শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নয়ন এবং শিক্ষক আন্দোলন by ড. হারুন রশীদ
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন একটি নিয়মতান্ত্রিক এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একটি জাতিকে প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত করে তুলতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরির্বতন ছাড়া কোনভাবেই তা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
বিগত সাড়ে তিন বছরে শুধু শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হয়নি, কোটি কোটি ছাত্রের হাতে ঝকঝকে ছাপানো বই পৌঁছে দিয়েছে সরকার। এবং তা সময় মতো। শুধু তাই নয় এই সময়ে তারা একটি যুগোপযোগী এবং আধুনিক শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। এতটা অবিতর্কিত এবং প্রায় সকলের মনঃপূত এমন শিক্ষানীতি এর আগে কখনও হয়নি এ দেশে। এ শিক্ষা নীতির আলোকেই বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই শিক্ষা নীতির আলোকেই। পঞ্চম শ্রেণী পাস করেই একজন শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট পাচ্ছে। এটা তার শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে উৎসাহব্যঞ্জক ভূমিকা রাখছে।
পরিবর্তন এসেছে সিলেবাস কারিকুলামে। পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছে। শিক্ষায় আগের যে কোন সময়ের তুলনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন, ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হচ্ছে এসএমএস কিংবা অনলাইনে। মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু, টেলিভিশনে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পাঠদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে। এর সবই শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তনের ধারা সূচিত করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া কোচিং বাণিজ্য বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধে যে নীতিমালা জারি করেছে তা সর্ব মহল থেকে প্রশংসিত হয়েছে। এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের দৈহিক আঘাত, অশালীন মন্তব্য, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করতে পারবেন না। মানসিকভাবেও ছাত্রছাত্রীদের কোন নির্যাতন করা যাবে না।
এ নীতিমালা যাতে শতভাগ নিশ্চিত করা যায় সেজন্য শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকতার পেশা মহান। যাঁরা শিক্ষাদানকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন সমাজের চোখে তাঁরা মর্যাদাবান। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাঁরা আদর্শস্থানীয়। শিক্ষকের আচার-আচরণ দ্বারা ছাত্রছাত্রীরা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। এজন্য তাঁদের হতে হয় দায়িত্বশীল। বিশেষ করে ক্লাসরুমে পড়ানোর সময় ছাত্রছাত্রীদের ভুলত্রুটি ধরার চেয়ে তাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার দিকেই জোর দেয়া উচিত। একজন স্নেহপ্রবণ শিক্ষক ক্লাসের দুর্বল ছাত্রটির কাছ থেকেও সহজেই পড়া আদায় করতে পারেন। কিংবা দুষ্টু ছাত্রকে বশে আনতে পারেন। মেরে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করা যায় সেটা ভাবা উচিত। ছাত্রদের পেটানো, বেত মারা, শারীরিকভাবে আহত করা এগুলো বর্তমান দুনিয়ায় চিন্তাও করা যায় না। শাসন করতে হলে সোহাগ করতে হবে আগে। তবে শাসনের সীমারেখা সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হরহামেশাই শিক্ষকদের মৌখিক ভর্ৎসনা, কান ধরে উঠবস করা, চিমটি খাওয়া, বেতের আঘাত বা হাঁটুগেড়ে বসার মতো শাস্তি পেয়ে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাদের মানবিক গুণাবলী লোপ পায়। তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা জন্ম নেয়। যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশের পথকে বাধাগ্রস্ত করে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হয় জ্ঞানার্জনের জন্য। তারা যদি সব জানবেই তাহলে তো আর বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। ছাত্রছাত্রীদের ভুল হতে পারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাদের ভুলত্রুটি শোধরানোর দায়িত্ব তো শিক্ষকদেরই। এজন্যই তো শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর।
আমাদের সমাজে শিক্ষকরা স্নেহময়, হৃদয়বান মহৎপ্রাণের মানুষ। কিন্তু এমন দু’চার জন শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলেন। গরু-মোষের মতো পেটান। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এদের কারণেই সমাজে শিক্ষকদের বদনাম হয়। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটি হওয়া উচিত অত্যন্ত মধুর। সেখানে ভয়ভীতির কোন স্থান নেই। সরকার যে নীতিমালা করেছে তা সকলেরই মেনে চলা উচিত।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারের নিকট দাবি জানানো হচ্ছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ সম্পর্কিত রিট আবেদনে অভিযোগ করা হয়, স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের বাইরে কোচিংয়ে ক্লাস করিয়ে বাড়তি টাকা পান বলে স্কুলগুলোতে ঠিকমতো ক্লাস নেন না। কিন্তু সরকার যেহেতু তাদের বেতন দেন, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস নেয়া তাঁদের দায়িত্ব। তাই শিক্ষকদের কোচিংয়ে ক্লাস নেয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে এ আবেদন। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা জরুরী।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকার যে পরিপত্র জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষক ক্লাসের বাইরে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং দিতে পারবেন না। তবে অন্য বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। এও বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনায় দুর্বল তারা ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে পড়তে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এটা কতটা বাস্তবসম্মত এবং এর তদারিকই বা করবে কে? এভাবে কি কোচিং বন্ধ করা যাবে?
সত্যি বলতে কি শিক্ষাঙ্গনে কোচিং ব্যবস্থা এক মারাত্মক ব্যাধির রূপ নিয়েছে। তার বিস্তার ঘটেছে বিপুলভাবে। অধিক উপার্জনের জন্য একশ্রেণীর শিক্ষক কোচিংয়ে তার শক্তি ও সময় ব্যয় করছেন। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে শ্রেণীকক্ষের শিক্ষাদান। আবার এর অন্য একটি অনৈতিক দিকও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকারও এক ধরনের চাপ অনুভব করেন শ্রেণীকক্ষের শিক্ষকের কাছে কোচিং পড়াতে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা অনৈতিক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতামূলক সমাজে সাধারণভাবে পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের আশায় শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছে। শ্রেণীকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান করা গেলে, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একজন শিক্ষার্থীর কোচিংয়ে পড়ার দরকার হতো না। শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি বাস্তবসম্মত অনুপাত রক্ষা করাও জরুরী। সুতরাং শিক্ষার উন্নতির জন্য পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতেই হবে। শিক্ষাকে কিছুসংখ্যক লোকের অনৈতিক বাণিজ্যের ধারা থেকে বের করে আনতে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্ণ প্রস্তুতির ও মনোযাগ দিতে হবে। বিশ্বের কোথাও মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ ধরনের কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির রমরমা ব্যবসা নেই। বর্তমান বাস্তবতায় কোচিং ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রসঙ্গে যে বিষয়টি চলে আসে তা হচ্ছে, শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দক্ষ, মেধাবী ও সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষকতার পেশায় আকৃষ্ট করতে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনো নানা রকম বৈষম্য রয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রায় সকল বিষয়েই রয়েছে এই বৈষম্য। বিষয়টি ধারাক্রমিকভাবে তুলে ধরলে এ রকম দাঁড়ায়-১. দেশের সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকগণ একই সিলেবাস অনুসরণ করে পাঠদান করেন। তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতায়ও তারতম্য নেই। পার্থক্য শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। সরকারী শিক্ষকগণ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এবং বেসরকারী শিক্ষকগণ সরকার অনুমোদিত, বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত নিয়োগবিধি অনুসারে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। শিক্ষানীতি ২০১০-এ বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য সরকারী শিক্ষকদের অনুরূপ নিয়োগ কমিশন গঠনের উল্লেখ করা হলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি।
২. বর্তমানে দেশে ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল চালু রয়েছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীরা এখনও ১৯৯১-এর জাতীয় স্কেলে ১৫০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে আসছেন। অন্যদিকে একই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা পাচ্ছেন ৭০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। এছাড়া বেসরকারী শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মাত্র ১০০ টাকা, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. সরকারী শিক্ষকগণ দুটি ঈদে অথবা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে মূল বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা পেলেও এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষকরা পান প্রতি ঈদ উপলক্ষে মূল বেতনের ৪ ভাগের ১ ভাগ সমপরিমাণ অর্থ। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা পান প্রতি ঈদে/অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে মূল বেতনের অর্ধেক।
৪. সরকারী শিক্ষকরা নিয়মিত পেলেও এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষকদের নিয়মিত কোন বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেই। শুধু সারা জীবনে একবার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সমপরিমাণ অর্থ তাদের দেয়া হয়। তাও ১৯৯১-এর জাতীয় বেতন স্কেলে। কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কার্যত তাও নেই।
৫. এমপিও-এর জন্য অপেক্ষমাণ শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরের পর বছর বিনা বেতনে কর্মরত। সরকার নির্ধারিত যোগ্যতার শর্ত পূরণ সত্ত্বেও তারা বছরের পর বছর বেতন ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও থেকে বঞ্চিত।
৬. বেসরকারী স্কুল কলেজ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায় কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকরিবিধি নেই। ১৯৯৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জন্য চাকরিবিধি চালুর সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ ‘শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে বিশেষ কয়েকটি পদক্ষেপ’ অধ্যায়ের ১২ ধারায় বলা হয়েছে : ‘প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মচারীর (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী) সংখ্যা; প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং তাঁদের কাজের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করা হবে। এর জন্য একটি নীতিকাঠামো তৈরি করা হবে।’ একই অধ্যায়ের ১৩ ধারায় বর্ণিত হয়েছে : ‘কর্মচারীদের চাকরির নিয়মাবলী তৈরি করে তা বিধিবদ্ধ করা হবে এবং যাঁরা চাকরিতে আছেন তাঁদের তা অবগত করা হবে। আর যাঁরা পরে কাজে যোগদান করবেন তাঁদের নিয়োগপত্রের সঙ্গে নিয়মাবলী লিখিতভাবে জানানো হবে। তাঁদের বেতন কাঠামো যুগোপযোগী করা হবে।’ ১৯৯৪ সালের সরকারী সিদ্ধান্ত ও শিক্ষানীতি ২০১০-এ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা অদ্যাবধি প্রাপ্য ন্যূনতম পেশাগত অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ এর জন্য সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ নেই। শুধু ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের যুগের পর যুগ এ ধরনের একটি বঞ্চনা ভোগ করতে হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সহযোগী অধ্যাপকের উপরে কোন পদ নেই। একজন শিক্ষক তার পেশাগত জীবনে যতই মেধা, প্রজ্ঞা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন না কেন তিনি সহযোগী অধ্যাপকের উপরে উঠতে পারবেন না। অথচ সিনিয়র হলে তিনি বেতন পান অধ্যাপকের স্কেলে। সরকারি অর্থ দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু পদ দিচ্ছে না। এটা হীনম্মন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এদিকে শিক্ষক সংগঠনগুলোও তাদের আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচীতে নিজেদের দাবি দাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। তারা গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। অবশ্য জাতীয় পর্যায়ের এগারোটি সংগঠন সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট প্রচলিত গতানুগতিকতায় সমর্পিত ও সীমিত না থেকে পেশাগত দাবি ও অধিকারের সাথে শিক্ষার মানোন্নয়ন, সংস্কৃতি চর্চা, প্রযুক্তির বিকাশ এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে এমনটি বলে আসছে। শিক্ষাক্ষেত্রের সামগ্রিক উন্নয়নে আসলে সরকার এবং শিক্ষক সংগঠনগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কেননা সকলের স্বার্থ ও লক্ষ্য এক। তাই তাদের কর্মসূচিও হওয়া উচিত পরিপূরক। এ ব্যাপারে সরকার এবং শিক্ষক সংগঠনগুলো যাতে এক সঙ্গে কাজ করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরিতে উভয় পক্ষকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোন অবকাশ নেই।
harun_press@yahoo.com
পরিবর্তন এসেছে সিলেবাস কারিকুলামে। পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছে। শিক্ষায় আগের যে কোন সময়ের তুলনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন, ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হচ্ছে এসএমএস কিংবা অনলাইনে। মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু, টেলিভিশনে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পাঠদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে। এর সবই শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তনের ধারা সূচিত করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া কোচিং বাণিজ্য বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধে যে নীতিমালা জারি করেছে তা সর্ব মহল থেকে প্রশংসিত হয়েছে। এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের দৈহিক আঘাত, অশালীন মন্তব্য, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করতে পারবেন না। মানসিকভাবেও ছাত্রছাত্রীদের কোন নির্যাতন করা যাবে না।
এ নীতিমালা যাতে শতভাগ নিশ্চিত করা যায় সেজন্য শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকতার পেশা মহান। যাঁরা শিক্ষাদানকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন সমাজের চোখে তাঁরা মর্যাদাবান। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাঁরা আদর্শস্থানীয়। শিক্ষকের আচার-আচরণ দ্বারা ছাত্রছাত্রীরা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। এজন্য তাঁদের হতে হয় দায়িত্বশীল। বিশেষ করে ক্লাসরুমে পড়ানোর সময় ছাত্রছাত্রীদের ভুলত্রুটি ধরার চেয়ে তাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার দিকেই জোর দেয়া উচিত। একজন স্নেহপ্রবণ শিক্ষক ক্লাসের দুর্বল ছাত্রটির কাছ থেকেও সহজেই পড়া আদায় করতে পারেন। কিংবা দুষ্টু ছাত্রকে বশে আনতে পারেন। মেরে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করা যায় সেটা ভাবা উচিত। ছাত্রদের পেটানো, বেত মারা, শারীরিকভাবে আহত করা এগুলো বর্তমান দুনিয়ায় চিন্তাও করা যায় না। শাসন করতে হলে সোহাগ করতে হবে আগে। তবে শাসনের সীমারেখা সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হরহামেশাই শিক্ষকদের মৌখিক ভর্ৎসনা, কান ধরে উঠবস করা, চিমটি খাওয়া, বেতের আঘাত বা হাঁটুগেড়ে বসার মতো শাস্তি পেয়ে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাদের মানবিক গুণাবলী লোপ পায়। তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা জন্ম নেয়। যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশের পথকে বাধাগ্রস্ত করে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হয় জ্ঞানার্জনের জন্য। তারা যদি সব জানবেই তাহলে তো আর বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। ছাত্রছাত্রীদের ভুল হতে পারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাদের ভুলত্রুটি শোধরানোর দায়িত্ব তো শিক্ষকদেরই। এজন্যই তো শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর।
আমাদের সমাজে শিক্ষকরা স্নেহময়, হৃদয়বান মহৎপ্রাণের মানুষ। কিন্তু এমন দু’চার জন শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলেন। গরু-মোষের মতো পেটান। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এদের কারণেই সমাজে শিক্ষকদের বদনাম হয়। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটি হওয়া উচিত অত্যন্ত মধুর। সেখানে ভয়ভীতির কোন স্থান নেই। সরকার যে নীতিমালা করেছে তা সকলেরই মেনে চলা উচিত।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারের নিকট দাবি জানানো হচ্ছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ সম্পর্কিত রিট আবেদনে অভিযোগ করা হয়, স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের বাইরে কোচিংয়ে ক্লাস করিয়ে বাড়তি টাকা পান বলে স্কুলগুলোতে ঠিকমতো ক্লাস নেন না। কিন্তু সরকার যেহেতু তাদের বেতন দেন, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস নেয়া তাঁদের দায়িত্ব। তাই শিক্ষকদের কোচিংয়ে ক্লাস নেয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে এ আবেদন। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা জরুরী।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকার যে পরিপত্র জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষক ক্লাসের বাইরে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং দিতে পারবেন না। তবে অন্য বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। এও বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনায় দুর্বল তারা ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে পড়তে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এটা কতটা বাস্তবসম্মত এবং এর তদারিকই বা করবে কে? এভাবে কি কোচিং বন্ধ করা যাবে?
সত্যি বলতে কি শিক্ষাঙ্গনে কোচিং ব্যবস্থা এক মারাত্মক ব্যাধির রূপ নিয়েছে। তার বিস্তার ঘটেছে বিপুলভাবে। অধিক উপার্জনের জন্য একশ্রেণীর শিক্ষক কোচিংয়ে তার শক্তি ও সময় ব্যয় করছেন। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে শ্রেণীকক্ষের শিক্ষাদান। আবার এর অন্য একটি অনৈতিক দিকও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকারও এক ধরনের চাপ অনুভব করেন শ্রেণীকক্ষের শিক্ষকের কাছে কোচিং পড়াতে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা অনৈতিক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতামূলক সমাজে সাধারণভাবে পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের আশায় শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছে। শ্রেণীকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান করা গেলে, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একজন শিক্ষার্থীর কোচিংয়ে পড়ার দরকার হতো না। শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি বাস্তবসম্মত অনুপাত রক্ষা করাও জরুরী। সুতরাং শিক্ষার উন্নতির জন্য পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতেই হবে। শিক্ষাকে কিছুসংখ্যক লোকের অনৈতিক বাণিজ্যের ধারা থেকে বের করে আনতে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্ণ প্রস্তুতির ও মনোযাগ দিতে হবে। বিশ্বের কোথাও মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ ধরনের কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির রমরমা ব্যবসা নেই। বর্তমান বাস্তবতায় কোচিং ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রসঙ্গে যে বিষয়টি চলে আসে তা হচ্ছে, শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দক্ষ, মেধাবী ও সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষকতার পেশায় আকৃষ্ট করতে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনো নানা রকম বৈষম্য রয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রায় সকল বিষয়েই রয়েছে এই বৈষম্য। বিষয়টি ধারাক্রমিকভাবে তুলে ধরলে এ রকম দাঁড়ায়-১. দেশের সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকগণ একই সিলেবাস অনুসরণ করে পাঠদান করেন। তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতায়ও তারতম্য নেই। পার্থক্য শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। সরকারী শিক্ষকগণ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এবং বেসরকারী শিক্ষকগণ সরকার অনুমোদিত, বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত নিয়োগবিধি অনুসারে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। শিক্ষানীতি ২০১০-এ বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য সরকারী শিক্ষকদের অনুরূপ নিয়োগ কমিশন গঠনের উল্লেখ করা হলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি।
২. বর্তমানে দেশে ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল চালু রয়েছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীরা এখনও ১৯৯১-এর জাতীয় স্কেলে ১৫০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে আসছেন। অন্যদিকে একই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা পাচ্ছেন ৭০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। এছাড়া বেসরকারী শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মাত্র ১০০ টাকা, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. সরকারী শিক্ষকগণ দুটি ঈদে অথবা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে মূল বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা পেলেও এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষকরা পান প্রতি ঈদ উপলক্ষে মূল বেতনের ৪ ভাগের ১ ভাগ সমপরিমাণ অর্থ। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা পান প্রতি ঈদে/অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে মূল বেতনের অর্ধেক।
৪. সরকারী শিক্ষকরা নিয়মিত পেলেও এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষকদের নিয়মিত কোন বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেই। শুধু সারা জীবনে একবার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সমপরিমাণ অর্থ তাদের দেয়া হয়। তাও ১৯৯১-এর জাতীয় বেতন স্কেলে। কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কার্যত তাও নেই।
৫. এমপিও-এর জন্য অপেক্ষমাণ শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরের পর বছর বিনা বেতনে কর্মরত। সরকার নির্ধারিত যোগ্যতার শর্ত পূরণ সত্ত্বেও তারা বছরের পর বছর বেতন ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও থেকে বঞ্চিত।
৬. বেসরকারী স্কুল কলেজ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায় কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকরিবিধি নেই। ১৯৯৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জন্য চাকরিবিধি চালুর সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ ‘শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে বিশেষ কয়েকটি পদক্ষেপ’ অধ্যায়ের ১২ ধারায় বলা হয়েছে : ‘প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মচারীর (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী) সংখ্যা; প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং তাঁদের কাজের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করা হবে। এর জন্য একটি নীতিকাঠামো তৈরি করা হবে।’ একই অধ্যায়ের ১৩ ধারায় বর্ণিত হয়েছে : ‘কর্মচারীদের চাকরির নিয়মাবলী তৈরি করে তা বিধিবদ্ধ করা হবে এবং যাঁরা চাকরিতে আছেন তাঁদের তা অবগত করা হবে। আর যাঁরা পরে কাজে যোগদান করবেন তাঁদের নিয়োগপত্রের সঙ্গে নিয়মাবলী লিখিতভাবে জানানো হবে। তাঁদের বেতন কাঠামো যুগোপযোগী করা হবে।’ ১৯৯৪ সালের সরকারী সিদ্ধান্ত ও শিক্ষানীতি ২০১০-এ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা অদ্যাবধি প্রাপ্য ন্যূনতম পেশাগত অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ এর জন্য সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ নেই। শুধু ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের যুগের পর যুগ এ ধরনের একটি বঞ্চনা ভোগ করতে হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সহযোগী অধ্যাপকের উপরে কোন পদ নেই। একজন শিক্ষক তার পেশাগত জীবনে যতই মেধা, প্রজ্ঞা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন না কেন তিনি সহযোগী অধ্যাপকের উপরে উঠতে পারবেন না। অথচ সিনিয়র হলে তিনি বেতন পান অধ্যাপকের স্কেলে। সরকারি অর্থ দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু পদ দিচ্ছে না। এটা হীনম্মন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এদিকে শিক্ষক সংগঠনগুলোও তাদের আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচীতে নিজেদের দাবি দাওয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। তারা গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। অবশ্য জাতীয় পর্যায়ের এগারোটি সংগঠন সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট প্রচলিত গতানুগতিকতায় সমর্পিত ও সীমিত না থেকে পেশাগত দাবি ও অধিকারের সাথে শিক্ষার মানোন্নয়ন, সংস্কৃতি চর্চা, প্রযুক্তির বিকাশ এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে এমনটি বলে আসছে। শিক্ষাক্ষেত্রের সামগ্রিক উন্নয়নে আসলে সরকার এবং শিক্ষক সংগঠনগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কেননা সকলের স্বার্থ ও লক্ষ্য এক। তাই তাদের কর্মসূচিও হওয়া উচিত পরিপূরক। এ ব্যাপারে সরকার এবং শিক্ষক সংগঠনগুলো যাতে এক সঙ্গে কাজ করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরিতে উভয় পক্ষকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোন অবকাশ নেই।
harun_press@yahoo.com
No comments