সাফল্যে বন্ধুর পাশে by শান্তা তাওহিদা

‘সাফল্য’ নামক সোনার হরিণের পেছনে জীবনের এ নিরন্তর পথচলা। বহু সাধনার পর যদি কখনো মেলে সঠিক পথের খোঁজ, তবেই যেন জীবনের তৃপ্তি, আনন্দ ও খুশি। তবে এই খুশি শুধু একার নয়, সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য। খুশির এ ভাগাভাগিতে বন্ধু, সহকর্মী কিংবা একজন কাছের মানুষ হিসেবে সফল মানুষটির প্রতি আমাদের দায়িত্বও কিন্তু কম নয়। এ সুযোগে হয়ে যাবে বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও।


খুশির উপলক্ষটি হতে পারে আমাদের কোনো বন্ধুর শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো ফলের, বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগের, বিসিএসে প্রথম সারিতে নাম থাকার, বড় কোনো চাকরি লাভের, চাকরিতে পদমর্যাদা বৃদ্ধির, প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো পদকপ্রাপ্তির—আরও কত কী। উপলক্ষ যা-ই হোক, এর উদ্যাপনটা হওয়া চাই বিশাল। কারণ, জীবনটা শুধু যাপনের জন্য নয়, অনেক বেশি উদ্যাপনেরও বটে। আর আকাশ যেমন খোলা, আনন্দও তেমন বাধাহীন। এভাবেই বলেন ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্কু চৌধুরী।
গ্রে ঢাকার মহাব্যবস্থাপক এম এ মারুফ বলেন, ‘আমাদের সবার জীবনেই বন্ধুরা একটা বড় জায়গা দখল করে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন, চাকরিজীবন—সব সময়ে বন্ধুরাই হচ্ছে পরিবারের মতো। আর তাই বন্ধুর ছোট-বড় সব সাফল্যেরই উদ্যাপন করা জরুরি। এতে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও জোরালো হয়। তবে বন্ধুর জন্য যা-ই করা হোক না কেন, তা হতে হবে মন থেকে। সেটা খুশির খবর পাওয়া মাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণ আলিঙ্গনে সীমাবদ্ধ থাকলেও ক্ষতি নেই। আবার হতে পারে সেটি একটি লাল গোলাপেও।’
‘প্রতিদিনের কাজের তালিকার বাইরের যেকোনো কিছুই তো বন্ধুর জন্য চমৎকার! তাই না? বন্ধুর হাসিমাখা মুখ আপনি শত কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন না,’ বলেন আক্কু চৌধুরী।
‘বন্ধুকে একটু আয়োজন করেও চমক দিতে পারেন। তবে আয়োজনটা হতে হবে শতভাগ গোপন রেখে। আগেভাগে যাতে সে না জানে। কিছু রঙিন বেলুন, কেক আর একটা হাতে লেখা ব্যানার দিয়েও সম্ভব হতে পারে সেটি। যে প্রতিষ্ঠান থেকে বন্ধুটির এ সাফল্য লাভ, আয়োজনটা সেখানে হলেও ভালো হয়। এতে সবাই এ আয়োজনের অংশ হতে পারেন। বন্ধুর প্রতি শুভকামনা-নির্দেশক হাতে লেখা কিছু চিরকুটও দিয়ে দিতে পারেন।’ দীর্ঘদিন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কাজের অভিজ্ঞতা থেকে এভাবেই বলেন নেদা সাকিবা।
বন্ধু কিংবা সহকর্মীর খুশির ভাগাভাগির আয়োজনে বয়সভেদে কিছুটা হেরফেরের কথা বলেন এম এ মারুফ। বয়সটা যদি হয় ৪০ ছুঁই ছুঁই, তাহলে ভাবুন একটু অন্যভাবে। তারুণ্যের পুরোনো দিনগুলো আবার ফিরে পেতে কার না ভালো লাগবে। সেটা হোক না অল্প একটু সময়ের জন্যই। এ বয়সীরা যেটি করতে পারেন—সব বন্ধুকে দাওয়াত করে একটি সুন্দর জায়গায় গিয়ে সফল বন্ধুটিকে হঠাৎ নিয়ে আসতে পারেন। বন্ধুর সফলতা নিয়ে শুভকামনার বুলি ভরা একটা গানও হয়ে যেতে পারে সে সময়। যে স্থানে বন্ধুরা হয়তো আগে খুব যেতেন, আড্ডা দিতেন, এখন নানা ব্যস্ততায় আর যাওয়া হয় না—এমন কোনো স্থানে আবার মিলতে পারেন সবাই। বন্ধুকে না জানিয়ে খবর দেওয়া যায় তাঁর অন্য সব পুরোনো বন্ধুকে। পুরোনো স্মৃতিতে হারিয়ে যাওয়ার মতো সুখক্ষণটিই হবে তখনকার সবচেয়ে বড় উপহার।
যাঁরা চাকরিজীবনে কোনো সহকর্মীর খুশির খবরটাকে উদ্যাপন করতে চান, তাঁরা সবাই মিলে বন্ধুর জন্য একটি সুন্দর উপহার নিয়ে তাঁর টেবিলে একসঙ্গে উপস্থিত হতে পারেন। তাঁকে নিয়ে দুপুর কিংবা রাতে তাঁর প্রিয় কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে যেতে পারেন। কোনো বন্ধু কিংবা সহকর্মী দীর্ঘদিনের জন্য দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন—এমন হলে যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশে গিয়ে ব্যবহারোপযোগী কোনো উপহার দিতে পারেন। বন্ধুদের একখানি ছবিও বাঁধাই করে দিতে পারেন সুন্দর একটি ফ্রেমে।
আয়োজনটা যেমনই হোক, আপনার বন্ধুর জন্য আপনি মন থেকে যা-ই করবেন, তা-ই হবে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। তাঁর সাফল্যের পথে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।

No comments

Powered by Blogger.