ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: পাবনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবদুস সুবহানকে গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) লোকজন বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা থেকে গতকাল সকালে আটক করেছে। এর ৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর পাবনা সদর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় সোপর্দ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. ইউনুছ আলী মিয়া জানান, ২০০৩ সালে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের একটি মামলায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। গতকাল ভোরে মাওলানা আবদুস সোবহান ঢাকা থেকে পাবনা যাচ্ছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টোলপ্লাজায় অবস্থান নেয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই) লোকজন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাকে বহনকারী খয়েরি কালারের প্রাডো ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-০১৬৩ গাড়িটি বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টোলপ্লাজায় পৌঁছলে তার গতিরোধ করে এবং গাড়িসহ তাকে টোলপ্লাজার দক্ষিণে লিংক রোডে নিয়ে রাখা হয়। এসময় মাওলানা আবদুস সোবহান ছাড়াও গাড়িতে ছিলেন তার চতুর্থ ছেলে মিশন গ্রুপের পরিচালক নেসার আহম্মেদ নান্নু, ছোট ছেলে মুজাহিদ ও গাড়িচালক।
এদিকে সকাল সাড়ে ৮টায় মাওলানা আবদুস সোবহানকে সেতু পূর্ব টোলপ্লাজা থেকে আটক করা হলেও তাকে বেলা ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত টোলপ্লাজার দক্ষিণ লিংক রোডে গাড়িতে বসিয়ে রাখা হয়। এসময় ওই গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা তার নিরাপত্তা দেন। মাওলানা আবদুস সোবহান ও তার দুই ছেলে সেতু পূর্ব টোলপ্লাজায় জোহরের নামাজ আদায় করেন। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে ও তার দুই ছেলেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় সোপর্দ করে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা থেকে তার ছোট ছেলে মুজাহিদসহ তাকে বহনকারী গাড়িটি ছেড়ে দিলে তারা ঢাকার দিকে চলে যান। মাওলানা আবদুস সোবহান ও তার ছেলে নেসার আহম্মেদ নান্নুকে ২ ঘণ্টা থানায় রাখা হয়। পরে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা পুলিশের দু’টি পিকআপ ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে মাওলানা আবদুস সোবহান ও তার ছেলেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড়ে পাবনা সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পাবনায় পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষ: আহত ২০
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে জানান, পাবনায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশ-সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ শিবিরকর্মীসহ ১০ জনকে আটক করে। জামায়াতের নায়েবে আমীর পাবনা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা আবদুস সুবহানকে আটকের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল ঢাকা থেকে পাবনা আসার পথে যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে মাওলানা আবদুস সুবহানকে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে। পরে তাকে কালিহাতী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই আটকের খবর পাবনায় ছড়িয়ে পড়লে বেলা ২টার দিকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের দইবাজার মোড়ে পথসভার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় জামায়াত কর্মীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করলে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা দই বাজারস্থ জেলা জামায়াতের কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়। পরে সংগঠিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তের মধ্যে সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই আনোয়ার হোসেন ও দুই কনস্টেবল, সময় টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন, দিগন্ত টিভির পাবনা প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিকের বার্তা সম্পাদক ও পথচারীসহ ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে পুলিশের এসআই আনোয়ার হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে ঘটনার সময় পুলিশ শিবির ক্যাডার একরাম হোসেনসহ কয়েকজন জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে পুলিশের পক্ষে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
No comments