চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা-বাঁদরামি বটে!

কথায় বলে বানরের বাঁদরামি। এ সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই কিংবা কম তারা বাঁদর নাচ নেচে তবেই ছাড়া পান। শনিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এক দর্শনার্থীর ক্যামেরা বানরের মুঠোয় চলে যাওয়ার ঘটনাটি অনেকটা সে রকমই। দর্শনার্থীর সাধের ক্যামেরাটি বানরের বানরসুলভ পরীক্ষার বলি হয়েছে।


এক সময় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও বানরের আনাগোনা ছিল। তখন এদের বাঁদরামি থেকে শুরু করে হাঙ্গামা-হুজ্জত বাধানোর ঘটনা এক কান দুই কান হয়ে রগরগে কাহিনীর মর্যাদা নিয়ে বৈঠকি আড্ডার হাস্যরসের রসদ জোগাত। গ্রামে পুকুর বা শানবাঁধানো দিঘির পাড়ে শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি বা গামছা রেখে স্নান সারতে যাওয়ার পর কারও কারও শুষ্ক বসন বাঁদরমুখো বানরের হাতে পড়ে তাদের মুখ ভেংচির উপলক্ষ হওয়ার মতো ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটত। সে জন্য মানুষের সতর্ক থাকার প্রয়োজন পড়ত। কিন্তু এখনকার মানুষের মধ্যে এ জাতীয় উৎকট দুষ্টামি প্রকৃতির জীব সম্পর্কে আগাম সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন তেমন পড়ে না। কারণ এখন বড় বা ছোট শহরে বানর প্রায় দেখাই যায় না। তাই হয়তো চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী হিসেবে কেউ কেউ নিজের অজান্তেই বানরের সানি্নধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেই শেষ পর্যন্ত বানর নাচ নাচেন। বানর-স্বভাব আর মানব-স্বভাব সমার্থক নয়। যেসব মানুষের মধ্যে মানবের স্বাভাবিক স্বভাব-বিরুদ্ধ বানর-স্বভাব কখনও কখনও উৎকটভাবে নজরে আসে সেসব মানুষের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট আচরণকে আমরা বানর শব্দের অন্তর্গত বিশেষণগুলো দিয়ে বিশেষায়িত করার চেষ্টা করি। এসব বিশেষণ নিশ্চয়ই সদর্থে ব্যবহৃত হয় না। বানরসুলভ আচরণ ভব্যতার সীমার মধ্যে পড়ে না। তবে বানরের বাঁদরামি অথবা বুদ্ধির কাছে যারা হার মানেন তারা কি ছেলে-বুড়ো সবার হাস্যরসের পাত্র হয়ে যান না! তাই যে দর্শনার্থী বেচারা বানরের বাঁদরামির কাছে হার মেনে নিজের হাতের ক্যামেরা খুইয়েছেন, তাকে তো হাস্যরসের উপলক্ষ হতেই হয়। চিড়িয়াখানায় যেমন, তেমনি সমাজ-সংসারেও বানর স্বভাবের লোকেদের চিনতে হয়। না হয় পদে পদে ঝক্কি-ঝামেলা পথচলতি পা আটকায়।

No comments

Powered by Blogger.