অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বাবুলের আকুতি
একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক-লেখক সুধেন্দু দেব রায় বাবুল (এসডি রায় বাবুল) এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সিলেট নগরীর পশ্চিম ভাতালিয়ার ১৬১নং ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এই মুক্তিযোদ্ধার দিনেরবেলা একটু ভাল কাটলেও সারারাত মৃত্যু যন্ত্রণায় বিছানায় কাতরাতে হচ্ছে।
অর্থের অভাবে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছেন তিনি।
এই মুক্তিযোদ্ধার গ্রামের বাড়ি মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়; যা বর্তমানে কমলগঞ্জ পৌরসভার অধীনে। এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নিলেও পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে ভূমিহীন। সম্পদ বলতে কিছু নেই। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরেই সিলেট নগরীতেই ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি ছিলেন শ্রীমঙ্গল কলেজের আইএ পরীক্ষার্থী এবং শ্রীমঙ্গল থানা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি। দেশের পরিস্থিতির কারণে প্রায়ই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ হতো, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তখনই দেখা হয়েছিল তাঁর। দেশের পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পেরেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন তিনি। একাত্তরের ২৫ মার্চের পরই এক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে। ঐ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভারতের বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর মহকুমায় যাওয়ার পর সে দেশের সেনাবাহিনী একটি গাড়িতে করে ধর্মনগর রেলস্টেশনে রেলগাড়িতে উঠিয়ে দেয়। পরদিন আবার সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে তাদের আসাম রাজ্যের আপার হাফলং ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ট্রেনিং ক্যাম্প। তিন মাস বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, গেরিলা ট্রেনিং ও বিশেষ গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৪নং সেক্টরে যোগদান করেন। সেখানে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল (অব) সিআর দত্ত। বিশেষ গোয়েন্দা ট্রেনিং থাকায় দায়িত্বও ছিল ভিন্ন মাত্রার। ছদ্মবেশে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শত্রুসেনার খবর সংগ্রহ করা ছিল মূল কাজ। কয়েক মাস অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যেও জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের সময় মাথা ও হাতে আঘাতসহ অনেক কষ্টের মধ্যেও মাঝে মাঝে সম্মুখযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। এবং ডিসেম্বর ২য় সপ্তাহেই তাঁরা কমলগঞ্জকে মুক্ত এলাকায় পরিণত করেন।
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪০ বছরেও তিনি কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। কোন দিন যোদ্ধাহত ভাতার ব্যাপারে চেষ্টাও করেননি। যখন ভাতার প্রয়োজন অনুভব করেছেন তখন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে একটি আবেদন করেন (যাতে বর্তমান চীপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুশ শহীদ এর ঝঃৎড়হম জবপড়সবহফবফ ছিল), যার আজ পর্যন্ত কোন সাড়া নেই। ২০০৯ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ক্লিনিকে কিছুদিন থাকার পর স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকার বিখ্যাত নিউরোলজিস্ট ডা. বদরুল আলমের পরামর্শে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করার পর কিছুটা সুস্থ হন। ডা. বদরুল আলমের অভিমত, পূর্ব আঘাত জনিত কারণে মাথার বাম সাইডের স্বচ্ছলতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে এবং পারলে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য ভারতের ২ জন ডাক্তারের ঠিকানাসহ যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। তখন টাকার প্রয়োজন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁর স্বেচ্ছা তহবিল থেকে কিছু সাহায্য চেয়ে একটি আবেদনপত্র, বিভিন্ন কাগজপত্রসহ ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর কার্যালয়ে নিজ হাতে জমা দেন। কিন্তু তাতেও কোন সাড়া না পেয়ে কোন রকম দিন কাটাচ্ছিলেন এই অসুস্থ শরীর নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবুল।
২০১০ সালের ২০ নবেম্বর হঠাৎ আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে সিলেটের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হলে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্কয়ার হাসপাতালের বিখ্যাত গেস্টোলজিস্ট ডা. মোতাহার হোসেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরামর্শ দেন অতিসত্বর অপারেশন করার জন্য। কারণ খাদ্যনালীতে টিউমার ধরা পড়েছে। অপারেশন করা না হলে যে কোন সময় খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁর পরামর্শ ছিল ভারতের মাদ্রাজ গেলে ভাল হয়, তাতে অপারগতা দেখালে তিনি ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রধান (থেরাসিক সার্জারি) ডা. একে এম রজ্জাক সাহেবের কাছে পাঠান। ডা. রজ্জাক সাহেব ও অতি সত্বর অপারেশনের কথা বললে সিলেট এসে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব-ভাইদের সাহায্যে এবং কিছু ঋণ গ্রহণ করে ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার গ্রীন লাইফ হসপিটালে ভর্তি হন এবং ২৭ জানুয়ারি অপারেশন করা হয়। প্রায় ১৫ দিন ঐ হাসপাতালে থাকার পর সিলেট পাঠিয়ে একটি ক্লিনিকে কিছুদিন থাকার জন্য বলা হয়। প্রায় সাড়ে ৩লাখ টাকা খরচ করার পরও এই মুক্তিযোদ্ধা এখন সুস্থ হয়ে উঠেননি। এখনও খাওয়াদাওয়াতে খুব কষ্ট হয়। তাছাড়াও এখন আবার পেটের ভেতরের সেলাই ছিঁড়ে গেছে বলে স্থানীয় ডাক্তারদের অভিমত। আবার অপারেশন জরুরী। কিন্তু টাকার অভাবে এই মুক্তিযোদ্ধা বাসায় অসহায় জীবনযাপন করছেন। এমনি অনেক টাকা ঋণ, স্ত্রী একটি ক্লিনিকে প্রাইভেট চাকরি করে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে তাঁকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা এসডি রায় বাবুল বলেন, আমার সবচেয়ে বড় গর্ব আমি বাঙালী। বাঙালীর ঘরে জন্ম নিয়েছি। আর এই বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি দেখেছি, কথা বলেছি এবং তাঁর অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি । আবার এটাও ঠিক যে, কয়েক বছর পর তো মুক্তিযোদ্ধা বলে কেউ আর বেঁচে থাকবে না, খুঁজেও পাওয়া যাবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধার যদি অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়, তবে মরার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে কি লাভ, আমি বুঝি না।
মুক্তিযোদ্ধা সুধেন্দু দেব রায় বাবুল মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে শেষপ্রান্তে এসে আজ পরাজিত বলে মনে হচ্ছে। নিজ হাতে স্বাধীন করা দেশে নেই মাথা গোজার একটু বাসস্থান, বরং বেঁচে থাকার করুণ আকুতি এই মুক্তিযোদ্ধার। একমাত্র মেয়ে স্নেহাদেব রায় জয়ীর ভবিষ্যত চিন্তায় অস্থির চিত্ত তাঁর। জাতিকে স্বাধীন দেশ উপহার দেয়া এই মুক্তিযোদ্ধা সবার একটু সহযোগিতা চান। পাকবাহিনীর কাছে হার না-মানা এই মুক্তিযোদ্ধা কি আমাদের চোখের সামনে অভাবের কাছে হার মানবেন? মুক্তিযোদ্ধা সুধেন্দু শেখর দেব রায় বাবুল তাই সরকার ও দেশের দানশীল বিত্তবান মানুষের কাছে একটু সহানুভূতি ও সাহায্য চান। তাঁর সঞ্চয়ী হিসাব নং-৩৪০২৭২৯৯, সোনালী ব্যাংক, জিন্দাবাজার শাখা, সিলেট। মুক্তিযোদ্ধা সুধেন্দু শেখর দেবরায় বাবুলের মুক্তি নং ০৫০৪০৩০১০৭ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরযুক্ত সার্টিফিকেট নং ১৬৯৩৫/২৬/০৭/৯৯, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট নং ০৩/৫৮/২০০২/৬৯৫ ক্রমিক ম -৯০৪৯৩, সেক্টর নং-৪, সরকারী গেজেট নং-১০৪৬। মুক্তিযোদ্ধা এসডি রায় বাবুল কর্ম জীবনে কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন প্রবন্ধকার ছিলেন। Ñসালাম মাশরুর, সিলেট
এই মুক্তিযোদ্ধার গ্রামের বাড়ি মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়; যা বর্তমানে কমলগঞ্জ পৌরসভার অধীনে। এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নিলেও পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে ভূমিহীন। সম্পদ বলতে কিছু নেই। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরেই সিলেট নগরীতেই ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি ছিলেন শ্রীমঙ্গল কলেজের আইএ পরীক্ষার্থী এবং শ্রীমঙ্গল থানা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি। দেশের পরিস্থিতির কারণে প্রায়ই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ হতো, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তখনই দেখা হয়েছিল তাঁর। দেশের পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পেরেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন তিনি। একাত্তরের ২৫ মার্চের পরই এক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে। ঐ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভারতের বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর মহকুমায় যাওয়ার পর সে দেশের সেনাবাহিনী একটি গাড়িতে করে ধর্মনগর রেলস্টেশনে রেলগাড়িতে উঠিয়ে দেয়। পরদিন আবার সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে তাদের আসাম রাজ্যের আপার হাফলং ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ট্রেনিং ক্যাম্প। তিন মাস বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, গেরিলা ট্রেনিং ও বিশেষ গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৪নং সেক্টরে যোগদান করেন। সেখানে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল (অব) সিআর দত্ত। বিশেষ গোয়েন্দা ট্রেনিং থাকায় দায়িত্বও ছিল ভিন্ন মাত্রার। ছদ্মবেশে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শত্রুসেনার খবর সংগ্রহ করা ছিল মূল কাজ। কয়েক মাস অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যেও জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের সময় মাথা ও হাতে আঘাতসহ অনেক কষ্টের মধ্যেও মাঝে মাঝে সম্মুখযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। এবং ডিসেম্বর ২য় সপ্তাহেই তাঁরা কমলগঞ্জকে মুক্ত এলাকায় পরিণত করেন।
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪০ বছরেও তিনি কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। কোন দিন যোদ্ধাহত ভাতার ব্যাপারে চেষ্টাও করেননি। যখন ভাতার প্রয়োজন অনুভব করেছেন তখন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে একটি আবেদন করেন (যাতে বর্তমান চীপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুশ শহীদ এর ঝঃৎড়হম জবপড়সবহফবফ ছিল), যার আজ পর্যন্ত কোন সাড়া নেই। ২০০৯ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ক্লিনিকে কিছুদিন থাকার পর স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকার বিখ্যাত নিউরোলজিস্ট ডা. বদরুল আলমের পরামর্শে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করার পর কিছুটা সুস্থ হন। ডা. বদরুল আলমের অভিমত, পূর্ব আঘাত জনিত কারণে মাথার বাম সাইডের স্বচ্ছলতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে এবং পারলে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য ভারতের ২ জন ডাক্তারের ঠিকানাসহ যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। তখন টাকার প্রয়োজন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁর স্বেচ্ছা তহবিল থেকে কিছু সাহায্য চেয়ে একটি আবেদনপত্র, বিভিন্ন কাগজপত্রসহ ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর কার্যালয়ে নিজ হাতে জমা দেন। কিন্তু তাতেও কোন সাড়া না পেয়ে কোন রকম দিন কাটাচ্ছিলেন এই অসুস্থ শরীর নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবুল।
২০১০ সালের ২০ নবেম্বর হঠাৎ আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে সিলেটের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হলে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্কয়ার হাসপাতালের বিখ্যাত গেস্টোলজিস্ট ডা. মোতাহার হোসেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরামর্শ দেন অতিসত্বর অপারেশন করার জন্য। কারণ খাদ্যনালীতে টিউমার ধরা পড়েছে। অপারেশন করা না হলে যে কোন সময় খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁর পরামর্শ ছিল ভারতের মাদ্রাজ গেলে ভাল হয়, তাতে অপারগতা দেখালে তিনি ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রধান (থেরাসিক সার্জারি) ডা. একে এম রজ্জাক সাহেবের কাছে পাঠান। ডা. রজ্জাক সাহেব ও অতি সত্বর অপারেশনের কথা বললে সিলেট এসে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব-ভাইদের সাহায্যে এবং কিছু ঋণ গ্রহণ করে ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার গ্রীন লাইফ হসপিটালে ভর্তি হন এবং ২৭ জানুয়ারি অপারেশন করা হয়। প্রায় ১৫ দিন ঐ হাসপাতালে থাকার পর সিলেট পাঠিয়ে একটি ক্লিনিকে কিছুদিন থাকার জন্য বলা হয়। প্রায় সাড়ে ৩লাখ টাকা খরচ করার পরও এই মুক্তিযোদ্ধা এখন সুস্থ হয়ে উঠেননি। এখনও খাওয়াদাওয়াতে খুব কষ্ট হয়। তাছাড়াও এখন আবার পেটের ভেতরের সেলাই ছিঁড়ে গেছে বলে স্থানীয় ডাক্তারদের অভিমত। আবার অপারেশন জরুরী। কিন্তু টাকার অভাবে এই মুক্তিযোদ্ধা বাসায় অসহায় জীবনযাপন করছেন। এমনি অনেক টাকা ঋণ, স্ত্রী একটি ক্লিনিকে প্রাইভেট চাকরি করে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে তাঁকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা এসডি রায় বাবুল বলেন, আমার সবচেয়ে বড় গর্ব আমি বাঙালী। বাঙালীর ঘরে জন্ম নিয়েছি। আর এই বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি দেখেছি, কথা বলেছি এবং তাঁর অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি । আবার এটাও ঠিক যে, কয়েক বছর পর তো মুক্তিযোদ্ধা বলে কেউ আর বেঁচে থাকবে না, খুঁজেও পাওয়া যাবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধার যদি অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়, তবে মরার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে কি লাভ, আমি বুঝি না।
মুক্তিযোদ্ধা সুধেন্দু দেব রায় বাবুল মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে শেষপ্রান্তে এসে আজ পরাজিত বলে মনে হচ্ছে। নিজ হাতে স্বাধীন করা দেশে নেই মাথা গোজার একটু বাসস্থান, বরং বেঁচে থাকার করুণ আকুতি এই মুক্তিযোদ্ধার। একমাত্র মেয়ে স্নেহাদেব রায় জয়ীর ভবিষ্যত চিন্তায় অস্থির চিত্ত তাঁর। জাতিকে স্বাধীন দেশ উপহার দেয়া এই মুক্তিযোদ্ধা সবার একটু সহযোগিতা চান। পাকবাহিনীর কাছে হার না-মানা এই মুক্তিযোদ্ধা কি আমাদের চোখের সামনে অভাবের কাছে হার মানবেন? মুক্তিযোদ্ধা সুধেন্দু শেখর দেব রায় বাবুল তাই সরকার ও দেশের দানশীল বিত্তবান মানুষের কাছে একটু সহানুভূতি ও সাহায্য চান। তাঁর সঞ্চয়ী হিসাব নং-৩৪০২৭২৯৯, সোনালী ব্যাংক, জিন্দাবাজার শাখা, সিলেট। মুক্তিযোদ্ধা সুধেন্দু শেখর দেবরায় বাবুলের মুক্তি নং ০৫০৪০৩০১০৭ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরযুক্ত সার্টিফিকেট নং ১৬৯৩৫/২৬/০৭/৯৯, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট নং ০৩/৫৮/২০০২/৬৯৫ ক্রমিক ম -৯০৪৯৩, সেক্টর নং-৪, সরকারী গেজেট নং-১০৪৬। মুক্তিযোদ্ধা এসডি রায় বাবুল কর্ম জীবনে কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন প্রবন্ধকার ছিলেন। Ñসালাম মাশরুর, সিলেট
No comments