সরকার এখনই কিছু কাজ সম্পাদন করুক by মমতাজ লতিফ
আগামী নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে, এক বছরের সামান্য বেশি এ সময়ে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো কাজ সম্পাদন করতে হবে। সরকারকে এ সময়ে একদিকে যেমন অহেতুক ঝামেলা না বাড়িয়ে কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে, তেমনি অপরদিকে জনআকাক্সক্ষাকে লক্ষ্য রেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশ কিছু কাজ সম্পাদন করে ফেলতে হবে।
প্রথমত, পদ্মা সেতুর ঝামেলা মিটিয়ে ফেলে সেতুর কাজটির শুভ সূচনা করতে সরকার যেন আর দেরি না করে। স্বউদ্যোগে পদ্মা সেতু করা সম্ভব, কিন্তু স্বউদ্যোগে এত বড় কর্মযজ্ঞ করতে গেলে বিদেশী-শ্বেতাঙ্গরা কতভাবে বিপত্তি ঘটাতে তৎপরতা চালাবে তা ভেবে এ পথ থেকে সরে আসাই বাঞ্ছনীয়। নতুবা আমরা নতুন নতুন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে যাব, এমনই মনে হয় যখন ’৭৪, ’৭৫-এর সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কালো সময়ের ষড়যন্ত্রের কথা স্মরণ হয়! প্রকৃত পক্ষে দরিদ্র বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় সেতু করে ফেলবেÑ এটি দেশী-বিদেশী কোন পক্ষই মেনে নেবে না, তাদের নানা তৎপরতার নেতিবাচক প্রভাব আগামী নির্বাচনের ফলের ওপর যাতে পড়ে তেমন একটা প্রচেষ্টাও থাকবে এতে সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয়ত, মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির প্রায় কাছাকাছি সময়ে পরীক্ষা না নেয়ার ঘোষণাটি ছিল অযৌক্তিক। এটি অবশ্যই স্বীকার্য যে, দশ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা ও দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অন্তে সমাপনী পরীক্ষার ফলকেই গণ্য করে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়া উচিত। বারো বছরের শিক্ষার ফলকে কোনক্রমেই নগণ্য সূচক ধরা যায় না বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবীদের এ দু’টো পরীক্ষার গ্রেড উচ্চমানের হয়েছে বলেই দেখা গেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে হঠাৎ কোন কিছুর পরিবর্তন কেউ মেনে নেয় না এবং যদি পরীক্ষার বদলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে সে সিদ্ধান্ত কমপক্ষে এক বছর আগে গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের অবহিত করতে হবে। এটাও তো ঠিক যে, ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে কোচিং বাণিজ্য ও বিপুল অর্থব্যয় জড়িত। তারপরও শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের নতুন রীতিটি গ্রহণ করবার, এর সুবিধাদি উপলব্ধি করবার সুযোগ ও সময় দেবার দরকার ছিল। যা হোক, এ ঝামেলাটির একটি সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে।
তৃতীয়ত, গ্রামীণ ব্যাংক। আমরা জানি, সরকার থেকে ড. ইউনূসকে এর পরামর্শক হিসেবে সংশ্লিষ্ট থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছিল যা তিনি প্রত্যাখ্যান করে তাঁর গ্রামীণের নিয়মে বয়স পার হওয়ার পর অব্যাহতি প্রদানের বিরুদ্ধে আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এটা সম্ভবত সবারই জানা যে, সার্ভিস রুলের বাইরের কোন কিছু কোন নিয়ম কোন সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বদলাতে পারে না। আদালতে তিনি পরাজিত হলেও এরপর যা যা ঘটেছে ও ঘটছে, সেসব পুরোপুরিই রাজনৈতিক যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ওমেন, রাষ্ট্রদূত, ইউরোপের ব্যবসায়ী বা বাংলাদেশের একটি উচ্চশিক্ষিত দল এবং গ্রামীণের পরিচালনা পর্ষদের ঋণগ্রহীতা সদস্য সবাই মূল ঘটনা থেকে সরে এসে বলছেন
ক. সরকার গ্রামীণ ব্যাংক দখল করতে চায় (কেন? সরকারী ব্যাংকগুলোকে ঠিক রাখতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার আরেকটি ব্যাংক দখল করলে শেখ হাসিনা বা অর্থমন্ত্রী বা বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর-এদের কে বিশেষ উপকারটি পাবে? কিভাবে তা পাবে?) খ. নোবেল পাওয়া ব্যাংকটিকে সরকার ধ্বংস করতে চায় (গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হলে পাঁচ বছরে সরকারের কি কি লাভ হবে জানি না, তবে, বিশাল ক্ষতি যে হবে, তা সরকার নিজেই বোঝে যেজন্য সরকার বা অর্থমন্ত্রী একজন যোগ্য ব্যক্তিকে এটির দায়িত্ব দিতে চান এবং তিনি যে এ ব্যাপারে আন্তরিক, তা বোঝা কঠিন নয়, তার প্রমাণ এখনও গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হয়নি, ঠিকমতোই চলছে।)
এটা সবাই মনে করে যে, সরকারের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি দ্রুতই নিয়োগ দান করা উচিত। দেশী-বিদেশী চক্রকে এতদিন ধরে নানা কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দেয়া উচিত হয়নি। এরা দ্রুত নিষ্পত্তি জনগণ ও সরকারের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। এ কাজে সময় ক্ষেপণ মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
চতুর্থত, সোহেল তাজকে নিয়ে, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিচালক তাজউদ্দীন আহমদের পুত্রকে জনগণ তার স্বপদে সক্রিয় দেখতে চেয়েছে, এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। আমি নিজে সোহেলের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিতে চেয়েছি, তবে সময়, সুযোগ হয়নি। এ ক্ষেত্রে দেরিতে হলেও সরকার একটি প্রশংসনীয় সমাধান গ্রহণ করেছে। সোহেলের বোন সিমিন হোসেন রিমি যে তাঁর প-িত, মেধাবী রাজনীতিক বাবার বিষয়ে গবেষণাধর্মী লেখালেখি করে জনগণকে তাঁর অবদানের বিষয়ে সচেতন করেছে, তাঁকে সোহেলের শূন্য পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি যথাযোগ্য সমাধান হয়েছে বলে শত্রু-মিত্র সবাই মনে করে।
পঞ্চমত, বুয়েট পরিস্থিতি। এ ক্ষেত্রে সরকারকে কঠিন হতে হবে। এছাড়া, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বিক্ষোভরত শিক্ষক শিক্ষার্থীকে তদন্তের ফল অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া যায়। উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তাহলে, বুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম ও ভর্তি কার্যক্রম আজকালের মধ্যে শুরু হচ্ছে কিনা এবার তা জনগণ দেখতে চায় এবং সে কাজ করতে হবে ‘বুয়েট’ পরিবারকেই।
ষষ্ঠত, নির্বাচন নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অতি জরুরী। সরকারকে গোয়েন্দা রিপোর্টের বাইরেও নিজস্ব দলের সদস্যদের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করে দলীয় অবস্থান জানতে হবে এবং যেখানে দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সে সবের সমাধান দ্রুত গ্রহণ করা জরুরী। নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারের সফলতা, মুক্তিযুদ্ধজাত বাংলাদেশের সব সরকারই যে সব সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকার অধিকার, সে বিষয়টির প্রতি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার। তাদের জানতে হবে পৃথিবীর কোন দেশে সে দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা সরকার গঠনের সুযোগ পায়নি, এমনকি তাদের ভোটের অধিকারও নেই। নির্বাচনী বক্তব্যে, সব ভুল-ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার নমনীয় ব্যাখ্যা দেয়াও জরুরী। তাছাড়া এবারের নির্বাচন যেহেতু যুদ্ধাপরাধের বিচার চলা অবস্থায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের মিত্র বিএনপির মিথ্যা প্রচারণায় বিপুল অর্থ ছড়াবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়াও এবার খালেদার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা এবার নির্বাচনী প্রচারণায় টার্গেট করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপুত্র জয়কে, যে ভদ্র সজ্জন ছেলেটি বঙ্গবন্ধুর নাতি হওয়ায় বহু কষ্ট করে অল্প বয়সে মা, বাবাকে ছেড়ে বিদেশের হোস্টেলে থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করে যুক্তরাষ্ট্রে সেটেল হয়েছে। দেশকেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দিচ্ছে। জয়ের বোন সায়মার বেলায়, তাজউদ্দীনের পুত্র-কন্যাদের বেলায়, সৈয়দ নজরুলের পুত্র আশরাফের বেলায়, শেখ মনির পুত্র তাপসের বেলায়ও এ কথা প্রযোজ্য। এদের সঙ্গে মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানের পুত্রদেরও নানা বাধাবিঘœ সরিয়ে শিক্ষিত হতে হয়েছে, সমাজে স্থিত হতে হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্য ও ‘জয়ের দুর্নীতির’ কথিত পরিকল্পিত ফাইলের খবরে সরকার ও সরকারী দল এবং সরকারপ্রধানকে এর উপযুক্ত জবাবদানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। গোয়েন্দারা এ ফাইলে কী কী দুর্নীতির কথা আছে, তা আগাম সরকারকে জানান-এটিই কাম্য।
এছাড়া নির্বাচন কোন্ পদ্ধতির সরকার কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালিত হবে, সেটি দ্রুত নির্ধারণ করা হলে দেশী-বিদেশী নানা চক্রের এ বিষয় নিয়ে নানা তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে যার দরকার আছে। এ বিষয়ে সংসদে, সংসদের বাইরে নমনীয়তা এবং একই সঙ্গে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সংঘটনের লক্ষ্যে সরকারকে দৃশ্যমান গ্রহণযোগ্য কাজ করতে হবে। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সব দলকে নিয়ে একত্রে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে হবে, এমনকি, সিপিবিকেও সঙ্গে রাখতে হবে।
সপ্তমত, অন্তত কয়েকজন প্রধান যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ এ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে এবং একই সঙ্গে সব জেলার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এভাবে জনগণকে যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজটি অব্যাহত থাকার দৃশ্যমান প্রমাণ দিতে হবে।
এছাড়াও পার্বত্য শান্তিচুক্তির ভূমি ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের অসম্পাদিত কাজগুলোর কিছু কাজ সম্পাদন করতে হবে। নৃতত্ত্বে আমরা ‘উপজাতি’ হিসেবে বা ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ নামে এদের পরিচয় পেয়েছি। ‘আদিবাসী’ শব্দটি হাল আমলে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্বত্য বা সমভূমির উপজাতিরা যদি সব অধিকার লাভ করে এবং ‘আদিবাসী দিবস’ পালন করে তাতে কারোর কোন ক্ষতি নেই বরং লাভ আছে। মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হওয়াই আমাদের দু’পক্ষের প্রধান লক্ষ্য এটি স্মরণে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির প্রায় কাছাকাছি সময়ে পরীক্ষা না নেয়ার ঘোষণাটি ছিল অযৌক্তিক। এটি অবশ্যই স্বীকার্য যে, দশ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা ও দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অন্তে সমাপনী পরীক্ষার ফলকেই গণ্য করে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়া উচিত। বারো বছরের শিক্ষার ফলকে কোনক্রমেই নগণ্য সূচক ধরা যায় না বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবীদের এ দু’টো পরীক্ষার গ্রেড উচ্চমানের হয়েছে বলেই দেখা গেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে হঠাৎ কোন কিছুর পরিবর্তন কেউ মেনে নেয় না এবং যদি পরীক্ষার বদলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে সে সিদ্ধান্ত কমপক্ষে এক বছর আগে গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের অবহিত করতে হবে। এটাও তো ঠিক যে, ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে কোচিং বাণিজ্য ও বিপুল অর্থব্যয় জড়িত। তারপরও শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের নতুন রীতিটি গ্রহণ করবার, এর সুবিধাদি উপলব্ধি করবার সুযোগ ও সময় দেবার দরকার ছিল। যা হোক, এ ঝামেলাটির একটি সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে।
তৃতীয়ত, গ্রামীণ ব্যাংক। আমরা জানি, সরকার থেকে ড. ইউনূসকে এর পরামর্শক হিসেবে সংশ্লিষ্ট থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছিল যা তিনি প্রত্যাখ্যান করে তাঁর গ্রামীণের নিয়মে বয়স পার হওয়ার পর অব্যাহতি প্রদানের বিরুদ্ধে আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এটা সম্ভবত সবারই জানা যে, সার্ভিস রুলের বাইরের কোন কিছু কোন নিয়ম কোন সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বদলাতে পারে না। আদালতে তিনি পরাজিত হলেও এরপর যা যা ঘটেছে ও ঘটছে, সেসব পুরোপুরিই রাজনৈতিক যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ওমেন, রাষ্ট্রদূত, ইউরোপের ব্যবসায়ী বা বাংলাদেশের একটি উচ্চশিক্ষিত দল এবং গ্রামীণের পরিচালনা পর্ষদের ঋণগ্রহীতা সদস্য সবাই মূল ঘটনা থেকে সরে এসে বলছেন
ক. সরকার গ্রামীণ ব্যাংক দখল করতে চায় (কেন? সরকারী ব্যাংকগুলোকে ঠিক রাখতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার আরেকটি ব্যাংক দখল করলে শেখ হাসিনা বা অর্থমন্ত্রী বা বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর-এদের কে বিশেষ উপকারটি পাবে? কিভাবে তা পাবে?) খ. নোবেল পাওয়া ব্যাংকটিকে সরকার ধ্বংস করতে চায় (গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হলে পাঁচ বছরে সরকারের কি কি লাভ হবে জানি না, তবে, বিশাল ক্ষতি যে হবে, তা সরকার নিজেই বোঝে যেজন্য সরকার বা অর্থমন্ত্রী একজন যোগ্য ব্যক্তিকে এটির দায়িত্ব দিতে চান এবং তিনি যে এ ব্যাপারে আন্তরিক, তা বোঝা কঠিন নয়, তার প্রমাণ এখনও গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হয়নি, ঠিকমতোই চলছে।)
এটা সবাই মনে করে যে, সরকারের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি দ্রুতই নিয়োগ দান করা উচিত। দেশী-বিদেশী চক্রকে এতদিন ধরে নানা কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দেয়া উচিত হয়নি। এরা দ্রুত নিষ্পত্তি জনগণ ও সরকারের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। এ কাজে সময় ক্ষেপণ মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
চতুর্থত, সোহেল তাজকে নিয়ে, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিচালক তাজউদ্দীন আহমদের পুত্রকে জনগণ তার স্বপদে সক্রিয় দেখতে চেয়েছে, এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। আমি নিজে সোহেলের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিতে চেয়েছি, তবে সময়, সুযোগ হয়নি। এ ক্ষেত্রে দেরিতে হলেও সরকার একটি প্রশংসনীয় সমাধান গ্রহণ করেছে। সোহেলের বোন সিমিন হোসেন রিমি যে তাঁর প-িত, মেধাবী রাজনীতিক বাবার বিষয়ে গবেষণাধর্মী লেখালেখি করে জনগণকে তাঁর অবদানের বিষয়ে সচেতন করেছে, তাঁকে সোহেলের শূন্য পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি যথাযোগ্য সমাধান হয়েছে বলে শত্রু-মিত্র সবাই মনে করে।
পঞ্চমত, বুয়েট পরিস্থিতি। এ ক্ষেত্রে সরকারকে কঠিন হতে হবে। এছাড়া, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বিক্ষোভরত শিক্ষক শিক্ষার্থীকে তদন্তের ফল অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া যায়। উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তাহলে, বুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম ও ভর্তি কার্যক্রম আজকালের মধ্যে শুরু হচ্ছে কিনা এবার তা জনগণ দেখতে চায় এবং সে কাজ করতে হবে ‘বুয়েট’ পরিবারকেই।
ষষ্ঠত, নির্বাচন নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অতি জরুরী। সরকারকে গোয়েন্দা রিপোর্টের বাইরেও নিজস্ব দলের সদস্যদের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করে দলীয় অবস্থান জানতে হবে এবং যেখানে দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সে সবের সমাধান দ্রুত গ্রহণ করা জরুরী। নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারের সফলতা, মুক্তিযুদ্ধজাত বাংলাদেশের সব সরকারই যে সব সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকার অধিকার, সে বিষয়টির প্রতি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার। তাদের জানতে হবে পৃথিবীর কোন দেশে সে দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা সরকার গঠনের সুযোগ পায়নি, এমনকি তাদের ভোটের অধিকারও নেই। নির্বাচনী বক্তব্যে, সব ভুল-ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার নমনীয় ব্যাখ্যা দেয়াও জরুরী। তাছাড়া এবারের নির্বাচন যেহেতু যুদ্ধাপরাধের বিচার চলা অবস্থায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের মিত্র বিএনপির মিথ্যা প্রচারণায় বিপুল অর্থ ছড়াবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়াও এবার খালেদার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা এবার নির্বাচনী প্রচারণায় টার্গেট করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপুত্র জয়কে, যে ভদ্র সজ্জন ছেলেটি বঙ্গবন্ধুর নাতি হওয়ায় বহু কষ্ট করে অল্প বয়সে মা, বাবাকে ছেড়ে বিদেশের হোস্টেলে থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করে যুক্তরাষ্ট্রে সেটেল হয়েছে। দেশকেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দিচ্ছে। জয়ের বোন সায়মার বেলায়, তাজউদ্দীনের পুত্র-কন্যাদের বেলায়, সৈয়দ নজরুলের পুত্র আশরাফের বেলায়, শেখ মনির পুত্র তাপসের বেলায়ও এ কথা প্রযোজ্য। এদের সঙ্গে মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানের পুত্রদেরও নানা বাধাবিঘœ সরিয়ে শিক্ষিত হতে হয়েছে, সমাজে স্থিত হতে হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্য ও ‘জয়ের দুর্নীতির’ কথিত পরিকল্পিত ফাইলের খবরে সরকার ও সরকারী দল এবং সরকারপ্রধানকে এর উপযুক্ত জবাবদানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। গোয়েন্দারা এ ফাইলে কী কী দুর্নীতির কথা আছে, তা আগাম সরকারকে জানান-এটিই কাম্য।
এছাড়া নির্বাচন কোন্ পদ্ধতির সরকার কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালিত হবে, সেটি দ্রুত নির্ধারণ করা হলে দেশী-বিদেশী নানা চক্রের এ বিষয় নিয়ে নানা তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে যার দরকার আছে। এ বিষয়ে সংসদে, সংসদের বাইরে নমনীয়তা এবং একই সঙ্গে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সংঘটনের লক্ষ্যে সরকারকে দৃশ্যমান গ্রহণযোগ্য কাজ করতে হবে। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সব দলকে নিয়ে একত্রে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে হবে, এমনকি, সিপিবিকেও সঙ্গে রাখতে হবে।
সপ্তমত, অন্তত কয়েকজন প্রধান যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ এ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে এবং একই সঙ্গে সব জেলার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এভাবে জনগণকে যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজটি অব্যাহত থাকার দৃশ্যমান প্রমাণ দিতে হবে।
এছাড়াও পার্বত্য শান্তিচুক্তির ভূমি ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের অসম্পাদিত কাজগুলোর কিছু কাজ সম্পাদন করতে হবে। নৃতত্ত্বে আমরা ‘উপজাতি’ হিসেবে বা ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ নামে এদের পরিচয় পেয়েছি। ‘আদিবাসী’ শব্দটি হাল আমলে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্বত্য বা সমভূমির উপজাতিরা যদি সব অধিকার লাভ করে এবং ‘আদিবাসী দিবস’ পালন করে তাতে কারোর কোন ক্ষতি নেই বরং লাভ আছে। মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হওয়াই আমাদের দু’পক্ষের প্রধান লক্ষ্য এটি স্মরণে রাখতে হবে।
No comments