গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়লো, সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর
স্টাফ রিপোর্টার: আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল দাম বাড়ানোর এ ঘোষণা দেয়া হলেও বর্ধিত এই দাম কার্যকর হবে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে এনিয়ে সপ্তমবারের মতো দাম বাড়ানো হলো। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম ১৫ শতাংশ এবং পাইকারি পর্যায়ে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এ ঘোষণা দেন বিইআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পাইকারি দাম বাড়ানোর আবেদনের প্রেক্ষিতে গণশুনানি করে বিইআরসি দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিলেও খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছে গণশুনানি ছাড়াই। দাম বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটে গড় খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। পাইকারি দাম ৪ টাকা দুই পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়ালো ৪ টাকা ৭০ পয়সা। বিদ্যুৎ বিলের ভোগান্তি কমাতে দাম বাড়ানোর সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলের ছয়টি স্লাব নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড) ইউনিটপ্রতি তিন টাকা ৬৬ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার ক্ষেত্রে তিন টাকা ৩৩ পয়সা। দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত আরইবি’র ক্ষেত্রে দাম পড়বে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা, অন্যান্য সংস্থায় পড়বে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। তৃতীয় ধাপে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে আরইবিতে ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে ৪ টাকা ৫১ পয়সা, অন্য সব সংস্থায় ৪ টাকা ৮৩ পয়সা। চতুর্থ ধাপে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে আরইবিতে দাম পড়বে ৭ টাকা ১০ পয়সা, অন্য সংস্থার ক্ষেত্রে ৪ টাকা ৯৩ পয়সা। পঞ্চম ধাপে ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের আরইবি’র ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৪০ পয়সা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা করে দিতে হবে। ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের আরইবিসহ সব সংস্থায় গড়ে দাম পড়বে ৯ টাকা ৩৮ পয়সা। সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি’র চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ছয় টাকা তিন পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা তা প্রায় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে চার টাকা দুই পয়সা থেকে চার টাকা ৭০ পয়সা করেছি। পাইকারিতে ১৭ শতাংশ বৃদ্ধির পরও চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩৮৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি’র সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক, ড. সেলিম মাহমুদ ও মো. দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। গত জুন মাসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫০ শতাংশ এবং বিতরণকারী সংস্থাগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ৫৬ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। এসব প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৬ই জুলাই শুধু পাইকারি দাম বৃদ্ধির বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিইআরসি’র মূল্যায়ন কমিটি গণশুনানিতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ২২ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। আগের দামে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৫ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং ৪০০-এর বেশি ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে বিল আদায় করা হচ্ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সব সংস্থার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয় গড়ে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। তৃতীয় দফায় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ায় বিইআরসি। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে চতুর্থ দফায় ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, পঞ্চম দফায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সর্বশেষ ষষ্ঠ দফায় ১লা মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ খুচরা দাম বাড়ানো হয়।
No comments