অভিমত ॥ এভাবে আর কতদিন? by শিখা ব্যানার্জী
মুখে বড় বড় বুলি আওড়ান, গায়ে স্বদেশীর আদলে পায়জামা-পাঞ্জাবিও পরেন, তার ওপর কালো কোর্তাও থাকে কারও কারও গায়ে। ওঠেন-বসেন, হাঁটেন-চলেন এমন আবেশে যে, মনে হয় আপনাদের মতো জনদরদী এদেশে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না।
ক্ষমতা থাকাকালে সব সাদা দেখেন, আর ক্ষমতা হারিয়ে যখন রাস্তায় নামেন, তখন দুর্নীতির কালো ধোঁয়ায় হাঁসফাঁস করতে থাকেন আর তারস্বরে চেঁচাতে থাকেন এই বলে যে, সাচ্চা দেশপ্রেমিক আপনারাই, ওনারা নয়। এভাবেই চলছে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের গলাবাজি, যার ঝড়-তা-বে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষদের প্রাণ ওষ্ঠাগতপ্রায়।
গণতান্ত্রিক দেশ নাকি এটা, ভোটের আগে কত কাকুতি-মিনতি করেন, হাতে ধরেন, পায়ে ধরেন, এমনকি বস্তিবাসীরও। রুমালে চোখ মোছেন, প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পাখির মতো বুলি আওড়াতে থাকেন। হাঁ-ভাতে বাঙালীর শূন্য হাঁড়ির সুযোগ নিয়ে টাকা ছড়াতে থাকেন চার হাত-পায়ে (যে টাকা সৎপথে আসেনি)। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অসচেতন জনগণ তাদের ফাঁকা বুলির ফাঁদে আটকে পড়ে তাদের মূল্যবান ভোটটি তাদের দিয়ে ফেলে। অমনি উল্লাসে তারা নৃত্য করতে থাকেন, মাঠ দখলের পাসপোর্ট-ভিসা পেয়ে গেছেন ভেবে। আর তারপরই তাদের অনেকের আসল রূপটা বেরিয়ে পড়ে। দু’শ’-পাঁচ শ’-হাজার টাকা কিংবা ভয়ভীতির বিনিময়ে যে ভোটটি জনগণ তাদের দিয়েছিল, তারাও তখন হতভম্ব হয়ে যায় এদের কার্যকলাপ দেখে। তারা তখন মাঠময় লম্ফঝম্ফ করে নানাবিধ খেলার কসরৎ দেখাতে থাকেন। মাঠের মালিকানা সম্পূর্ণ তাদের হাতে চলে যায়। জনগণ দর্শকের সারিতে বসে অসহায়ের মতো ইতিউঁতি চায়, কিছুতেই তারা তাদের জীবনের কোন হিসাবই মিলাতে পারে না। বেদনায় নীল হয়ে যায় তারা যখন দেখে সর্বত্র টাকার খেলা। টাকা ছাড়া কোন ফাইলপত্র, কোন ছাড়পত্র, অর্থাৎ কোন কিছুই নড়ে না। কিন্তু এ খেলা দেখার জন্য তো এ দেশে গণতন্ত্র আসেনি। ৪০ বছর পার হয়ে গেছে দেশটি স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। হয়েছে তাদের, তাদের বাড়ি হয়েছে, গাড়ি হয়েছে, টাকা কামানোর ক্ষেত্র হয়েছে। রাজনীতিবিদ বলতে যে আদর্শের প্রতিমূর্তি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, যাদের কথা ভাবলে আজও গর্বে বুক ভরে ওঠে, তাদের সাথে এদের মেলানো যাচ্ছে না কিছুতেই। রাজনীতি আর ব্যবসা, দুটো দু’মেরুর কার্যক্রম। কোন জাদুবলে তারা এক মোহনায় নিয়ে এলেন, কোন কারিশমা দিয়ে এ দুরূহ কাজটি সমাধা করলেন, তা আজও আমাদের বোধগম্য নয়। আজ রাজনীতিবিদদের কোন আদর্শের পাঠ নিতে হয় না, কিভাবে ছলে-বলে-কৌশলে ভোট বাগানো যায়, সেই পাঠ নিতেই ব্যস্ত সময় কাটান তারা, আর নির্বাচিত হবার পর ভোটারদের কথা বেমালুম ভুলে যান, কিন্তু ভোলেন না আখের গোছাতে, কে কয়টা লাইসেন্স বাগাতে পারবেন, জনউন্নয়নে বরাদ্দ টাকার সিংহভাগ কিভাবে লোপাট করতে পারবেন, নিয়োগ-বাণিজ্যের নামে কিভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে পারবেন, এতে সিদ্ধহস্ত আপনারা এতটাই যে, অনায়াস দক্ষতায় কুকাজগুলো করে ফেলেন। আর এভাবেই চালছে তাদের রাজনীতির ময়দানে জমজমাট খেলা।
এদের প্রতাপ দেখে মনে হচ্ছে দেশটা খেলোয়াড় সর্বস্ব। ভোগ-দখলের অধিকার শুধু তাদেরই, যারা ছলে-বলে-কৌশলে বলটা নিজেদের পায়ের দখলে রাখতে পারবেন। আর দখলদারিত্ব পাওয়ার সাথে সাথে শুরু করেন সেটিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। অপর দল তখন সাইড লাইনে গিয়ে মরিয়া হয়ে ছুটতে থাকেন, বলটা নিজেদের পায়ের দখলে নেয়ার উদগ্র বাসনায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন তারা, জেনে বুঝেই ফাউল করে চলেন, হলুদ কিংবা লালকার্ড দেখালেও বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ তাদের তাড়িত করে না, কারণ ও শব্দটা হয়ত তাদের অভিধানেই নেই। অথচ জনগণ কিভাবে দিনাতিপাত করছে, সেদিকে তাদের অনেকেরই কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। নজর শুধু ওই বলটার দিকে, একবার বাগে পেলেই কেল্লাফতে। এভাবেই চলছে গণতন্ত্রের বিশাল মাঠজুড়ে তাদের হিংসাত্মক খেলা।
আর দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষগুলো দিনকে দিন দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে জ্বলতে থাকা আগুন তাদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। মাথার ওপর পাচ্ছে না তারা একটু ছায়া, ফলে খোলা আকাশের নিচে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি ও তীব্র শীতে চলছে তাদের দুর্বিষহ জীবনযাপন। যারা ছায়া পাচ্ছে, তারা আবার বাড়িওয়ালা নামক কসাইদের শানানো ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। এদেশের মানুষ পাচ্ছে না চলার পথে ন্যূনতম নিরাপত্তা, মনে সদা ভয়, ঘাতক ড্রাইভার নয়তো কোন সন্ত্রাসী তার প্রিয় প্রাণটি কেড়ে নেবে না তো? বিদ্যুত পাচ্ছে না, অথচ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির চাবুক তাদের চপেটাঘাত করেই যাচ্ছে, আবারও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কুডাক শোনা যাচ্ছে। গ্যাস পাচ্ছে না গৃহস্থ লাইনে কিংবা সিলিন্ডারে প্রয়োজনমাফিক, ওদিকে সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি দামে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছে জনগণ ডিলারদের শয়তানির কারসাজিতে। অর্থাৎ যত রকম দুর্ভোগ আছে, তার সবই খড়গ হয়ে নেমে আসছে জনগণের ওপর। অথচ তাদের এসব কিছুই ভোগ করতে হয় না, কারণ তারা নামীদামী খেলোয়াড়, খেলছেন মাঠ জুড়ে, ঘেমে নেয়ে ওঠার আগেই এসি বাড়ি, এসি গাড়ি এদের সব ঘর্ম শুকিয়ে শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডজনখানেক দাস-দাসীও সদাপ্রস্তুত থাকে তাদের সেবায়। এ খেলা আর চলতে দেয়া ঠিক নয়। যে সুখের দাবিদার ছিল এ দেশেরই জনগণ। সেই প্রতারিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত জনগণই আজ কড়ায়-গ-ায় সব হিসেব বুঝে নেবে। অতএব অপরাজনীতির খেলা এবার বন্ধ করুন।
লেখক : প্রভাষক, বাউফল কলেজ, পটুয়াখালী
গণতান্ত্রিক দেশ নাকি এটা, ভোটের আগে কত কাকুতি-মিনতি করেন, হাতে ধরেন, পায়ে ধরেন, এমনকি বস্তিবাসীরও। রুমালে চোখ মোছেন, প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পাখির মতো বুলি আওড়াতে থাকেন। হাঁ-ভাতে বাঙালীর শূন্য হাঁড়ির সুযোগ নিয়ে টাকা ছড়াতে থাকেন চার হাত-পায়ে (যে টাকা সৎপথে আসেনি)। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অসচেতন জনগণ তাদের ফাঁকা বুলির ফাঁদে আটকে পড়ে তাদের মূল্যবান ভোটটি তাদের দিয়ে ফেলে। অমনি উল্লাসে তারা নৃত্য করতে থাকেন, মাঠ দখলের পাসপোর্ট-ভিসা পেয়ে গেছেন ভেবে। আর তারপরই তাদের অনেকের আসল রূপটা বেরিয়ে পড়ে। দু’শ’-পাঁচ শ’-হাজার টাকা কিংবা ভয়ভীতির বিনিময়ে যে ভোটটি জনগণ তাদের দিয়েছিল, তারাও তখন হতভম্ব হয়ে যায় এদের কার্যকলাপ দেখে। তারা তখন মাঠময় লম্ফঝম্ফ করে নানাবিধ খেলার কসরৎ দেখাতে থাকেন। মাঠের মালিকানা সম্পূর্ণ তাদের হাতে চলে যায়। জনগণ দর্শকের সারিতে বসে অসহায়ের মতো ইতিউঁতি চায়, কিছুতেই তারা তাদের জীবনের কোন হিসাবই মিলাতে পারে না। বেদনায় নীল হয়ে যায় তারা যখন দেখে সর্বত্র টাকার খেলা। টাকা ছাড়া কোন ফাইলপত্র, কোন ছাড়পত্র, অর্থাৎ কোন কিছুই নড়ে না। কিন্তু এ খেলা দেখার জন্য তো এ দেশে গণতন্ত্র আসেনি। ৪০ বছর পার হয়ে গেছে দেশটি স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। হয়েছে তাদের, তাদের বাড়ি হয়েছে, গাড়ি হয়েছে, টাকা কামানোর ক্ষেত্র হয়েছে। রাজনীতিবিদ বলতে যে আদর্শের প্রতিমূর্তি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, যাদের কথা ভাবলে আজও গর্বে বুক ভরে ওঠে, তাদের সাথে এদের মেলানো যাচ্ছে না কিছুতেই। রাজনীতি আর ব্যবসা, দুটো দু’মেরুর কার্যক্রম। কোন জাদুবলে তারা এক মোহনায় নিয়ে এলেন, কোন কারিশমা দিয়ে এ দুরূহ কাজটি সমাধা করলেন, তা আজও আমাদের বোধগম্য নয়। আজ রাজনীতিবিদদের কোন আদর্শের পাঠ নিতে হয় না, কিভাবে ছলে-বলে-কৌশলে ভোট বাগানো যায়, সেই পাঠ নিতেই ব্যস্ত সময় কাটান তারা, আর নির্বাচিত হবার পর ভোটারদের কথা বেমালুম ভুলে যান, কিন্তু ভোলেন না আখের গোছাতে, কে কয়টা লাইসেন্স বাগাতে পারবেন, জনউন্নয়নে বরাদ্দ টাকার সিংহভাগ কিভাবে লোপাট করতে পারবেন, নিয়োগ-বাণিজ্যের নামে কিভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে পারবেন, এতে সিদ্ধহস্ত আপনারা এতটাই যে, অনায়াস দক্ষতায় কুকাজগুলো করে ফেলেন। আর এভাবেই চালছে তাদের রাজনীতির ময়দানে জমজমাট খেলা।
এদের প্রতাপ দেখে মনে হচ্ছে দেশটা খেলোয়াড় সর্বস্ব। ভোগ-দখলের অধিকার শুধু তাদেরই, যারা ছলে-বলে-কৌশলে বলটা নিজেদের পায়ের দখলে রাখতে পারবেন। আর দখলদারিত্ব পাওয়ার সাথে সাথে শুরু করেন সেটিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। অপর দল তখন সাইড লাইনে গিয়ে মরিয়া হয়ে ছুটতে থাকেন, বলটা নিজেদের পায়ের দখলে নেয়ার উদগ্র বাসনায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন তারা, জেনে বুঝেই ফাউল করে চলেন, হলুদ কিংবা লালকার্ড দেখালেও বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ তাদের তাড়িত করে না, কারণ ও শব্দটা হয়ত তাদের অভিধানেই নেই। অথচ জনগণ কিভাবে দিনাতিপাত করছে, সেদিকে তাদের অনেকেরই কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। নজর শুধু ওই বলটার দিকে, একবার বাগে পেলেই কেল্লাফতে। এভাবেই চলছে গণতন্ত্রের বিশাল মাঠজুড়ে তাদের হিংসাত্মক খেলা।
আর দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষগুলো দিনকে দিন দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে জ্বলতে থাকা আগুন তাদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। মাথার ওপর পাচ্ছে না তারা একটু ছায়া, ফলে খোলা আকাশের নিচে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি ও তীব্র শীতে চলছে তাদের দুর্বিষহ জীবনযাপন। যারা ছায়া পাচ্ছে, তারা আবার বাড়িওয়ালা নামক কসাইদের শানানো ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। এদেশের মানুষ পাচ্ছে না চলার পথে ন্যূনতম নিরাপত্তা, মনে সদা ভয়, ঘাতক ড্রাইভার নয়তো কোন সন্ত্রাসী তার প্রিয় প্রাণটি কেড়ে নেবে না তো? বিদ্যুত পাচ্ছে না, অথচ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির চাবুক তাদের চপেটাঘাত করেই যাচ্ছে, আবারও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কুডাক শোনা যাচ্ছে। গ্যাস পাচ্ছে না গৃহস্থ লাইনে কিংবা সিলিন্ডারে প্রয়োজনমাফিক, ওদিকে সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি দামে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছে জনগণ ডিলারদের শয়তানির কারসাজিতে। অর্থাৎ যত রকম দুর্ভোগ আছে, তার সবই খড়গ হয়ে নেমে আসছে জনগণের ওপর। অথচ তাদের এসব কিছুই ভোগ করতে হয় না, কারণ তারা নামীদামী খেলোয়াড়, খেলছেন মাঠ জুড়ে, ঘেমে নেয়ে ওঠার আগেই এসি বাড়ি, এসি গাড়ি এদের সব ঘর্ম শুকিয়ে শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডজনখানেক দাস-দাসীও সদাপ্রস্তুত থাকে তাদের সেবায়। এ খেলা আর চলতে দেয়া ঠিক নয়। যে সুখের দাবিদার ছিল এ দেশেরই জনগণ। সেই প্রতারিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত জনগণই আজ কড়ায়-গ-ায় সব হিসেব বুঝে নেবে। অতএব অপরাজনীতির খেলা এবার বন্ধ করুন।
লেখক : প্রভাষক, বাউফল কলেজ, পটুয়াখালী
No comments