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামনিস্ট শফিক রেহমান বলেন, ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায়ে ডিমেনশিয়া বা আংশিক স্মৃতিলোপ হয়েছে। না হলে, প্রধানমন্ত্রী কিভাবে বিরোধী দল এক এগারোর আনার ষড়যন্ত্র করছে এ ধরনের অভিযোগ করছেন। কারণ, তারা বলেছিলেন ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনকে তারা স্বাগত জানিয়েছিলেন। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করলেও এটা তাদের আন্দোলনের ফসল বলেছিলেন। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত আজ উন্মাদ বলছেন। উন্মাদতো তারাই। অথচ তারা তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিলোপ আমরা সাধারণত দেখি হিন্দি রোমান্টিক মুভিতে। তাতে সুদর্শন নায়ক উত্তম কুমার প্রায়ই ডিমেনশিয়া রোগে ভুগতেন। সূচিত্রা সেন তাকে সারিয়ে তুলতেন। এ সময় পেছনে বাজানো হতো হারানো সুর। পাঠকরাই বিবেচনা করবেন ক্ষমতাসীন দলে কে নায়ক আর কে নায়িকা?- আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে চাই এই মুভির মধুর পরিণতি।
আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রথম কথা, এক এগারোতে গঠিত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না। একটা বিশেষ উদ্দেশে এ সরকার গঠিত হয়েছিল। প্রথমে এটা ছিল মাইনাস টু। পরে তা পরিণত হয়েছিল মাইনাস ওয়ানে। দ্বিতীয় কথা, দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে আমাদের রাজনীতিকরা এ থেকে কোনও শিক্ষাই গ্রহণ করেননি। ওয়ান ইলেভেন হয়েছিল একতরফা নির্বাচন বন্ধে। আবারও একতরফা নির্বাচন আয়োজনের অপচেষ্টা চলছে। এক এগারোতে যে দুর্নীতির কথা এসেছিল তা এবার চারগুণ হয়েছে। সে সময়ের চেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে অন্তত কয়েক হাজার গুণ বেশি। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে। অগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে বাংলাদেশে আবারও এক এগারোর চেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় অনিবার্য। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এক-এগারো পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা নির্বাচনকালীন সময়েই স্পষ্ট হবে। বর্তমানে বড় দু’দলের মধ্যে যে ধরনের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ও মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে তাতে ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি আবারও হতে পারে এমন আলোচনা আছে। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি দুটি বৃহৎ দলের নেতৃত্বের ওপরই নির্ভর করছে। এ দু’দলের শীর্ষ পর্যায়ে যদি সঙ্কট নিরসনে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হয় তবে ওয়ান-ইলেভেনের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা দূর হবে। শেষ কথা, গণতন্ত্রের বিকল্প কিছুই নেই। গণতন্ত্রের বিকল্প আরও উন্নত গণতন্ত্র। বাংলাদেশের মানুষ সে ধরনের গণতন্ত্রই কামনা করে।
সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, আগেও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতিতে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও ওদিকে যাবার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো অচলাবস্থা ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বলেই এক এগারো হয়েছিল উল্লেখ করে সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বর্তমানেও সে ঘটনা থেকে রাজনীতিকরা যদি শিক্ষা না নেন তবে পরিস্থিতি আবারও সেদিকে যেতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে যে ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার সমাধান না হলে দেশ কোন দিকে যাবে বলা যায় না? এখনও পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে গন্তব্য অনিশ্চয়তার দিকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, যে গুণগত পরিবর্তনের কথা অলোচনায় ছিল তা একবিন্দুও হয়নি। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে। ক্ষমতায় থাকার আকাঙক্ষার পাশাপাশি অসহিষ্ণুতাও বেড়েছে। দেশ চলছে অনেকটাই একনায়কতন্ত্রের আমেজে। গণতন্ত্র আছে; সংসদও আছে। তবে তা চলছে শুধুই প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিতে। গণতন্ত্রে মূল্যবোধের ভিত্তি একবিন্দুও এগোয়নি।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, রাজনীতির ধারায় উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন আসেনি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে দু’দল সমঝোতায় এলেই সমাধান সম্ভব। তা না হলে সংঘাত অনিবার্য।
প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের মতো দেশে যেখানে টেকসই গণতন্ত্র নেই, রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা নেই। সেখানে এক এগারোর মতো অশুভ তারিখের বারবার ফিরে আসা অস্বাভাবিক নয়। এক এগারো আসে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার কারণে; জনগণের কারণে নয়। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জনগনের মধ্যে এ ধরনের একটি শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে দু’পক্ষের কারণে। সুতরাং, আশা করি, এবার ওই জাতীয় কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। দেশের স্বার্থে দু’পক্ষই পরস্পরের কাছে আসবে।
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামনিস্ট শফিক রেহমান বলেন, ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায়ে ডিমেনশিয়া বা আংশিক স্মৃতিলোপ হয়েছে। না হলে, প্রধানমন্ত্রী কিভাবে বিরোধী দল এক এগারোর আনার ষড়যন্ত্র করছে এ ধরনের অভিযোগ করছেন। কারণ, তারা বলেছিলেন ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনকে তারা স্বাগত জানিয়েছিলেন। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করলেও এটা তাদের আন্দোলনের ফসল বলেছিলেন। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত আজ উন্মাদ বলছেন। উন্মাদতো তারাই। অথচ তারা তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিলোপ আমরা সাধারণত দেখি হিন্দি রোমান্টিক মুভিতে। তাতে সুদর্শন নায়ক উত্তম কুমার প্রায়ই ডিমেনশিয়া রোগে ভুগতেন। সূচিত্রা সেন তাকে সারিয়ে তুলতেন। এ সময় পেছনে বাজানো হতো হারানো সুর। পাঠকরাই বিবেচনা করবেন ক্ষমতাসীন দলে কে নায়ক আর কে নায়িকা?- আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে চাই এই মুভির মধুর পরিণতি।
আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রথম কথা, এক এগারোতে গঠিত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না। একটা বিশেষ উদ্দেশে এ সরকার গঠিত হয়েছিল। প্রথমে এটা ছিল মাইনাস টু। পরে তা পরিণত হয়েছিল মাইনাস ওয়ানে। দ্বিতীয় কথা, দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে আমাদের রাজনীতিকরা এ থেকে কোনও শিক্ষাই গ্রহণ করেননি। ওয়ান ইলেভেন হয়েছিল একতরফা নির্বাচন বন্ধে। আবারও একতরফা নির্বাচন আয়োজনের অপচেষ্টা চলছে। এক এগারোতে যে দুর্নীতির কথা এসেছিল তা এবার চারগুণ হয়েছে। সে সময়ের চেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে অন্তত কয়েক হাজার গুণ বেশি। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে। অগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে বাংলাদেশে আবারও এক এগারোর চেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় অনিবার্য। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এক-এগারো পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা নির্বাচনকালীন সময়েই স্পষ্ট হবে। বর্তমানে বড় দু’দলের মধ্যে যে ধরনের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ও মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে তাতে ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি আবারও হতে পারে এমন আলোচনা আছে। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি দুটি বৃহৎ দলের নেতৃত্বের ওপরই নির্ভর করছে। এ দু’দলের শীর্ষ পর্যায়ে যদি সঙ্কট নিরসনে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হয় তবে ওয়ান-ইলেভেনের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা দূর হবে। শেষ কথা, গণতন্ত্রের বিকল্প কিছুই নেই। গণতন্ত্রের বিকল্প আরও উন্নত গণতন্ত্র। বাংলাদেশের মানুষ সে ধরনের গণতন্ত্রই কামনা করে।
No comments