খাদ্যে ভেজাল ও আমাদের গড় আয়ু by ড. মো. গিয়াস উদ্দিন

ভেজাল আমাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তেল, মসলা, লবণ, মুড়ি, চিনি, মাছ, দুধ, ফলমূল, সবজি, গুঁড়াদুধ, কেশতেল, কসমেটিকস_সর্বত্রই ভেজাল। ফলের জুস, কোমল পানীয়_এসবের বেশির ভাগই কৃত্রিম কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফল প্রথমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়, পরে ফরমালিন দিয়ে প্রিজারভ করা হয়।


দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অসাধু ব্যবসায়ীরা খাবারের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিরিয়ানি, জিলাপি, জুস, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারে সস্তা দামের টেঙ্টাইল গ্রেড রং ব্যবহার করে থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। খাবারে কৃত্রিম রং এবং জুসে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এমনকি আমাদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধও ভেজাল থেকে শতভাগ মুক্ত নয়। প্রায়ই নকল ও নিম্নমানের ওষুধ ও খাবার স্যালাইন সম্পর্কিত প্রতিবেদন পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ হাজার চেষ্টা করেও আপনি শত ভাগ ভেজালমুক্ত জীবন এখানে পাবেন না। এর কারণ বহুবিধ। নাগরিক সচেতনতাই মূল বিষয় নয়। হীন ব্যবসায়িক স্বার্থ, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সিন্ডিকেট ব্যবসা, দুর্নীতি, সততার অভাব_এ সবই গ্রাস করেছে আমাদের। সরকারের একার পক্ষে এটি সম্ভব না হলেও মূল শক্ত ভূমিকাটি সরকারকেই নিতে হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজন সমন্বিত নাগরিক উদ্যোগ। ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ভেজালের সবচেয়ে বড় শিকার আমাদের ভোজ্য তেল, যার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। মাছ-মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি, কাবাব, চিকেন ফ্রাই, ডাল, তরিতরকারি, শাকসবজি, কেক, বিস্কুট, পরোটা, হালুয়া_সব কিছুতেই প্রয়োজন তেল। সবচেয়ে বেশি তেল ব্যবহৃত হয় হোটেল-রেস্তোরাঁয় আর ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোতে। নানা বাহারি স্বাদের ভাজাপোড়া আইটেম তৈরি হয় সেখানে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আজ এসব মুখরোচক খাবারের প্রতি অন্ধ। যুবসমাজের আনাগোনাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেখানে। রমজান মাসে ইফতারিতে চলে ভূরি ভূরি তেলে ভাজা আইটেম। আর অবলীলায় এসব খাবার থেকে নিজের অজান্তেই আমাদের শরীরে ঢুকছে জটিল রোগ সৃষ্টিকারী নানা উপকরণ। ভেজালযুক্ত এবং ব্যবহৃত পুরনো তেল ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত হওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক আর ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা তো থাকছেই। তাই ভোজ্যতেলের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন সর্বাগ্রে। এ প্রসঙ্গে জাপানের অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই।
জাপানিরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুবই সচেতন। তাদের আহার গ্রহণ পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। জাপানি মহিলাদের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি (৮৫.৯০ বছর, ২০১১)। অবশ্য সম্প্রতি হংকং ২৬ বছর ধরে শীর্ষে থাকা জাপানকে পেছনে ফেলে তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসে। হংকংয়ে মহিলাদের বর্তমান গড় আয়ু ৮৬.৭০ বছর। গড় আয়ুতে জাপানি নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন জাপানের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও সুনামিকে (১১ মার্চ ২০১১) অন্যতম কারণ বলে (জাপান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১১)। জাপানিরা খাবারে তেলের ব্যবহার তেমন একটা করে না। আর করলেও তারা কিচেন টিস্যু ব্যবহার করে তেল যাতে না থাকে সেদিকটা খেয়াল রাখে। পুরনো ব্যবহৃত তেল তারা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করে না। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলি; জাপানে থাকাকালে আমরা একটা ফুড ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করি। ফেস্টিভ্যালের আগে ছিল আমাদের বাঙালি রান্না শেখানোর পর্ব যেখানে বিভিন্ন দেশের ২৫ জন আগ্রহী অংশগ্রহণ করে। আমাদের তৈরি করা ঐতিহ্যবাহী চিকেন বিরিয়ানি এবং পেঁয়াজু পরিবেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো সিটি হলে। সেখানে বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশ আমেরিকা, আর্জেন্টিনা, ইতালি, থাইল্যান্ড, চীন তাদের দেশীয় খাবার পরিবেশন করে। উল্লেখ্য, প্রতিবছর শীত মৌসুমে সিটি অফিস এই বহুজাতিক খাদ্য মেলার আয়োজন করে থাকে। তবে কিরিও শহরে গত ১৫ বছরে এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ। আমাদের স্টলে আমাদের প্রিয় পতাকার পাশে প্রিয় মাতৃভূমির নাম খচিত। গর্বে আর আনন্দে বুকটা ভরে গেল। যে কথা বলা উদ্দেশ্য তা হলো_জাপানে রান্না শেষে ব্যবহৃত তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহৃত তেল শক্ত করার জন্য এর মধ্যে এক রকম পাউডার জাতীয় কেমিক্যাল দেওয়া হলো। জাপানি ভাষায় এর নাম কাতামিরু টেনপুরু। আর সঙ্গে সঙ্গে পুরো তেলটা শক্ত চাকা হয়ে ফ্রাইপ্যানের আকার ধারণ করল দেখতে ঠিক যেন একটা প্যান কেক অথবা বিশাল আকৃতির চিতই পিঠা (ছবিতে যেমন দেখাচ্ছে)। সঙ্গে সঙ্গে উঠিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হলো। ব্যাপারটা দেখে খুব অবাক হলাম আর ভাবলাম আমার দেশে এই সংস্কৃতি কবে গড়ে উঠবে!। কাতামিরু টেনপুরু রাসায়নিকভাবে এক ধরনের পলিমার অ্যাডজরবেন্ট যা তেলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তেলের ভিস্কোসিটি বাড়িয়ে দেয় এবং কঠিন পদার্থে পরিণত করে। জাপানে মূলত দুটি কারণে তেল সলিডিফাই করা হয়। প্রথমত যেন পুনরায় কেউ ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য আর দ্বিতীয় কারণ হলো তরল অবস্থায় তেল কিচেন সিংক অথবা ড্রেনে ফেললে তা পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।
ভোজ্য তেলে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাটস এবং ভিটামিন কে-১ থাকে (সয়াবিন : ২১০ মাইক্রোগ্রাম/১০০ গ্রাম; ক্যানুলা : ১২০ মাইক্রোগ্রা/১০০ গ্রাম)। প্রাকৃতিকভাবে আমাদের দেহের ভেতরে ভিটামিন কে-১ শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন কে-২ এ কনভার্ট হয়। তরল তেলে প্রচুর অসম্পৃক্ত ফ্যাটস থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো; কিন্তু তরল তেল সহজেই পচনশীল (রানসিড)। পচনের হাত থেকে রক্ষা এবং স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য তেলের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে হাইড্রোজেন যুক্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়ার রাসায়নিক নাম Hydrogenation অথবা Hardening of Oils । হাইড্রোজেন যুক্তকরণের ফলে তেলের স্থায়িত্ব বাড়ে ঠিকই, তবে প্রচুর ট্রান্স ফ্যাটস তৈরি হয় এবং ভিটামিন কে-১ ডাইহাইড্রো-ভিটামিন কে-১-এ রূপান্তরিত হয়, যা প্রাণীদেহে কে-২ ফর্মে যেতে পারে না। ফলে স্ট্রোক, রক্তক্ষরণ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। [সূত্র : রিভিও জার্নাল, লিপিডস (২০০৭) ৪২; ৮২১-২৫] আগেই বলেছি, ভেজাল তেল শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তেলে ওমেগা-৬ নামে এক রকম অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে, যা ক্যান্সার সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া তেলে বিদ্যমান কোলেস্টেরল রক্তনালির ভেতরে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, যার অবশ্যম্ভাবী পরিণাম উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ইত্যাদি। তেলের সঙ্গে ডায়াবেটিসের রয়েছে নিবিড় যোগসূত্র। তেল একটি ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার। অধিক হারে তেল, ঘি, বাটার, পনির, মার্গারিন, ইত্যাদি খেলে ক্রমেই শরীর মোটা ও ভারী হতে থাকে। শরীরের কর্মক্ষমতা কমে যায়, অলসতা বাড়ে। এ অবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম না করলে শর্করা জাতীয় খাবার (ভাত, রুটি ইত্যাদি) ঠিকমতো বিপাক (মেটাবলিজম) হয় না এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন না করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যার পরিণাম অকাল মৃত্যু।
শুধু ভেজাল থেকে বাঁচলেই হবে না, খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের রয়েছে ব্যাপক সম্পর্ক। আমরা তিন বেলা খাবার খাই এবং একসঙ্গে অনেক খাবার খেয়ে থাকি। অনেক রাত করে ডিনার খাই এবং হাঁটাহাঁটি না করেই শুয়ে পড়ি, যা শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। জাপানিদের সুস্থতা এবং দীর্ঘ আয়ুর অন্যতম কারণ তাদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস। তারা প্রতি বেলায় আতপ চালের মাড়যুক্ত ছোট এক পেয়ালা নরম ভাত, সঙ্গে এক টুকরো মাছ ফ্রাই, সবজি সিদ্ধ কিংবা কাঁচা সবজি আর এর সঙ্গে কোনো না কোনো স্যুপ, যেমন_তফুস্যুপ, মিসুস্যুপ অথবা সবজি স্যুপ থাকবেই। উচ্চ তাপে মাছ ও মাংস রান্না করলে হেটেরোসাইক্লিক এমিন নামের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এক রকম উপাদান তৈরি হয়। এ কারণেই জাপানিরা মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি কাঁচা কিংবা আধা সিদ্ধই খেয়ে থাকে বেশি। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে তারা রাতের খাবার শেষ করে ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে যায় আর ওদিকে সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে সাম্পো (হাঁটাহাঁটি) করতে বেরিয়ে যায়। আরলি টু বেড অ্যান্ড আরলি টু রাইস; মেকস এ ম্যান হেলদি, ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ এ চিরসত্য তারা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। আর এ কারণেই হয়তো তারা দীর্ঘায়ু এবং জীবনে এত সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধি লাভ করে।
আমাদের দেশের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। হোটেল-রেস্তোরাঁ সম্পর্কে একটি অপবাদ আমাদের সমাজে প্রায় সবাই জানে। হোটেলের কড়াইয়ের তেল কখনো নতুন হয় না। শুধু রিসাইকেল হতে থাকে। জাপানের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। পুরনো তেল ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না। সুপার মার্কেট এবং কনভেনিয়েন্ট স্টোরগুলোতে দেখা যায়, খাবার একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তৈরি করা হয় এবং সময় পার হয়ে যাওয়া খাবারগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়, বিক্রি করা হয় না। পচা-বাসি, পুরনো খাবার, ফলফলাদি, সবজি ইত্যাদি ক্রেতার চক্ষুর অগোচরে বিক্রি করে ফেলা আমাদের দেশের দোকানিদের প্রবণতা। খোদ মুসলিম ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এমনটি দেখা যায়, যা মুসলমান জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। অমুসলিম দেশ হলেও এ ক্ষেত্রে জাপানে দেখেছি শতভাগ সততা।
বিশ্বের জনগোষ্ঠীর বর্তমান গড় আয়ু ৬৭.২ (পুরুষ ৬৫.০; মহিলা ৬৯.৫; জাতিসংঘ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টাস ২০০৬ রিভিশন (২০০৫-২০১০)। আমাদের গড় আয়ু উন্নত বিশ্বের তুলনায় খুবই কম। ইউএনডিপি ২০১১ প্রতিবেদন অনুসারে আমাদের গড় আয়ু ৬৮.৯ বছর। আর জাতিসংঘ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টাস ২০০৬ রিভিশন (২০০৫-২০১০) অনুসারে এ চিত্র আরো কম, ৬৪.১। ভেজাল খাদ্য এর একমাত্র কারণ না হলেও ভেজাল নির্মূল করা সম্ভব হলে আমাদের আয়ুষ্কাল আরো বাড়বে_এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
শুধু আইন দিয়ে হবে না। ভেজালের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করার সময় এসে গেছে। কার্যকর কিছু একটা করতে হবে এখনই, অন্তত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে। কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন_
প্রথমত, ভেজাল নির্মূলের আগে প্রয়োজন দেশ থেকে দুর্নীতির মূল উৎপাটন। ভেজালের উৎপত্তি সেখান থেকেই। বিশুদ্ধ খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বিষয়ে সরকার, উৎপাদনকারী এবং বিক্রেতাদের সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ১৯৫৯ সালে প্রণীত পিওর ফুড অ্যাক্ট এবং পরবর্তী সময় ২০০৫ সালে সামান্য পরিবর্তন করা এই আইনের আধুনিকায়ন করতে হবে। তিন লাখ টাকা জরিমানা ও তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান ভেজাল প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।
তৃতীয়ত, আমেরিকার FDA (Food and Drug Administration)-এর আদলে পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও জনবল দিয়ে আমাদের ওষুধ প্রশাসন (Directorate General of Drug Administration)-কে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Food and Drug Administration, BFDA)-এ উন্নীত করা যেতে পারে। এ সংস্থাটির লোকবলের সংখ্যা ও বর্তমান ল্যাবরেটরির দক্ষতা বৃদ্ধি করলেই খাবারের ভেজাল প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বিধান থাকতে হবে। BSTI (Bangladesh Standards and Testing Institute)-এর ওপর ভরসা না করে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পিওর ফুড কমিশনও গঠন করা যেতে পারে। এ কমিশনের অধীনে উন্নত ল্যাবরেটরি ও প্রয়োজনীয় লোকবলের ব্যবস্থা করলেই ভেজাল প্রতিরোধ করা সম্ভব। ভেজাল নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি আজও। ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজন কঠোর আইন এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ। প্রয়োজন একটি বড় ধরনের জনবিপ্লব, যেখানে থাকবে সরকারের শত ভাগ আন্তরিকতা ও সহযোগিতা। অবস্থাভেদে ভেজাল মিশ্রণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা যেতে পারে। নিছক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্যে কিংবা ওষুধে বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তাদের বাঁচার অধিকার থাকতে পারে না।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক
ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.