সারাদেশে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম জোরদার- অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি ॥ রাজধানীতে অসহায় মানুষকে নেয়া হচ্ছে সরকারী শিশু পরিবার ও আশ্রয় কেন্দ্রে
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে সরকার থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সরকারের দুটি মন্ত্রণালয় থেকে নানা ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে চার লাখের বেশি কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ও নয়টি সিটি কর্পোরেশনে আরও প্রায় ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অপরদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ছাড়াও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশের শীতার্তদের পাশে নেমেছে।সূত্র মতে, এ বছর শীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম দফায় দুই লাখ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়। তবে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকায় দফায় দফায় শীতবস্ত্র বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে অর্থও বরাদ্দ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শীত মোকাবেলায় যোগ দিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সূত্র মতে ৩ জানুয়ারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯ সিটি কর্পোরেশনে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে প্রতিটিতে এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রামে এক লাখ ৯০ হাজার, রাজশাহীতে এক লাখ ৮৫ হাজার, খুলনায় এক লাখ ৮০ হাজার, বরিশালে এক লাখ ৭০ হাজার, রংপুরে এক লাখ ৮০ হাজার, নারায়ণগঞ্জে এক লাখ ৫০ হাজার ও কুমিল্লায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
৬ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে দেশের ৬৪ জেলায় ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বগুড়া জেলায় ১৪ লাখ ৪৯ হাজার, দিনাজপুরে ১৪ লাখ ২১ হাজার, রংপুরে ১৩ লাখ ২৯ হাজার, কুড়িগ্রামে ১৩ লাখ ৬ হাজার, কুষ্টিয়ায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার, পাবনায় ১০ লাখ ১২ হাজার, সিরাজগঞ্জে ১২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভা-ার থেকে ৩ জানুয়ারি উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় ১২ হাজার ৯শ’ পিস ও সমসংখ্যক চাদর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, নওগা, রাজশাহী ও রাজবাড়ী। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর ১৩ জেলায় ২৯ হাজার ৪শ’ পিস কম্বল ও ১০ হাজার পিস চাদর বিতরণ করা হয়েছে।
প্রথম দফায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ২ লাখ ২০ হাজার পিস কম্বল দেশের জেলা প্রশাসক অফিসে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৯ হাজার ২০০ পিস কম্বল দেশের উত্তরাঞ্চলের ২২টি জেলায় পাঠানো হয়। ২৪ ডিসেম্বর দেশের ১৪ জেলায় ৩০ হাজার ৯০০ পিস কম্বল পাঠানো হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক লাখ পিস কম্বল দান করে। সেই কম্বল গত ২৩-২৫ ডিসেম্বর সকল জেলায় বণ্টন করা হয়েছে। অপরদিকে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র ফুটপাত, রেলস্টেশনসহ খোলা স্থানে প্রচ- শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষদের উদ্ধার ও আশ্রয় দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সারাদেশে প্রচ- শীতে আশ্রয়হীন মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারী শিশুপরিবার ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এসব অসহায় মানুষদের আশ্রয় প্রদান করা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৪২ জন শীতার্তকে উদ্ধার করে মিরপুর সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাজধানীতে ৭টি টিম উদ্ধারকার্য পরিচালনা করে। রাজধানীর বাইরে অন্যান্য জেলায়ও বৃহস্পতিবার থেকে শীতার্তদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী উদ্ধারকাজ তদারকির জন্য সমাজসেবা অধিদফতরে একটি কন্ট্রোলরুমও খোলা হয়েছে। আশ্রয় নিতে আগ্রহীদের ০১৫৫২৪০৯৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা শহরকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করে পাঁচ জন উপসচিবের নেতৃত্বে পাঁচটি টিম সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা হতে শীতার্তদের উদ্ধার কাজ শুরু করে। উদ্ধারকৃতদের মাইক্রোবাসে করে সমাজসেবা অধিদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের খাওয়ানোর পর মিরপুর-১-এ অবস্থিত সরকারী আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা শহরের যেসব এলাকা হতে শীতার্তদের উদ্ধার করা হচ্ছে সেগুলো হলোÑ আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, ধানম-ি, নিউমার্কেট, আজিমপুর, বেইলি রোড, শান্তিনগর, কাকরাইল, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরা, কমলাপুর, বনানী, মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা, উত্তরা, তেজগাঁও, খিলগাঁও, গুলিস্তান, সদরঘাট, ওয়ারী, টিকাটুলি, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, কল্যাণপুর, শ্যামলী ও গাবতলী। পরবর্তীতে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
No comments