'ভবিষ্যতের সামরিক শাসন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া দরকার'- ৫ম সংশোধনী শুনানি চলাকালে সর্বোচ্চ আদালত
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে আপীল শুনানির সময় দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, ভবিষ্যতে দেশে সামরিক শাসন যেন না আসতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ সময় খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, আমরা কেউই সামরিক শাসন সমর্থন করি না। কিন্তু সামরিক শাসন যখন দেশে চলে আসে তখন কারও কিছু করার থাকে না।
পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও জামায়াতপন্থী তিন আইনজীবী আবেদনের ওপর মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো শুনানি শেষ হয়েছে। আজ আবার শুনানি শুরম্ন হবে। প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে ৬ সদস্যবিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি চলছে। শুনানির শুরম্নতেই আদালতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, 'আমরা কেউ সামরিক শাসন সমর্থনক করি না। কিন্তু চলে আসে। তখন কিছু করার থাকে না। তখন আদালত বলে, তাহলে আমরা কি সামরিক শাসন মেনে নেব? মওদুদ আহমেদ জবাবে বলেন, সামরিক শাসন তো বলে কয়ে আসে না। তখন আদালত বলে, ভবিষ্যতে দেশে যাতে সামরিক শাসন না আসতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার।শুনানি শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের ব্রিফিং প্রদান করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মনিরপেৰতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদকে মূলনীতি ধরা হলেও তার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। আর চতুর্থ সংশোধনী না হলে পঞ্চম সংশোধনীর প্রয়োজন হতো না। আর এটা না হলে দেশে বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার বলে কিছু থাকত না। জাতির গায়ে এখনও চতুর্থ সংশোধনীর কলঙ্ক লেগে থাকত। মওদুদ আহমেদ বলেন, ধর্মনিরপেৰতা, সমাজতন্ত্র বা জাতীয়তাবাদ এগুলো সংবিধানের মূলনীতি নয়। এগুলো একেকটি আদর্শ বা দর্শন। তাছাড়া সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর রায়ে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে কোনগুলো সংবিধানের মূলনীতি। তাই হাইকোর্ট নতুন করে আর কোন নীতি সংবিধানে যুক্ত করার নির্দেশ দিতে পারে না। এটা হাইকোর্টের এখতিয়ার বহির্ভূত। সংসদ পঞ্চম সংশোধনীর বৈধতা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এৰেত্রে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ার কোন এখতিয়ার আদালতের নেই। তখন আদালত বলে, সংসদ তখন অসৎ উদ্দেশ্যে পঞ্চম সংশোধনীর বৈধতা দিয়েছিল। জবাবে মওদুদ জানান, সংসদ কখনও অসৎ উদ্দেশ্যে কোন আইন করে না।
সামরিক সরকারকে বৈধতা দিয়ে ১৯৭৭ সালের ৭ নম্বর মার্শাল ল রেগুলেশন (এমএলআর) চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেৰিতে হাইকোর্ট ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেয়। সেদিনই রায় স্থগিতের আবেদন জানায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বর্তমান সরকার ওই আপীলের আবেদন প্রত্যাহার করেছে।
তবে এ প্রক্রিয়া চলাকালে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও তিন আইনজীবী আপীলের আবেদন করেন। হাইকোর্টের রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যনত্ম খোন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনী ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যনত্ম সরকার পরিবর্তন সংবিধান সম্মতভাবে হয়নি বলে হাইকোর্ট ঐ রায়ে অভিমত প্রদান করে।
No comments