মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি-প্রতারণা বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশের জনশক্তির একটি বড় বাজার মালয়েশিয়া। এই বাজার থেকে দীর্ঘদিন ধরেই অতি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় আয় এসে থাকে। প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক সেখানে কর্মরত রয়েছে। সেখানে আরো জনশক্তি পাঠানোর সুযোগও রয়েছে। কিন্তু সে সুযোগ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দেশ গ্রহণ করতে পারছে না।


অধিকন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা হচ্ছে নানাভাবে প্রতারিত। সম্প্রতি সে দেশের সরকার অবৈধভাবে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের অনুমতি দেওয়ার পরও সে দেশে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। তবে বাংলাদেশ সরকারের পুনরায় চেষ্টার ফলে মালয়েশিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে শ্রমিক রপ্তানির চুক্তি হলে বিমান ভাড়া ব্যতীত আনুষঙ্গিক খরচ দাঁড়াবে ৩৫ হাজার টাকা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এভাবেই আয়োজন করতে চাচ্ছে। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা মনে করছে, সরকার তাদের ব্যবসায় হাত দিতে চাচ্ছে। এতে বায়রার ১২২ সদস্য পথে বসবে।
সর্বাগ্রে এই বিষয়টির একটি যথাযথ মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রবাসে গমনেচ্ছুদের অর্থ সাশ্রয়ের যে চিন্তা করছে সেটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। অন্যদিকে এজেন্সিগুলো জনশক্তি রপ্তানিতে বাণিজ্য করে বটে, কিন্তু তাদের জনশক্তি রপ্তানিতে ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং বায়রাকে বাদ দিয়ে নয়, তাদের একটি যৌক্তিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে এনেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো প্রয়োজন। সেটাই অধিক গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে অভিযোগ আছে; সরকার-নির্ধারিত ফি অর্থাৎ ৮৪ হাজার টাকার পরিবর্তে বাস্তবে তারা কয়েক গুণ বেশি অর্থ আদায় করছে। ভিসার সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি লোক পাঠিয়ে সেখানে শ্রমিকদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এসব অভিযোগ থেকে বের হতে হবে। এ ছাড়া বিমান ভাড়া বাদে যেখানে ৪০ হাজার টাকারও কম খরচে একজন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন, সেখানে দালালচক্র ও এজেন্সিগুলো কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ধরনের ব্যয় যাতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে সাধারণ মানুষের স্বার্থ জড়িত। বন্ধ হয়ে যাওয়া বাজারটিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারি উদ্যোগকে সমর্থন করতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ভূমিকাকেও অস্বীকার করা যাবে না। চলমান বাজারে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানির কাজে তাদের সম্পৃক্ত রেখেও স্বল্প অর্থে শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ করছে। সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে কিভাবে অনেক কম খরচে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে সেটা অনুুসরণ করা যেতে পারে। আজ ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানির প্রক্রিয়াটি যে করেই হোক নির্ঝঞ্ঝাট ও সহজতর করে তোলা হবে।

No comments

Powered by Blogger.