ঢাবিতে ছাত্রদলকে পিটিয়ে তাড়াল ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির একটি দল গতকাল সোমবার উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে এই হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।


ছাত্রদল এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ীদের দ্রুত বিচার এবং উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের পদত্যাগ দাবি করেছে।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। হামলায় ছাত্রদলের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন- আব্বাস আলী, সোহাগ ও রাশেদ। আব্বাস ও সোহাগ স্যার সলিমুল্লাহ হল এবং রাশেদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র। তবে ছাত্রদল দাবি করেছে, হামলায় তাদের ছয় কর্মী আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা জানান, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পাহারা ছিল আগে থেকেই। ছাত্রদলকে ঠেকাতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতা-কর্মীরা গতকাল প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। হামলার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রদলকর্মীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছেন। ঘটনার পরও বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মহড়া দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মহিদুল হাসান হিরু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দুপুর ২টায় ভিসির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের; কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত নেতা-কর্মীদের মারধর শুরু করে ছাত্রলীগ।' তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'আমরা ঢুকতেই পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছাকাছি থাকতেই ছাত্রলীগ তাণ্ডব শুরু করে দেয়। ওদের মারধরে ছাত্রদলের ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন।'
ছাত্রদলকর্মী রাশেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'কেন্দ্রীয় নেতাদের আসার খবর শুনে আমরা তাঁদের স্বাগত জানাতে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকি। এ সময় ছাত্রলীগকর্মীরা অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমি দৌড়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে আসি।'
তবে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ দাবি করেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী হামলা চালায়নি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'শুনেছি ছাত্রদলের কমিটিতে নিয়মিত যারা স্থান পায়নি, তারাই এই হামলা চালিয়েছে।' এ বিষয়ে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ছাত্রলীগের মারধরের কারণে বিকেল ৪টার দিকে পালিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন সাফায়েত, আশিক, মাহফুজ ও পলাশসহ ছয় ছাত্রদলকর্মী। পরে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়িতে করে ক্যাম্পাসের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় প্রক্টর ড. আমজাদ আলী ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষক প্রতিনিধি ড. সদরুল আমিনসহ আরো কয়েকজন শিক্ষককে দেখা যায়।
ক্যাম্পাসে আতঙ্ক : ছাত্রলীগের এই হামলা ও মারধরের ঘটনায় গতকাল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেককে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়। আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার পথে এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে বলেন, 'এদের কামড়া-কামড়িতে ওরা খুব কম মরে। মরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই আতঙ্কের ক্যাম্পাসে থাকতে চাই না।' এসবের প্রতিবাদ করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'খাইয়াদাইয়া আর কাজ নাই। এইসব ফালতু বিষয়ের প্রতিবাদ করব? এরা ভাগাভাগি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ নেয়।'
অছাত্র, বিবাহিত ও চল্লিশোর্ধ্বদের দিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল কমিটির নেতাদের। ওইদিন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশ থাকায় দেখা করার সময় বাতিল করেন উপাচার্য।
উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে একটি তালিকা পাঠায় ছাত্রদল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের দাবি জানায়।
প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন : ছাত্রলীগের হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে ছাত্রদল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় এই হামলার নিন্দা ও দায়ীদের বিচারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে এলে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সময় ছাত্রদলের বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গুরুতর আহত হন। এরও আগে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রদলের আধিপত্যের কারণে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.