কথা সামান্যই-কষ্টার্জিত শব্দের জায়গায় লিখুন শ্রমার্জিত by ফজলুল আলম
যারা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য দেশে অভিবাসন করেছে, এই রচনাটি তাদের সম্পর্কে নয়; এটা স্বল্পকালীন শ্রমিক হিসেবে চুক্তিভিত্তিতে যাওয়া (বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ও পূর্ব এশিয়ায়) বাঙালিদের সম্পর্কে। সমকালীন সময়ে বাঙালিরা অনেক সাধ্যসাধনা করে বিদেশ পাড়ি দেয়, বহুদিন ধরেই তারা এটা করছিল।
যেখান থেকেই শ্রম বিক্রির ডাক আসে, সেখানেই তারা যাওয়ার জন্য অধীর হয়ে পড়ে। 'তারা' বলতে সব বাঙালিকে বোঝানো হচ্ছে না। দরিদ্র বেকার তরুণ ও যুবক বাঙলিরাই শ্রম বিক্রির জন্য বিদেশে যেতে উন্মুখ। একেবারে হতদরিদ্র যারা, তারা নূ্যনতম খরচ জোগাড় করতে পারে না বলে যেতে পারে না। যারা যেতে পারে তারা যে শুধু ভিসা, টিকিট ও সামান্য হাতখরচ সম্বল করে যায়, সেটাও ভাবা ভুল। তাদের জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে এই টগবগে তারুণ্যে পৌঁছে দিয়েছে তাদেরই মা-বাবা বা অভিভাবকরা এবং বাংলাদেশের সমাজ। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পুষ্টির দুরবস্থায় এই কাজটা সহজ নয়। তারপর তারা যখন কর্মক্ষম হলো, তখন দেশ তাদের কাজ দিতে পারে না, খাওয়াতে পারে না, বাসস্থান দিতে পারে না, নিরাপত্তা দিতে পারে না। দেশে কাজ নেই, অথবা কাজ থাকলেও তা সামান্য মজুরির কাজ। সেই মজুরি দিয়ে অন্ন, বস্ত্র ও মাথাগোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থাও করা যায় না। তাই তারা চলে যেতে চায় বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে।
সরকার এটাকে শ্রমিক রপ্তানি নাম দিয়েছে, আসলে এটা মানুষ রপ্তানি ছাড়া আর কী? পণ্য রপ্তানিতে রপ্তানির পরও ব্যবসায়ী ও সরকারের কিছু দায়িত্ব থেকে যায়, শ্রমিক রপ্তানিতেও সেরকম কিছু দায়িত্ব থাকার কথা, কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কখনো খুব একটা মনোযোগ দিয়েছে তেমন উদাহরণ আমাদের কাছে নেই। বিদেশে শ্রমরত বাঙালিরা সেখানের দূতাবাসগুলো থেকে খুব একটা সহায়তা পায় না। এই শ্রমবিক্রির রোজগার থেকে 'রেমিট্যান্সের' উদ্ভব হয়েছে, হুন্ডির ব্যবস্থা আছে, দেশ থেকে টাকা পাচারের ব্যবস্থা হয়, আরো কত কী? অনেকে যারা বেশি দিন ধরে বিদেশে কাজ করছেন, তারা দেশে ঘরও তুলেছেন এবং যেহেতু এই কাজটা আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য ছাড়া হয় না, অনেকেই দেশে ফিরে গিয়ে দেখেছেন যে তাদের পয়সায় তোলা ঘর বেহাত হয়ে গেছে। শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের পেছনে অনেক রাজনীতি ও অর্থনীতির খেলা আছে। সেসব বর্ণনা করতে অনেক কিছু লিখতে হবে বিধায় আজকের কলামে বিষয়টা লিখছি না।
শ্রমবাজার বলে অর্থনীতিতে নানা তত্ত্ব আছে, কোনোটাই এমন একটা তত্ত্ব দিতে পারেনি যা সর্বত্র প্রযোজ্য হবে। সে জন্য শ্রমের জোগান বা সরবরাহ এবং শ্রমের দাবি অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ও দাবির নিয়মের মধ্যে পড়ে না। চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক শুরু থেকেই যে মজুরিতে রাজি হয়েছে, সেটা বাড়ানোর সুযোগ খুবই সীমিত। অপরপক্ষে যে কম্পানিতে তার কাজ হয়েছে, সেই কম্পানি চেষ্টা করবে তার লাভ বাড়ানোর জন্য শ্রমিকের পেছনে সবচেয়ে কম খরচ করতে। সাধারণত স্বল্পকালীন ও চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন থাকে না। ফলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সবাইকে প্রতিদিন কাজ না-ও দিতে পারে। তাদের বসিয়ে রেখে তারা একটা 'শিল্পাঙ্গনের রক্ষিত সেনাদল' (ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মি) হাতে রাখে এবং যেহেতু তাদের পেছনে বড় কোনো (বাসস্থান দেওয়া হয়, তা-ও সাধারণত বাসের অযোগ্য) খরচ করতে হয় না, শিল্পপতির লাভ বাড়তেই থাকে।
অনেকে বাংলাদেশের 'মানব সম্পদে'র কথা বলেন। তাঁরা কী অর্থে এটা বলেন, তা বোঝা যায় না। মনে হয় আমাদের বিশাল কর্মহীন জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে তাঁরা দক্ষ বা অদক্ষ সব শ্রমিক মজুর সম্পর্কেই এ কথা বলেন। তাঁরা এর সঙ্গে 'হিউম্যান ক্যাপিটেলে'র কথাও বলে থাকেন। দুটো কিন্তু ভিন্ন বিষয়। 'হিউম্যান ক্যাপিটেল' শব্দটির বাংলা যথাশব্দ হয় মানব পুঁজি, এই কথাটি শ্রমিক মজুর সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। অর্থনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী 'হিউম্যান ক্যাপিটেল' হচ্ছে, যে জ্ঞানের সাহায্যে একটি দেশের উৎপাদন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা যায়। অর্থাৎ একটা দেশের জ্ঞানভাণ্ডার এই 'মানব পুঁজি' সৃষ্টি করে। এটা সম্ভব হয় দেশে পরিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণার পরিবেশ, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দ্বারা। মানবপুঁজিতে বেশি বেশি বিনিয়োগ করলে একটি দেশের প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়, উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্ধন হয় এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণ বাড়ে- এসবের ফলে দেশটির অর্থনৈতিক যোগ্যতা বাড়ে।
আমাদের স্বল্পকালীন বিদেশে গমনকারী শ্রম বিক্রেতারা যে রেমিট্যান্স পাঠান, তার প্রায় সবটাই রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পা-চাটা ব্যবসায়ীরা ডলারে ভোগ করেন। শ্রমিকরা সেই ডলার রোজগার ও দেশে প্রেরণ করেন শুধু কষ্ট করে নয়, শ্রম বিক্রি করে। তারা সেখানে কোনোরকম (সাধারণত জানালা-দরজাবিহীন গোডাউনে বা এক ঘরে ছয়জন করে) মাথা গোঁজার ঠাঁইও পায়, নিজেরা রান্না করে ভাত, দেশের মাছ তরিতরকারি দিয়ে। তাদের জীবন সেখানে ঘুম থেকে উঠে কাজে দেঁৗড়ানো, ফিরে এসে রান্না ও খাওয়া, তারপর রাত ১০-১১টা পর্যন্ত মাঠে বা সস্তা রেস্তোরাঁয় বসে সময় কাটানো। সিঙ্গাপুরে মোস্তাফার বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের উল্টোদিকে মসজিদ আছে, বাঙালিদের দোকান আছে, বিকাল সন্ধ্যা সেখানে বাঙালিদের ভিড় হয়ে থাকে। যাদের কাজ নেই, তারা দিনেও সেখানে সময় কাটায়। যেহেতু তাদের জীবনে দেশের নারীসঙ্গ পাওয়ার উপায় নেই (স্বল্পসময়ের শ্রমিকদের পরিবার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই, সেহেতু তাদের অনেকেই সন্ধ্যারাতে 'কষ্টার্জিত' পয়সার বিনিময়ে রমণীসঙ্গ পেতে যায়। জীবন সেখানে পরিবারহীন, তারা নিজেরা একেকটি অল্প কিছু টাকা বানানোর রোবট। জীবন তাদের মানবেতর অবশ্যই। দেশে গ্রামের বাড়িতে কিছু একটা করার সুযোগ থাকলেও হয়তো তারা দ্রুত অনেক পয়সা রোজগারের জন্য বিদেশে এভাবে শ্রম বিক্রির জন্য দৌড়াত। দেশে তাদের শ্রম বিক্রির সুযোগ কই? দেশে যথাযথ মজুরির বিনিময়ে শ্রমবিক্রির সুযোগ থাকলে সেটা পরিহার করে মধ্যপ্রাচ্যে ছুটত কে?
তারা কিন্তু জানে না যে সারা বিশ্বে মানবিক অধিকার বঞ্চিত লাখ লাখ শ্রমিকের মধ্যেও তারা একটি দল; তাদের দেশের সরকার ও ব্যবসায়ী মহল তাদের নিয়ে বাণিজ্য করছে। তাদের প্রতি সরকারি (দূতাবাসসহ) অবহেলা ইচ্ছাকৃত যাতে স্বল্পকালীন শ্রমিক আমদানিকারক দেশগুলো তাদের যাচ্ছেতাইভাবে শোষণ করতে পারে।
এটাও ঠিক যে টগবগে তারুণ্য আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এই শ্রমিক দল বিদেশে কাজের পেছনে দৌড়াচ্ছে, তাতে তারা অসুবিধা, বঞ্চনা ও শোষণকে সাময়িকভাবে পাত্তাই দেয় না। তারা শ্রম বিক্রি করছে হাসিমুখে, কষ্টের কথা তাদের মনে এখনো আসেনি। তাদের রোজগার ও রেমিট্যান্সকে শ্রমার্জিতই বলতে হবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক
সরকার এটাকে শ্রমিক রপ্তানি নাম দিয়েছে, আসলে এটা মানুষ রপ্তানি ছাড়া আর কী? পণ্য রপ্তানিতে রপ্তানির পরও ব্যবসায়ী ও সরকারের কিছু দায়িত্ব থেকে যায়, শ্রমিক রপ্তানিতেও সেরকম কিছু দায়িত্ব থাকার কথা, কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কখনো খুব একটা মনোযোগ দিয়েছে তেমন উদাহরণ আমাদের কাছে নেই। বিদেশে শ্রমরত বাঙালিরা সেখানের দূতাবাসগুলো থেকে খুব একটা সহায়তা পায় না। এই শ্রমবিক্রির রোজগার থেকে 'রেমিট্যান্সের' উদ্ভব হয়েছে, হুন্ডির ব্যবস্থা আছে, দেশ থেকে টাকা পাচারের ব্যবস্থা হয়, আরো কত কী? অনেকে যারা বেশি দিন ধরে বিদেশে কাজ করছেন, তারা দেশে ঘরও তুলেছেন এবং যেহেতু এই কাজটা আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য ছাড়া হয় না, অনেকেই দেশে ফিরে গিয়ে দেখেছেন যে তাদের পয়সায় তোলা ঘর বেহাত হয়ে গেছে। শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের পেছনে অনেক রাজনীতি ও অর্থনীতির খেলা আছে। সেসব বর্ণনা করতে অনেক কিছু লিখতে হবে বিধায় আজকের কলামে বিষয়টা লিখছি না।
শ্রমবাজার বলে অর্থনীতিতে নানা তত্ত্ব আছে, কোনোটাই এমন একটা তত্ত্ব দিতে পারেনি যা সর্বত্র প্রযোজ্য হবে। সে জন্য শ্রমের জোগান বা সরবরাহ এবং শ্রমের দাবি অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ও দাবির নিয়মের মধ্যে পড়ে না। চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক শুরু থেকেই যে মজুরিতে রাজি হয়েছে, সেটা বাড়ানোর সুযোগ খুবই সীমিত। অপরপক্ষে যে কম্পানিতে তার কাজ হয়েছে, সেই কম্পানি চেষ্টা করবে তার লাভ বাড়ানোর জন্য শ্রমিকের পেছনে সবচেয়ে কম খরচ করতে। সাধারণত স্বল্পকালীন ও চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন থাকে না। ফলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সবাইকে প্রতিদিন কাজ না-ও দিতে পারে। তাদের বসিয়ে রেখে তারা একটা 'শিল্পাঙ্গনের রক্ষিত সেনাদল' (ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মি) হাতে রাখে এবং যেহেতু তাদের পেছনে বড় কোনো (বাসস্থান দেওয়া হয়, তা-ও সাধারণত বাসের অযোগ্য) খরচ করতে হয় না, শিল্পপতির লাভ বাড়তেই থাকে।
অনেকে বাংলাদেশের 'মানব সম্পদে'র কথা বলেন। তাঁরা কী অর্থে এটা বলেন, তা বোঝা যায় না। মনে হয় আমাদের বিশাল কর্মহীন জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে তাঁরা দক্ষ বা অদক্ষ সব শ্রমিক মজুর সম্পর্কেই এ কথা বলেন। তাঁরা এর সঙ্গে 'হিউম্যান ক্যাপিটেলে'র কথাও বলে থাকেন। দুটো কিন্তু ভিন্ন বিষয়। 'হিউম্যান ক্যাপিটেল' শব্দটির বাংলা যথাশব্দ হয় মানব পুঁজি, এই কথাটি শ্রমিক মজুর সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। অর্থনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী 'হিউম্যান ক্যাপিটেল' হচ্ছে, যে জ্ঞানের সাহায্যে একটি দেশের উৎপাদন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা যায়। অর্থাৎ একটা দেশের জ্ঞানভাণ্ডার এই 'মানব পুঁজি' সৃষ্টি করে। এটা সম্ভব হয় দেশে পরিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণার পরিবেশ, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দ্বারা। মানবপুঁজিতে বেশি বেশি বিনিয়োগ করলে একটি দেশের প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়, উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্ধন হয় এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণ বাড়ে- এসবের ফলে দেশটির অর্থনৈতিক যোগ্যতা বাড়ে।
আমাদের স্বল্পকালীন বিদেশে গমনকারী শ্রম বিক্রেতারা যে রেমিট্যান্স পাঠান, তার প্রায় সবটাই রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পা-চাটা ব্যবসায়ীরা ডলারে ভোগ করেন। শ্রমিকরা সেই ডলার রোজগার ও দেশে প্রেরণ করেন শুধু কষ্ট করে নয়, শ্রম বিক্রি করে। তারা সেখানে কোনোরকম (সাধারণত জানালা-দরজাবিহীন গোডাউনে বা এক ঘরে ছয়জন করে) মাথা গোঁজার ঠাঁইও পায়, নিজেরা রান্না করে ভাত, দেশের মাছ তরিতরকারি দিয়ে। তাদের জীবন সেখানে ঘুম থেকে উঠে কাজে দেঁৗড়ানো, ফিরে এসে রান্না ও খাওয়া, তারপর রাত ১০-১১টা পর্যন্ত মাঠে বা সস্তা রেস্তোরাঁয় বসে সময় কাটানো। সিঙ্গাপুরে মোস্তাফার বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের উল্টোদিকে মসজিদ আছে, বাঙালিদের দোকান আছে, বিকাল সন্ধ্যা সেখানে বাঙালিদের ভিড় হয়ে থাকে। যাদের কাজ নেই, তারা দিনেও সেখানে সময় কাটায়। যেহেতু তাদের জীবনে দেশের নারীসঙ্গ পাওয়ার উপায় নেই (স্বল্পসময়ের শ্রমিকদের পরিবার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই, সেহেতু তাদের অনেকেই সন্ধ্যারাতে 'কষ্টার্জিত' পয়সার বিনিময়ে রমণীসঙ্গ পেতে যায়। জীবন সেখানে পরিবারহীন, তারা নিজেরা একেকটি অল্প কিছু টাকা বানানোর রোবট। জীবন তাদের মানবেতর অবশ্যই। দেশে গ্রামের বাড়িতে কিছু একটা করার সুযোগ থাকলেও হয়তো তারা দ্রুত অনেক পয়সা রোজগারের জন্য বিদেশে এভাবে শ্রম বিক্রির জন্য দৌড়াত। দেশে তাদের শ্রম বিক্রির সুযোগ কই? দেশে যথাযথ মজুরির বিনিময়ে শ্রমবিক্রির সুযোগ থাকলে সেটা পরিহার করে মধ্যপ্রাচ্যে ছুটত কে?
তারা কিন্তু জানে না যে সারা বিশ্বে মানবিক অধিকার বঞ্চিত লাখ লাখ শ্রমিকের মধ্যেও তারা একটি দল; তাদের দেশের সরকার ও ব্যবসায়ী মহল তাদের নিয়ে বাণিজ্য করছে। তাদের প্রতি সরকারি (দূতাবাসসহ) অবহেলা ইচ্ছাকৃত যাতে স্বল্পকালীন শ্রমিক আমদানিকারক দেশগুলো তাদের যাচ্ছেতাইভাবে শোষণ করতে পারে।
এটাও ঠিক যে টগবগে তারুণ্য আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এই শ্রমিক দল বিদেশে কাজের পেছনে দৌড়াচ্ছে, তাতে তারা অসুবিধা, বঞ্চনা ও শোষণকে সাময়িকভাবে পাত্তাই দেয় না। তারা শ্রম বিক্রি করছে হাসিমুখে, কষ্টের কথা তাদের মনে এখনো আসেনি। তাদের রোজগার ও রেমিট্যান্সকে শ্রমার্জিতই বলতে হবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক
No comments