তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ছাড়ায় বাংলাদেশের উদ্বেগ বাড়লো
পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে: গত কয়েক মাসে একাধিকবার বাংলাদেশের মন্ত্রী ও বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদদের ভারতে আসা-যাওয়া এবং আগামী দিনে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার দিল্লি সফরে আসার সম্ভাবনা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সবাই। আর সেই সম্পর্কেই প্রবল আঘাত লাগার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারতে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে ভিন্ন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে, সেটা সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্কও অনেকটাই প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু ভারতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তার ফলে বাংলাদেশের নেতাদেরই কপালে সবচেয়ে বেশি ভাঁজ পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউপিএ জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব চুক্তি নিয়ে আশ্বাসের পর আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের নেতৃবৃন্দ তার সলিলসমাধি একরকম নিশ্চিত। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভিকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রবলভাবে আশ্বস্ত করেছিল ভারত। তিস্তার চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবল আপত্তি করাতেই সেটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় হতে পারেনি। মমতা অবশ্য নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু কল্যাণ রুদ্র প্রায় ছয় মাস হতে চললো, সেই রিপোর্ট এখনও চূড়ান্ত করতে পারেননি। ফলে মমতা তিস্তা নিয়ে এতদিন চুপ করেছিলেন। সীমান্ত চুক্তি নিয়েও মমতা প্রথম দিকে আপত্তি করলেও পরে খানিকটা নমনীয় মনোভাব নিয়েছিলেন বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার আশা কম বলেই মনে করেন কলকাতার একটি সরকারি কলেজের রাষ্ট্রনীতির এক অধ্যাপক। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পর মমতার দায়বদ্ধতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে তার যে প্রবল আগ্রহ ছিল, তাতে ভাটার টান দেখা গিয়েছে। আর তাই কলকাতায় প্রায় ৫ মাস আগে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপদূত আবিদা ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার সময় পাননি। অবশ্য উপদূত দাবি করেছেন, নানা অনুষ্ঠানে মমতার সঙ্গে দেখা হলে তিনি ভালভাবেই সৌজন্য বিনিময় করেন। এমনকি সময় পেলেই তাকে ডেকে নেবেন বলে মমতাও তাকে বলে থাকেন। তবে আনুষ্ঠানিকতার সেই ডাক এত দিনেও আসেনি। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে আসার ফলে ইউপিএর স্থায়িত্বের যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে মনোযোগ দেয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ রাজনৈতিক মহল। ইউপিএ সরকার এখন যেভাবে সংখ্যালঘু সরকারে পরিণত হয়েছে, সেখানে কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রধান কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে তাকে স্থায়িত্ব দিতে সমর্থনকারী দলগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করা। ইতিমধ্যেই সেই কাজটি শুরু হয়ে গেছে। আবার সরকার ছাড়ার হুমকি এখনও রয়ে গেছে। শিবু সোরেনের ঝাড়খণ্ড পার্টি ছোট দল হলেও তারাও সরকার থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে। এ অবস্থায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে গভীর মনোযোগ দেয়ার অবস্থায় নেই ইউপিএ সরকারের নেতৃস্থানীয়রা। আর সেটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভারত সফরে এসে নিশ্চিতভাবেই টের পেয়ে যাবেন।
No comments