হলমার্ক কেলেঙ্কারি: ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব নিয়ে চিন্তিত এফবিসিসিআই -ফৌজদারি মামলার নির্দেশ
চারদিক থেকে অব্যাহত চাপ আসার পর অবশেষে হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে বলেছে সরকার। পাশাপাশি যেসব ক্ষেত্রে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেসব ক্ষেত্রে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে সোনালী ব্যাংককে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত রোববার সন্ধ্যায় এই নির্দেশ দিয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রদীপ কুমার দত্তকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
এদিকে, সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি সব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায় সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের নেই।
মামলা করতে চিঠি: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং এ জালিয়াতির সঙ্গে যাঁরাই জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিশেষ করে হলমার্ক গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হুমায়ুন কবীরসহ যাঁদের সম্পর্কে গভীর সন্দেহ রয়েছে, তাঁদের ব্যাপারেও সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ মেনে নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নির্দেশ দিয়েছে।
সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানি, যুক্তরাজ্যের বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে গতকাল রোববার যুক্তরাজ্যে গেছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ও সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্ত। কাল বুধবার তাঁদের দেশে ফেরার কথা। এ জন্য তাঁদের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে, মন্ত্রণালয়ের চিঠি রোববারই সোনালী ব্যাংক পেয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি হলো হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা। তারা যাতে পালাতে না পারে।’
এফবিসিসিআইয়ের সংবাদ সম্মেলন: রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ। হলমার্কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে এর বিরূপ প্রভাব নিয়েই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন হোটেল শাখা) মোট তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাৎ করেছে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে এ কে আজাদ বলেন, ‘আমরা অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত হলমার্ক কর্মকর্তা ও সোনালী ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা আমাদের হতাশ করেছে। এ ধরনের লোকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সমাজে এমন আরও লোকের সৃষ্টি হবে।’
হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের বিষয়ে এ কে আজাদ বলেন, তিনি একসঙ্গে অনেকগুলো অপরাধ করেছেন। যেমন, যে পরিমাণ সম্পদ তিনি দেখিয়েছেন, সেই পরিমাণ সম্পদ তাঁর নেই। তিনি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়েছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় জালিয়াতির মামলা হতে পারে। এ ছাড়া তিনি ব্যাংকের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আজাদ বলেন, ‘হলমার্কের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করলে যদি তাঁরা বিদেশে চলে যান, তাহলে আপনি কী করবেন? তাঁদের আগে আটকাতে হবে। তাঁদের কাছ থেকে জবানবন্দি নিয়ে তারপর টাকা আদায় করতে হবে।’
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘বহিষ্কার যথেষ্ট নয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাও এমন অনিয়ম করতে উৎসাহ পাবেন।’
এ কে আজাদ বলেন, ‘২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের হেড অফিসকে (প্রধান কার্যালয়) জানিয়েছিল। আরও কিছু তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছিল। এসব অনিয়ম ধরা সত্ত্বেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এ ধরনের অনিয়ম আরও বেড়েছে। ব্যাংক খাতের আরও ২৭টি প্রতিষ্ঠান এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে জনাব আজাদ বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে দেখেছি। হলমার্ক-সম্পর্কিত কোনো নথি পরিচালনা পর্ষদে ওঠেনি। এগুলো ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মধ্যেই ছিল। তাই আমরা সরাসরি পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করছি না। তার পরও তদন্তে যদি পরিচালনা পর্ষদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
এ কে আজাদ বলেন, সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এ অব্যবস্থাপনার কারণে প্রকৃত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। এটা সার্বিক উৎপাদনব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, স্থানীয় স্বীকৃত বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও স্থানীয় ব্যাংকগুলো অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা মূলধন আটকা পড়ে আছে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব: ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। যেমন, সব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত করা; অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িতদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আয়কর নথি যাচাই করে সব তথ্য প্রকাশ ও ব্যবস্থা নেওয়া; বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণদান কার্যক্রম নিরীক্ষা; বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার, নিরীক্ষা ও পরিদর্শক দলকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া; রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা বেসরকারীকরণ করা; আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ঋণের সুদের হার হ্রাস।
এদিকে, সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি সব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায় সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের নেই।
মামলা করতে চিঠি: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং এ জালিয়াতির সঙ্গে যাঁরাই জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিশেষ করে হলমার্ক গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হুমায়ুন কবীরসহ যাঁদের সম্পর্কে গভীর সন্দেহ রয়েছে, তাঁদের ব্যাপারেও সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ মেনে নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নির্দেশ দিয়েছে।
সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানি, যুক্তরাজ্যের বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে গতকাল রোববার যুক্তরাজ্যে গেছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ও সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্ত। কাল বুধবার তাঁদের দেশে ফেরার কথা। এ জন্য তাঁদের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে, মন্ত্রণালয়ের চিঠি রোববারই সোনালী ব্যাংক পেয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি হলো হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা। তারা যাতে পালাতে না পারে।’
এফবিসিসিআইয়ের সংবাদ সম্মেলন: রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ। হলমার্কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে এর বিরূপ প্রভাব নিয়েই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন হোটেল শাখা) মোট তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাৎ করেছে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে এ কে আজাদ বলেন, ‘আমরা অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত হলমার্ক কর্মকর্তা ও সোনালী ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা আমাদের হতাশ করেছে। এ ধরনের লোকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সমাজে এমন আরও লোকের সৃষ্টি হবে।’
হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের বিষয়ে এ কে আজাদ বলেন, তিনি একসঙ্গে অনেকগুলো অপরাধ করেছেন। যেমন, যে পরিমাণ সম্পদ তিনি দেখিয়েছেন, সেই পরিমাণ সম্পদ তাঁর নেই। তিনি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়েছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় জালিয়াতির মামলা হতে পারে। এ ছাড়া তিনি ব্যাংকের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ কে আজাদ বলেন, ‘হলমার্কের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করলে যদি তাঁরা বিদেশে চলে যান, তাহলে আপনি কী করবেন? তাঁদের আগে আটকাতে হবে। তাঁদের কাছ থেকে জবানবন্দি নিয়ে তারপর টাকা আদায় করতে হবে।’
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘বহিষ্কার যথেষ্ট নয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাও এমন অনিয়ম করতে উৎসাহ পাবেন।’
এ কে আজাদ বলেন, ‘২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের হেড অফিসকে (প্রধান কার্যালয়) জানিয়েছিল। আরও কিছু তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছিল। এসব অনিয়ম ধরা সত্ত্বেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এ ধরনের অনিয়ম আরও বেড়েছে। ব্যাংক খাতের আরও ২৭টি প্রতিষ্ঠান এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে জনাব আজাদ বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে দেখেছি। হলমার্ক-সম্পর্কিত কোনো নথি পরিচালনা পর্ষদে ওঠেনি। এগুলো ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মধ্যেই ছিল। তাই আমরা সরাসরি পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করছি না। তার পরও তদন্তে যদি পরিচালনা পর্ষদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
এ কে আজাদ বলেন, সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এ অব্যবস্থাপনার কারণে প্রকৃত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। এটা সার্বিক উৎপাদনব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, স্থানীয় স্বীকৃত বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও স্থানীয় ব্যাংকগুলো অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা মূলধন আটকা পড়ে আছে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব: ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। যেমন, সব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত করা; অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িতদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আয়কর নথি যাচাই করে সব তথ্য প্রকাশ ও ব্যবস্থা নেওয়া; বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণদান কার্যক্রম নিরীক্ষা; বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার, নিরীক্ষা ও পরিদর্শক দলকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া; রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা বেসরকারীকরণ করা; আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ঋণের সুদের হার হ্রাস।
No comments