ব্যাংক পরিচালনায় দ্বৈতশাসন নয়- অর্থমন্ত্রীর বোধোদয়

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর আগের বক্তব্য প্রত্যাহার করে সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের অর্থ জালিয়াতিকে ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি?


অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন অভিযুক্ত হলমার্কের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। প্রশ্ন হলো, কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার এত দিন পরও মামলাটি হলো না কেন? মামলা করার দায়িত্ব সোনালী ব্যাংকের। তারা কী করছে? এভাবে ঢিমেতালে ব্যবস্থা নিলে আত্মসাৎ হওয়া অর্থ যেমন আদায় করা যাবে না, অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাবেন।
গত রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এ কথাটি শুরুতে বললে তিনি এত সমালোচিত হতেন না। তিনি বলেছেন, অপরাধীরা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ফন্দিফিকির করছেন। সত্যি সত্যি তাঁরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য কঠোর নজরদারি থাকা প্রয়োজন। মন্ত্রীর ধারণা, হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের বাইরেরও অনেকে জড়িত আছেন। এই অনেককে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তো সরকারেরই।
অভিযুক্ত কোম্পানি হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ দাবি করেছেন, যে অর্থ তিনি সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, তার ২০ গুণ সম্পদ তাঁর আছে। সেটাই যদি সত্য হয় তা হলে প্রশ্ন উঠবে, সেই সম্পদের মালিক তিনি কীভাবে হলেন এবং আয়ের বিপরীতে সরকারকে কত কোটি টাকা আয়কর দিয়েছেন? পত্রিকান্তরের খবর হলো, হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে ৩৫ লাখ টাকা আয়কর দিলেও তাঁর কোম্পানি কোনোই আয়কর দেয়নি।
হলমার্কের অর্থ কেলেঙ্কারির হোতাদের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মূল সমস্যাটি এড়িয়ে গেছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যও অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেছেন, সব সরকারের আমলেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। আগের সরকারগুলো খারাপ কাজ করে থাকলে বর্তমান সরকারকেও তা-ই করতে হবে?
এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট দাবি, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে বাদ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোয় রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ করা চলবে না। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে ব্যাংকিং ও আর্থিত খাত সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং একাডেমিক জ্ঞান আছে, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে। গত রোববার প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরাও অনুরূপ অভিমত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়াধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে দ্বৈতশাসন চলতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.