মমতার সম্মতি ছাড়া চুক্তি করা হবে ভারত সরকারের জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যা



মানবজমিন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি ব্যতিরেকেই তিস্তাচুক্তির দিকে এগোতে পারে। কিন্তু তেমন পদক্ষেপকে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে সরকার তাদের চলমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এমন পথে ধাবিত করবে বলে তেমন ইঙ্গিত মিলছে না। গতকাল অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত ‘দিদিস পুলআউট ডিলস ব্লো টু ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ টাইস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এর লেখক ইন্দ্রাণী বাগচী। এতে তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের টানাপড়েনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সরাসরি আঘাত লাগবে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক কার্যক্রমের বাইরে বাংলাদেশের সঙ্গে দু’টি বড় পদক্ষেপ- তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে বড় ধরনের আঘাত লাগতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে এ চুক্তি নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল। তখন মমতা বলেছেন, এ চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। তাই তিনি ওই চুক্তিতে সম্মতি দেননি। বলাবলি আছে যে, তাকে এড়িয়েই ওই সমঝোতা করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ চুক্তিটি যাচাই বাছাই করতে কল্যাণ ভদ্রকে নিয়ে এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কিন্তু ওই কমিটি এখনও রিপোর্ট দেয়নি। তবে এ চুক্তি হতে রাজনৈতিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বীকৃতি জরুরি। কিন্তু তাকে রাজি না করিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ চুক্তি করলে তা হবে তাদের রাজনৈতিক আত্মহত্যা। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে তিস্তাচুক্তি অত বড় সমস্যা নয়। বাংলাদেশ এ নদীর পানি এমনিতেই অধিক পরিমাণে পাচ্ছে। তা বন্ধ করা হয়নি। তবে এই চুক্তিকে নয়া দিল্লির সঙ্গে পরিবর্তিত সম্পর্কের একটি প্রতীক হিসেবে দেখেন বাংলাদেশের নেতারা। সমপ্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশা বিপুল। আমি মনে করি ভারত যদি ওই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারে তাহলে আমাদের সম্পর্কে তাতে বড় ধরনের আঘাত লাগবে। আমি নিশ্চিত নই যে, আমাদের সম্পর্ক তা বহন করতে পারবে কিনা। ওদিকে সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থতাও ভারতের একটি বড় সমস্যা। এ নিয়ে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে যে চুক্তি হয় তা ছিল ঐতিহাসিক। এতে প্রথমবারের মতো, ছিটমহল ও অপদখলীয় সম্পত্তি নিয়ে সমস্যার সমাধান ছিল তাতে। ইউপিএ সরকার সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাতে নতুন সীমান্তরেখা আনুষ্ঠানিকতা পাবে। গত তিনটি অধিবেশনে ইউপিএ সরকার এ বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলতে পারে নি। বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর আগে, প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত বিলটি পাস হওয়া নিয়ে অধিক আস্থাশীল ছিলেন। তিনি সংশোধনীর বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেন। পার্লামেন্টের বর্তমান সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোট প্রয়োজন এ সংশোধনী পাস করাতে। এ সংশোধনী রাজ্যসভাগুলোতেও অনুমোদিত হতে হবে। সীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে বেরুবাড়ী রায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যে, এতে রাজ্যগুলোর সমর্থন জরুরি না-ও হতে পারে। সীমান্ত চুক্তি পাস করানোতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই বাধা নন, একই রকম অবস্থা প্রধান বিরোধী দল বিজেপিরও। ফলে এখন একা হয়ে পড়া সরকারের পক্ষে এ ধরনের চুক্তি করা বেশ কঠিন।

No comments

Powered by Blogger.