ওয়ানডে সিরিজ- ওয়ানডেতেও টেস্টের ইংল্যান্ড
জেড ডার্নবাখের স্লোয়ারটা বুঝতে দেরি করে ফেললেন। লং অফের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সীমানা পার হলো না। তালুবন্দী মহেন্দ্র সিং ধোনি। ক্যাচটা ধরেই যেভাবে আনন্দে মেতে উঠলেন জো রুট, মাত্রই কিছুদিন আগে এই ভারতেই টেস্ট অভিষেকে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেও এতটা উল্লসিত দেখায়নি তাঁকে। রুট যে জানতেন, ধোনিকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ড নিভিয়ে দিল ভারতের আশার শেষ প্রদীপটিও।
ধোনি যতক্ষণ ছিলেন, ৩২৬ রানের বড় লক্ষ্যটিকেও মনে হচ্ছিল অর্জনযোগ্য। শেষ পর্যন্ত ৩১৬ রানে আটকে গিয়ে ভারত ম্যাচ হারল ৯ রানে। ১০ বছর আগে লর্ডসে ইংল্যান্ডের ঠিক ৩২৫ রান তাড়া করেই জিতেছিল ভারত। এবার আর পারল না।ইংল্যান্ড এবারের ভারত সফরে অনেককেই আড়াই-তিন দশক আগের স্মৃতিতে নিয়ে যাচ্ছে। কালও নিয়ে গেল। ওপেনিংয়ে ১৫৮ রানের জুটি গড়লেন কুক-বেল। ভাঙলেন ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটির ৩০ বছরের পুরোনো রেকর্ড। কুক আর বেলকে শুধু সেঞ্চুরিবঞ্চিতই করেনি, ভারতীয় বোলাররা একসময় ইংল্যান্ডকে তিন শর আশপাশে বেঁধে ফেলার হুমকিও দিচ্ছিলেন। রাজকোটের মরা উইকেটে যে রানটা যথেষ্ট হতো না। শেষ পর্যন্ত সামিত প্যাটেলের ২০ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটা তাই মহামূল্যবান বলে প্রমাণিত। দ্বিতীয় পাওয়ার প্লের পাঁচ ওভারে পিটারসেন-মরগানের তোলা ৪৪ রানেরও বড় অবদান আছে ইংল্যান্ডের রানের গতি বাড়িয়ে নেওয়ার। তবে প্যাটেল শেষ দিকে ঝড় তুলেছিলেন বলেই শেষ চার ওভারে ইংল্যান্ড পেয়েছে ৫৯ রান।
নিজেদের মাটিতে ভারতের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা ছিল ৩২৫ রানের। কাল দরকার ছিল মাত্র এক রান বেশি। ভারতে অবশ্য সব দল মিলিয়েই সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটি ৩২৮ রানের। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেই অবিশ্বাস্য অঘটনের জন্ম দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ইংল্যান্ডকে কালও এমন একটা ধাক্কা দেওয়ার জন্য দরকার ছিল ভালো একটা ওপেনিং জুটি এবং টপ-মিডল অর্ডারের দায়িত্ব নেওয়া। কুক-বেলের জবাব হিসেবে ৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটিও পেয়েছিল ভারত। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই ফিফটি বা এর আশপাশে স্কোর করেছেন। কিন্তু কোনো একজনের টেনে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল শেষ পর্যন্ত। সেটাই হয়নি।
যুবরাজ চেষ্টা করেছিলেন। চার বছর আগে রাজকোটেই (অবশ্য অন্য মাঠে) যুবরাজের ৭৮ বলের ১৩৮ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিরাট এক জয় পেয়েছিল ভারত। কিন্তু কালকের ৬১ রানের ইনিংসটি ছিল প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। ধোনি অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন। চার-চারটি ছক্কায় ঝড়ের পূর্বাভাসও ছিল। ৩৪ বলে ৫৫ লাগে, হাতে ৫ উইকেট—ধোনির জন্য আদর্শ এক মঞ্চ। কিন্তু ডার্নবাখকে লং অফের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলতে পারলেন না! শেষ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ২৭, আর দরকার ছিল ধোনিকেও!
থিতু হয়েও ভারতের টপ-মিডল অর্ডারের কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি আসলে জেমস ট্রেডওয়েলের কারণে। ভারতের প্রথম পাঁচজনের চারজনই তাঁর শিকার। ৬৪১ রান ওঠা ব্যাটসম্যানদের এক ম্যাচেও তাই ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে এই অফ স্পিনারই ম্যাচসেরা।
টেস্টের পর এবার ভারতে নিজেদের ওয়ানডে রেকর্ডও মনে হয় নতুন করে লেখার পণ করেছে ইংল্যান্ড। ভারতে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচের ১২টিতে (অন্যটি টাই) হারার পর এই প্রথম জয়ের মুখ দেখল তারা! ২৯ বছর পর ভারতে ওয়ানডে সিরিজ জেতার মিশনটাও শুরু হলো দারুণভাবে। ওয়েবসাইট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২৫/৪ (কুক ৭৫, বেল ৮৫, পিটারসেন ৪৪, মরগান ৪১, কিসওয়েটার ২৪*, প্যাটেল ৪৪*; ভুবনেশ্বর ০/৫২, ইশান্ত ০/৮৬, দিন্দা ২/৫৩, অশ্বিন ০/৬১, জাদেজা ০/৪৬, রায়না ১/১৮, কোহলি ০/৯)। ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৬/৯ (অজিঙ্কা ৪৭, গম্ভীর ৫২, কোহলি ১৫, যুবরাজ ৬১, রায়না ৫০, ধোনি ৩২, জাদেজা ৭, অশ্বিন ১৩, ভুবনেশ্বর ২০*, দিন্দা ৩, ইশান্ত ৭*; ফিন ১/৬৩, ডার্নবাখ ২/৬৯, ব্রেসনান ২/৬৭, ট্রেডওয়েল ৪/৪৪, রুট ০/৫১, প্যাটেল ০/২১)।
ফল: ইংল্যান্ড ৯ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জেমস ট্রেডওয়েল
No comments