চরাচর-বিশ্ব শান্তি দিবস by মাহবুব জামান
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ মিশন হচ্ছে শান্তি অন্বেষণ। একটি যুদ্ধহীন বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৮১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত ৩৬/৬৭ নম্বর প্রস্তাবে প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরের তৃতীয় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ শুরু হওয়ায় এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এরপর ২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৫৫/২৮২ নম্বর প্রস্তাবে ২০০২ সাল থেকে প্রতিবছরের ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসকে বিশ্বের যুদ্ধবিরতি ও অহিংসা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব দেশ ও জনগণকে এই দিনে বৈরিতা বন্ধ রাখার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সব সদস্য দেশ, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আঞ্চলিক সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তির কাছ থেকে শিক্ষা ও গণ-প্রচারসহ বিভিন্ন উপযুক্ত উপায়ে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উদ্যাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে। যাতে করে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করে বিশ্বের যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা যায়। বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষায় বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধে পর্যবেক্ষক পাঠানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা শুরু করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫টি দেশের ৩০টি শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর ৮৯ হাজার ৫৬৭ জন সদস্য সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ মুহূর্তেও বিভিন্ন শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় ১০ হাজারের মতো সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বশান্তি রক্ষায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় শহীদ হয়েছেন ৮৮ জন বাংলাদেশি সেনা। আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস প্রবর্তিত হওয়ার পর জাতিসংঘ প্রতিবছর এ দিনটিতে শান্তির ঘণ্টা বাজিয়ে শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও মানবপ্রেমীদের শান্তিদূত হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানাবে। এর পাশাপাশি বিশ্বের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, লোকসমাজ এবং ধর্মীয় গ্রুপ ও বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করে এই দিবস উদ্যাপন করবে। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস সম্পর্ক বিশ্ব দুই হাজারেরও বেশি সংস্থার সমর্থন পেয়ে এসেছে। জাতিসংঘের লক্ষ্য হলো, আন্তর্জাতিক শান্তি আর স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, বিভিন্ন দেশের জনগণের সমান অধিকার আর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বন্ধু-সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক আর মানবতাবাদী সমস্যা সমাধান করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালানো এবং গোটা মানবজাতির মানবাধিকার আর মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ত্বরান্বিত করা। বহু বছর ধরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও বিশ্বের শান্তি বাস্তবায়নের জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু যুদ্ধ, সন্ত্রাসী হামলা, আঞ্চলিক সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ধরনের বল প্রয়োগমূলক সংঘর্ষও রয়েছে। মানবজাতির সত্যিকার শান্তি বাস্তবায়নের পথ এখনো অনেক দূর।
No comments