বিশেষ মহল ফায়দা হাসিলে নানামুখী প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে- গুজব ছড়িয়ে পাহাড় অশানত্ম করার অপচেষ্টা!
জিতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি মতাসীন দলের অতিমাত্রার সহনশীলতায় পাহাড়ে শানত্মি বিনষ্টকারীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। একটি বিশেষ মহল বিভিন্ন সময়ে ইসু্যভিত্তিক গুজব ছড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শানত্মিপূর্ণ পরিস্থিতিকে অশানত্ম করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
গত ১৬ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ি জেলার বাঘাইহাট এলাকায় পাহাড়ী-বাঙালীদের ভূমি বিরোধের ইসু্যকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ের শানত্ম পরিস্থিতিকে আবারও অশানত্ম করতে বিভিন্ন রকমের প্রপাগা-া ও ভয়ানক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এর জের ধরে গত ২৪ জানুয়ারি জামায়াত সমর্থিত বাঙালী ছাত্র পরিষদের জেলা কাউন্সিল অনুষ্ঠানে আসা সাধারণ বাঙালীদের উত্তেজিত করতে বলা হয়_ দীঘিনালায় চার বাঙালী নিহত হয়েছে পাহাড়ীদের হাতে। এমন গুজবের পর থেকে জেলা শহরসহ বিভিন্ন বাঙালী অধু্যষিত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি অশানত্ম হয়ে ওঠে। বাঙালী ছাত্র পরিষদের জেলা কাউন্সিলের সমাবেশে বাঙালীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে একই গুজব ছড়ানো হয় জেলার বিভিন্ন বাঙালী গুচ্ছগ্রামে। এরপর থেকে আতঙ্কগ্রসত্ম হয়ে পড়ে জেলার পাহাড়ী বাঙালী উভয় সমপ্রদায়ের লোকজন।একের পর এক নানান গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ভূমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধপূর্ণ এলাকার আদিবাসীদের মাঝেও। গত ১৬ জানুয়ারি বাঘাইছড়ি উপজেলার গঙ্গারামমুখ এলাকার বালুঘাট পূর্বপাড়ায় একখ- জমি নিয়ে পাহাড়ী বাঙালী বিরোধের সূত্রপাত। এই বিরোধের সূত্র ধরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পাহাড়ী ও বাঙালীদের মাঝে বিভিন্ন রকমের গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। বাঙালীরা পাহাড়ী গ্রামে আক্রমণ করতে আসছে এমন গুজবে এ এলাকার আদিবাসীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। একইভাবে বাঙালীদের গ্রামে গুজব ছড়ানো হয় চার বাঙালীকে আদিবাসীরা হত্যা করেছে। এই খবরে উত্তেজিত হয়ে ওঠে বাঙালীরা। যার যার অবস্থানে নিজেদের রৰা করতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সংঘাতের প্রস্তুতি নেয় উভয় সমপ্রদায়ের মানুষ।
বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য স্বপনিকা চাকমা অভিযোগ করেন উত্তেজনার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাঙালীরা গঙ্গারাম ও বালুরঘাট এলাকায় অনত্মত ৪০টি আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদ করে নতুন বসতি স্থপন করেছে। এছাড়া গত ২৪ জানুয়ারি বাঙালী ছাত্র পরিষদের নেতাকমর্ীরা বাঘাইছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় এবং জিম্মি করে রাখে। এই সহিংসতায় অনত্মত বিশজন আহত হয়। পাশাপাশি সাধারণ আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নও অব্যাহত রেখেছে। স্বপনিকা চাকমা আরও অভিযোগ করে এসব ঘটনায় সেনাবাহিনীর সরাসরি হাত রয়েছে। অন্যথায় বাঙালীরা কখনও এমন দুঃসাহসী ঘৃণ্যকর্ম করতে পারে না। বাঘাইহাট বাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ সওদাগর জানান, রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় পাহাড়ীরা বসতি করতে পারলে বাঙালীরা কেন পাবে না। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এলথাংগা পাংখোয়া বলেন, পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে বিরোধপূর্ণ এলাকার স্কুলগুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল কম। একই পরিস্থিতি স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে। অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতায় পাহাড়ী বাঙালী কেউই একা চলছে না।
অপরদিকে বর্তমান সরকার মতা গ্রহণের ছয় মাসের মাথায় একটি বিশেষ মহল পার্বত্য চট্টগ্রামে অশানত্ম পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক ইসু্য তৈরি করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ষড়য়ন্ত্রের বলি হন দীঘিনালা ও পানছড়ির ছয় নিরীহ নিরপরাধ বাঙালী। সাধারণ বাঙালীদের উত্তেজিত করে সরকারের সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম ঠেকাতে পরিকল্পিত উপায়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ছয় বাঙালীকে। অথচ ঐ ঘটনার পর থেকে গত অক্টোবর নবেম্বর ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির বর্তমান পর্যনত্ম কোন নিরীহ বাঙালীকে প্রাণ হারাতে হয়নি। পাহাড়বাসী সচেতন মানুষ বলছেন মুক্তিযুদ্ধের বিপ শক্তি তাদের বিদেশী প্রভুদের সহযোগিতা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশানত্ম করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ুণ্ন্ন করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। এসব ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক হয়ে কাজ করে আদিবাসীদের বিভক্ত দুটি স্থানীয় রাজনৈতিক দলের একটি। পাহাড়ে অশানত্মি সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক ইসু্য তৈরি করতে দফায় দফায় ব্যর্থ হলেও থেমে নেই ষড়যন্ত্রকারী বিশেষ মহলটি। মতাসীন দলের উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রকারী এই বিশেষ মহল যে কোন সময় আরও ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য স্থানীয় ও সরকারের বিশেষ উদ্যোগের বিকল্প নেই।
No comments