ভোলায় ছাত্র-পুলিশ দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ৫০- ফ্টুবল খেলায় হেরে গিয়ে স্কুলছাত্রদের হামলা ভাংচুর

ভোলায় আন্তঃস্কুল ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে রবিবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে ভোলা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এক পর্যায়ে পুলিশ স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্র শিক্ষকদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে। এ সময় একটি বাস ভাংচুর করা হয়।


পুলিশ, শিক্ষক ও ছাত্রসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এ সময় এক শিক্ষকসহ ৪ জনকে আটক করা হয়। বর্তমানে স্কুল ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, ভোলা জেলা পর্যায়ে আন্তঃস্কুল ফুটবল খেলায় রবিবার বিকেলে ভোলা গজনবী স্টেডিয়ামে লালমোহন ডাওরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে ভোলা সরকারি স্কুলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই খেলায় ২-১ গোলে পরাজিত হয়ে ভোলা সরকারী স্কুলের ছাত্ররা মাঠ থেকে বের হয়ে ভোলা থানার সামনে অবস্থানরত লালমোহন ডাওরি স্কুলের ছাত্রদের বাসে হামলা করে ১০ জনকে আহত করে। এ সময় ছাত্ররা ডাওরি স্কুলের ছাত্রদের পরিবহনের বাস ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে ছাত্ররা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে ভোলা সরকারী স্কুলের ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক আল আমিনসহ চার ছাত্রকে পিটিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত ছাত্ররা সংঘদ্ধ হয়ে ফের গাড়ি ভাংচুর ও পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।
এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের ধাওয়া করলে তারা ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিকেল সাড়ে ৫টায় স্কুলের প্রধান গেটে তৃতীয় দফা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সময় স্কুলের শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে পুলিশের এডিশনাল এসপি মাহফুজুর রহমান ও ভোলা থানার ওসি সোহরাব আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ স্কুলের ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষক ও ছাত্রদের নির্মমভাবে পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। এ সময় ছাত্ররা স্কুলের মূল ভবনের দোতলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে পুলিশ কলাপসিবল গেটের বাইরে থেকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছাত্রদের আহত করে। এ সময় ছাত্রদের আর্তচিৎকারে ক্যাম্পাসে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে সাংবাদিকরা গেলে পুলিশ শান্ত হয়। শেষে ছাত্ররা মাথার ওপর হাত তুলে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যায়।
তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র তাইয়াত জানায়, সে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষকের বাসায় যাওয়ার পথে সংঘর্ষের শিকার হয়। পুলিশ তাকেও লাঠি দিয়ে মারধর করে। স্কুলের শিক্ষক আল আমিন থানায় আটক অবস্থায় সাংবাদিকদের জানান, তিনি উত্তেজিত ছাত্রদের শান্ত করতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হন। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সহকারী শিক্ষক মাইনুদ্দিন জানান, পুলিশের হাত থেকে তিনিও রেহাই পাননি। শিক্ষক রুবেল দেবনাথ জানান, তিনি শিক্ষকদের ডরমেটরিতে ছিলেন। পুলিশ সেখানে ঢুকে তাকেও মারধর করেছে। পুলিশি হামলায় ছাত্রশিক্ষকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। আহত শিক্ষকদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাঁরা হচ্ছেন, তাজল ইসলাম, মিথুন বিশ্বাস, আবুল কালাম, আল আমিন, কামরুল ইসলম, ফয়েজ, আব্দুস সহিদ, মহসিন ও রুবেল দেবনাথ এবং ছাত্রদের মধ্যে শাকিল, জয়, ইভান, প্রান্ত, মুছা, শান্ত।
ভোলা থানার ওসি সোহরাব হোসেন জানান, ভোলা সরকারী স্কুলের ছাত্ররা পরাজিত হয়ে বাস ভাংচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ৪ পুলিশ সামান্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সাময়িকভাবে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরে প্রধান শিক্ষক মুচলেকা দিলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.