বাজেট অধিবেশন-ন্যায্য দাবি সংসদেই তুলুন

নবম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন আজ রোববার শুরু হচ্ছে। প্রথাগতভাবে এটি বাজেট অধিবেশন এবং সঙ্গত কারণেই দেশবাসীর মনোযোগ এর প্রতি নিবদ্ধ থাকবে। তবে সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন এ অধিবেশনেই উপস্থাপন করা হবে।


সংশ্লিষ্ট কমিটি এ বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে নানা পর্যায়ে আলোচনা চালিয়েছে। সর্বোপরি রয়েছে পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে প্রদত্ত সর্বোচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এর আলোকেই পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের মিত্র দুটি দলের সদস্য সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে, এটাই কাম্য। তাদের ভিন্নমত থাকাই সঙ্গত এবং ন্যায্য কথা বললে শাসক জোটকে তা বিবেচনায় নিতেই হবে। সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ এ অধিবেশন বাজেট অধিবেশন নাকি সংবিধান সংশোধনে বিশেষ অধিবেশন, সে বিষয়টি স্পষ্ট করার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে যাদের তরফে জানানো হয়েছে অধিবেশনে যোগদানের শর্ত_ মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি মেনে নেওয়ার আগাম ঘোষণা দিতে হবে সরকারি দল ও জোটের তরফে। মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি যে কেউ করতেই পারে। তবে দেশের সার্বিক যা পরিস্থিতি তাতে সংসদের মেয়াদ আড়াই বছরেরও বেশি বাকি থাকতে কতটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে সে বিষয়ে সংশয় বিস্তর। তাছাড়া নতুন নির্বাচনের দাবির সঙ্গে সংসদে যোগদানকে শর্তযুক্ত করা চলে না। দীর্ঘদিন সংসদে অনুপস্থিত থাকার পর বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা সংসদের অষ্টম অধিবেশনে যোগদান করার সময় বলেছিল, ৯০ দিন অনুপস্থিতজনিত কারণে সদস্যপদ বাঁচাতে নয় বরং জনগণের সমস্যা তুলে ধরতেই এ সিদ্ধান্ত। দেশবাসী আশা করবে যে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবে। জাতীয় বাজেট এবং সংবিধান সংশোধন, উভয় কারণেই এ অধিবেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জনজীবনেও সমস্যা প্রচুর। মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। জ্বালানি তেল ও সিএনজি গ্যাসের ভাড়া বাড়ানোর পর পরিবহনসহ অনেক খাতে এক ধরনের নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ট্রাডিশন অনুযায়ী সরকারি দল ও জোটের সদস্যরা সরকারের কোনো কাজের সমালোচনার ধারেকাছেও যায় না, বরং ব্যস্ত থাকে প্রশস্তিতে। এ অবস্থায় বিরোধীদলীয় সদস্যদের সংসদে উপস্থিতি একান্তভাবে কাম্য। তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের মতো আপাতভাবে নন-ইস্যুকে ইস্যু করে সংসদ অধিবেশন বর্জন করলে সেটাকে জনগণও ভালোভাবে গ্রহণ করবে না। সংসদের বাইরে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাব যতই তুলে ধরা হোক না কেন সংসদীয় পদ্ধতিতে এর ফয়সালার চূড়ান্ত স্থান হচ্ছে জাতীয় সংসদ। বিএনপি এবং তার মিত্ররা যদি রাজপথে বিষয়টির ফয়সালা করতে চায়, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বর্তমান সময়ে সংসদে গিয়ে কথা বলার বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন-পরবর্তী অভিজ্ঞতাও আমাদের রাজনীতিকরা বিবেচনায় রাখতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ূতে সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে তিক্ততা মোটেই কম ছিল না। কিন্তু নির্বাচনের রায় নিয়ে কেউ আপত্তি করেনি, বিধানসভা অধিবেশন বর্জনের কথাও কেউ ভাবছে না। দেশ ও দশের সর্বোপরি গণতন্ত্রের স্বার্থেই এমনটি করা হচ্ছে। গণতন্ত্র আমাদের জন্যও অন্য পথ খোলা রাখেনি।
 

No comments

Powered by Blogger.