প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান-পুলিশ যেভাবে বদলে যেতে পারে

অন্যায় করলে কারোরই রেহাই পাওয়া উচিত নয়। পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি প্রযোজ্য। তারা আইন প্রয়োগ করবেন আইনি বিধান অনুসরণ করে এবং এ ক্ষেত্রে আইনের লঙ্ঘন কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।


অনুমোদনযোগ্য হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে ২৯তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে ভাষণদানকালে সম্ভবত এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, 'প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে' এবং 'বিভাগীয় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেওয়াই সরকারের নীতি।' এ নীতি প্রতিপালিত হলে পুলিশ বাহিনীর কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা সেটা পূরণ হওয়া সম্ভব। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, পুলিশের ভাবমূর্তি জনমনে মোটেই ভালো কিছু নয়। 'বাঘে ছুঁলে আঠার ঘা, কিন্তু পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ ঘা'_ এ প্রবাদের সৃষ্টি তো আর এমনি হয়নি। পুলিশের কাছে গেলে ভালো হবে_ বেশিরভাগ মানুষই এ বিশ্বাস করতে পারে না। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে ব্যর্থতা, ঝালকাঠির নির্বিরোধী কলেজছাত্র লিমনকে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া, সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে হরতালের দিনে বেপরোয়া মারধর করার পরও অভিযুক্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, যশোরের সাংবাদিক জামালউদ্দিনের হত্যার সঙ্গে শার্শা থানার একাধিক পুলিশের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে কালক্ষেপণ করা_ এ ধরনের আরও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের চোখের সামনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদপত্রের মনোযোগী পাঠক এবং গভীর মানবিক বিবেচনাবোধ থেকে তিনি বিভিন্ন খবর বিশ্লেষণ করে থাকেন। ওপরের যে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সে ধরনের আরও খবর সংবাদপত্রে মাঝে মধ্যেই থাকে যা তার দৃষ্টি এড়ানোর কথা নয়। পুলিশের মিডিয়া সেলের মনিটরিংয়েও তা ধরা পড়ে। পুলিশ অন্যায় করছে কি-না তার হদিস পেতে তাই বেশি অনুসন্ধানের প্রয়োজন পড়ে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশের দক্ষতা বাড়ানোর অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। অপরাধের ধরন বিশ্বব্যাপীই পাল্টে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। এর মোকাবেলায় বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে_ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা সময়োপযোগী। একই সঙ্গে এ বাহিনীকে স্বাধীনভাবে ও পক্ষপাতমুক্তভাবে কাজ করতে দেওয়ার অঙ্গীকারও রক্ষা করা চাই। নিকট ও দূর অতীতে পুলিশ বাহিনীকে ক্ষমতাসীনরা দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে এবং মহাজোট সরকারের আমলে তার ব্যতিক্রম ঘটছে বলে কেউ মনে করে না। 'সুশৃঙ্খল ও দায়িত্বশীল' বাহিনী হিসেবে পুলিশের যত প্রশংসাই করা হোক না কেন, তাদের পদোন্নতি এবং বদলি কিংবা শাস্তির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিচার-বিবেচনা কাজ করে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবগুলো রয়েছে ফাইলবন্দি অবস্থায়। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে পুলিশ অফিসার ও জওয়ানরা অন্যায় করেও পার পেয়ে যাওয়ার যে মন্দ রেওয়াজ সেটা ভাঙা যাবে না। আইন-শৃঙ্খলা ও সমাজে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখায় তাদের কাছে যে বিপুল প্রত্যাশা সেটাও পূরণ হবে না। দেশবাসী এটাই চায় যে, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এ বাহিনীকে দেখতে চাইছেন তারা সেভাবেই প্রশিক্ষিত হয়ে উঠুক এবং প্রকৃতই হয়ে উঠুক জনগণের সেবক। ব্যর্থতা-দুর্নীতি-অনিয়মের বদনাম থেকে তারা থাকুক মুক্ত।
 

No comments

Powered by Blogger.