খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ by সাইফুর রহমান

অতি জোয়ারে যখন চারদিক প্লাবিত হচ্ছে, তখনো বরিশাল নগরের লাকুটিয়া খালে পানিপ্রবাহ নেই। খালের বিভিন্ন অংশে কমপক্ষে ২০ স্থানে বাঁশের বেড়া (গড়া) ও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় জোয়ার-ভাটার পানি না আসায় জলাবদ্ধতা ও আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।


লাকুটিয়া খালের ঝরঝরিয়া এলাকার জেলে আরজ আলী মিয়া অভিযোগ করেন, খালের মধ্যে ২০ জায়গায় গড়া দেওয়া আছে। এ ছাড়া বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় এখন আর স্রোতও নেই, মাছও পাওয়া যায় না, ময়লা-আবর্জনার গন্ধে বসবাস করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। খালের কাশিপুর বিল্ববাড়ি এলাকায় গড়া দিয়ে মাছ চাষ করছে বিল্ববাড়ি মৎস্য কল্যাণ সমিতি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অনেক আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খালে বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেয়। ওই বাঁধের একটা অংশে তারা মাছ চাষ করছে।
লাকুটিয়া খালের ঝরঝরিয়া এলাকার রত্তন মুন্সি জানান, স্থানীয় মনির হোসেন সিকদার মাছ চাষ করার জন্য খালে গড়া দিয়েছেন। খালের মসজিদের পোল এলাকার আশরাব আলী সরদার জানান, বোরো চাষ করার নামে এই খালের বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ওই বাঁধের মধ্যেই মাছ চাষ শুরু করায় এখন আর সেখানে সবার প্রবেশাধিকার নেই।
মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খালে বাঁধ দিইনি। তবে যে অংশে আমরা মাছ চাষ করছি, তার সুবিধা খালের দুই পারের মানুষ পাবে। তা ছাড়া মাছ চাষ করায় ওই অংশ আবর্জনামুক্ত আছে। তবে খাল সংস্কার ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, লাকুটিয়া খালের অনেক স্থানে গড়া ও বাঁধ রয়েছে। পানিপ্রবাহ না থাকায় দুর্গন্ধ, ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে রয়েছে। বেশির ভাগ স্থানে খাল দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা।
লাকুটিয়া এলাকার মোজামেঞ্চল মোল্লা বলেন, বর্তমানে সব খাল-নদী পানিতে ভরে গেলেও লাকুটিয়া খালে তেমন পানি নেই। আবার একবার পানি কোনোভাবে উঠলে তা আর নামতে পারে না। আবর্জনা ও কচুরিপানায় খালটি জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই সুযোগে খালের দুই পারের বাসিন্দারা যে যার মতো করে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে।
পশ্চিম কাউনিয়ার জেলে খলিলুর রহমান বলেন, খালে বাঁধ ও গড়া থাকায় মাছ পাওয়া যায় না। বাঘিয়া এলাকার রানা হাওলাদার বলেন, বাঁধ ও গড়া সরালে ময়লা পানি সরে যাবে। খালে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার পানি ঢুকবে। শহরের ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে যাবে। কিন্তু অনেকবার অভিযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
পাউবো বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, বোরো চাষের সময় লাকুটিয়া খালে সাত-আটটি বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। পরে বাঁধগুলো কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক স্থানে কাটা হয়নি বা সামান্য কাটা হয়েছে, এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল নদী-খাল-জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নগরের খালগুলো রক্ষা করার জন্য একাধিকবার মেয়রের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিলেও তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। লাকুটিয়া খালে বাঁধ ও গড়া দিয়ে মাছ চাষ করায় সেখানে পানিপ্রবাহ নেই। খালটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খাল সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তবে বর্তমান বাজেটে খাল সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য নিজস্ব অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। খাল সংস্কারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.