ফের বিনামূল্যে সাবমেরিন... by জাকারিয়া স্বপন
বাংলাদেশের জন্য বিনামূল্যে আরেকটি সাবমেরিন কেবলপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নব্বই দশকে এমন প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই বোকামির গল্প আমরা আজও করি। প্রায় একই রকম সুযোগ তৈরি হয়েছে এবারও এবং সেটাও হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমান বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল আমি তো মনে করি, পদ্মা সেতুর চেয়েও জরুরি। বর্তমান বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগসূত্র একটি মাত্র সাবমেরিন কেবল। এটা দিয়ে আমাদের ভয়েস ও ডাটা (ইন্টারনেট) দুটোই চলে। এটির কোথাও ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ প্রায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়। আমাদের সামান্য স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইড্থ ব্যাকআপ রয়েছে। তা দিয়ে তো পুরো দেশ চলে না! কিছুদিন আগে বর্তমান কেবলটি সিঙ্গাপুরের কাছে নষ্ট হলো। পুরো দেশ প্রায় দু'মাসের মতো ভুগল। আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে বিপুল। আমাদের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল লাগবে_ এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন। কীভাবে সম্ভব_ সেটা নিয়ে নানা মত। এত মতের মাঝ থেকেও আমাদের একটি বেছে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পরিকল্পনা করতে করতেই বছরের পর বছর পার করে দেব কেন!
সরকার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ব্যক্তি খাতের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু সেখানে এমন সব শর্ত ছিল, যা দেখে কোনো টেলিকম অপারেটর বিনিয়োগ করতে চায়নি।
এখন যে সুযোগটি তৈরি হয়েছে, তা কনসোর্টিয়াম নয়; একটি প্রাইভেট কোম্পানি এশিয়াতে বিশাল এলাকাজুড়ে সাবমেরিন কেবল বসাতে যাচ্ছে। আমাদের বর্তমানে সাবমেরিন কেবল হয়েছে ১৪টি দেশ মিলে একটি কনসোর্টিয়াম (ঝঊঅ-গঊ-ডঊ-৪) করে এবং একই রকম আরেকটি কনসোর্টিয়ামের (ঝঊঅ-গঊ-ডঊ-৫) কাজ শুরু হয়েছে, যেখান থেকে ফাইবার অপটিক কেবল নিতে বাংলাদেশের ৫০-৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এর পাশাপাশি সারা বিশ্বেই ব্যক্তি খাতে সাগরের তলদেশ দিয়ে ফাইবার বসিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা তো বটেই; এশিয়াতেও অনেক প্রাইভেট অপারেটর রয়েছে। তেমনি একটি নতুন উদ্যোগ 'ট্যাগার কেবল'। একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান উদ্যোক্তা এর আগে ফ্ল্যাগ টেলিকম নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন, যার মাধ্যমে আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৮ হাজার কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল বসানো হয়। পরে ভারতের রিলায়েন্স ওই কোম্পানিটি কিনে নেয়। সেই একই উদ্যোক্তা এখন মাঠে নেমেছেন সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, ইউএই, ওমান, ইয়েমেন, কেনিয়া, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, মিসর, মাল্টা, তুরস্ক, লেবানন, ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যুক্ত করে একটি নতুন সাবমেরিন কেবল বসানোর।
ট্যাগার কেবল এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছে। এর ভিত্তিতে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক/প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে কেবল বসাবে। কোনো দেশকেই কেবল বসানোর জন্য কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না। ট্যাগার কেবল বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল বসিয়ে যাবে। আর সেই ব্যান্ডউইড্থ ব্যবহার করে ১৫ বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হবে। কর্ণধার সুনীল ট্যাগার বলছেন, এর খরচ অন্য যে কোনো সাবমেরিন কেবলের চেয়ে অনেক সস্তা হবে।
ট্যাগার কেবল আগামী ১২-১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ দুবাইতে আগ্রহী অপারেটরদের চূড়ান্ত কথা বলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানে জাপান, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কেবল অপারেটররা উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ থেকে এখনও কেউ নিশ্চিত করেননি। সুনীল ট্যাগারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যদি বাংলাদেশ থেকে কেউ ওখানে না যান, তাহলে বাংলাদেশের ল্যান্ডিং স্টেশন বাদ যাবে।
বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি সুনীলের সঙ্গে কথা বলি। তিনি জানান, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো অপারেটর কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান, যারা ভবিষ্যতে লাইসেন্স পেতে পারে, তাদের কেউ ওখানে গিয়ে যদি বাংলাদেশের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে নতুন ম্যাপে বাংলাদেশের অবস্থানটি রাখা হবে।
সাবমেরিন কেবল বসানো দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। এখানে রাতারাতি বলে কিছু নেই। বসানোর প্রক্রিয়াটি যেমন দীর্ঘ, এখানে ব্যবসার ধরনটিও দীর্ঘ। তবে অনেক বেশি সম্মানজনক। বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের ব্র্যান্ডে কাজ করছে_ এটা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে_ ১. সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে (বিটিআরসি, মন্ত্রণালয় কিংবা বিএসসিসিএল) দুবাইতে এ সম্মেলনে পাঠিয়ে বাংলাদেশের নামটি অন্তর্ভুক্ত করা। ২. ব্যক্তিমালিকানায় যারা দীর্ঘমেয়াদি টেলিকম ব্যবসায় নিজেদের যুক্ত করতে চান, তাদের প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে নিজেদের আগ্রহের নামটি ঢুকিয়ে রাখা।
জাকারিয়া স্বপন :তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক
সরকার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ব্যক্তি খাতের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু সেখানে এমন সব শর্ত ছিল, যা দেখে কোনো টেলিকম অপারেটর বিনিয়োগ করতে চায়নি।
এখন যে সুযোগটি তৈরি হয়েছে, তা কনসোর্টিয়াম নয়; একটি প্রাইভেট কোম্পানি এশিয়াতে বিশাল এলাকাজুড়ে সাবমেরিন কেবল বসাতে যাচ্ছে। আমাদের বর্তমানে সাবমেরিন কেবল হয়েছে ১৪টি দেশ মিলে একটি কনসোর্টিয়াম (ঝঊঅ-গঊ-ডঊ-৪) করে এবং একই রকম আরেকটি কনসোর্টিয়ামের (ঝঊঅ-গঊ-ডঊ-৫) কাজ শুরু হয়েছে, যেখান থেকে ফাইবার অপটিক কেবল নিতে বাংলাদেশের ৫০-৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এর পাশাপাশি সারা বিশ্বেই ব্যক্তি খাতে সাগরের তলদেশ দিয়ে ফাইবার বসিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা তো বটেই; এশিয়াতেও অনেক প্রাইভেট অপারেটর রয়েছে। তেমনি একটি নতুন উদ্যোগ 'ট্যাগার কেবল'। একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান উদ্যোক্তা এর আগে ফ্ল্যাগ টেলিকম নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন, যার মাধ্যমে আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৮ হাজার কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল বসানো হয়। পরে ভারতের রিলায়েন্স ওই কোম্পানিটি কিনে নেয়। সেই একই উদ্যোক্তা এখন মাঠে নেমেছেন সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, ইউএই, ওমান, ইয়েমেন, কেনিয়া, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, মিসর, মাল্টা, তুরস্ক, লেবানন, ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যুক্ত করে একটি নতুন সাবমেরিন কেবল বসানোর।
ট্যাগার কেবল এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছে। এর ভিত্তিতে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক/প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে কেবল বসাবে। কোনো দেশকেই কেবল বসানোর জন্য কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না। ট্যাগার কেবল বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল বসিয়ে যাবে। আর সেই ব্যান্ডউইড্থ ব্যবহার করে ১৫ বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হবে। কর্ণধার সুনীল ট্যাগার বলছেন, এর খরচ অন্য যে কোনো সাবমেরিন কেবলের চেয়ে অনেক সস্তা হবে।
ট্যাগার কেবল আগামী ১২-১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ দুবাইতে আগ্রহী অপারেটরদের চূড়ান্ত কথা বলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানে জাপান, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কেবল অপারেটররা উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ থেকে এখনও কেউ নিশ্চিত করেননি। সুনীল ট্যাগারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যদি বাংলাদেশ থেকে কেউ ওখানে না যান, তাহলে বাংলাদেশের ল্যান্ডিং স্টেশন বাদ যাবে।
বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি সুনীলের সঙ্গে কথা বলি। তিনি জানান, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো অপারেটর কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান, যারা ভবিষ্যতে লাইসেন্স পেতে পারে, তাদের কেউ ওখানে গিয়ে যদি বাংলাদেশের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে নতুন ম্যাপে বাংলাদেশের অবস্থানটি রাখা হবে।
সাবমেরিন কেবল বসানো দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। এখানে রাতারাতি বলে কিছু নেই। বসানোর প্রক্রিয়াটি যেমন দীর্ঘ, এখানে ব্যবসার ধরনটিও দীর্ঘ। তবে অনেক বেশি সম্মানজনক। বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের ব্র্যান্ডে কাজ করছে_ এটা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে_ ১. সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে (বিটিআরসি, মন্ত্রণালয় কিংবা বিএসসিসিএল) দুবাইতে এ সম্মেলনে পাঠিয়ে বাংলাদেশের নামটি অন্তর্ভুক্ত করা। ২. ব্যক্তিমালিকানায় যারা দীর্ঘমেয়াদি টেলিকম ব্যবসায় নিজেদের যুক্ত করতে চান, তাদের প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে নিজেদের আগ্রহের নামটি ঢুকিয়ে রাখা।
জাকারিয়া স্বপন :তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক
No comments