ষড়যন্ত্রের অংশ ॥ হিউম্যান রাইটস ওয়াচরিপোর্ট
০ সরকার বলছে, সংস্থাটির অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত ॥ প্রত্যাহারের আহ্বান ০ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, কাম্য নয় ॥ আইনমন্ত্রী ০ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবাধিকারের নামে এইচআরডব্লিউ এমন এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য দিতে পারে নাজনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
(এইচআরডব্লিউ) প্রকাশিত ‘ভয় আমাকে ছাড়ে না’ শীর্ষক প্রতিবেদন নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- সংস্থাটির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) মনে করে প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। আইনমন্ত্রী বলেছেন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, যা ঠিক নয়। এ ছাড়া দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনের বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও বিষয়টি বিভিন্নভাবে স্থান পেয়েছে। সর্বোপরি মানবাধিকার বিষয়ক এই সংস্থাটির প্রতিবেদন প্রকাশের এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, সংস্থাটি ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করবে। তারা কোন গণতান্ত্রিক দেশকে এভাবে বলতে পারে না।
একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এভাবে প্রশ্ন তোলা সঠিক কিনা সে প্রশ্নও অনেকের। তাছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের পক্ষে দেশের সকল মানুষ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে গঠন করা হয়েছে র্যাব। এক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত যে কোন হত্যাকা- সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃত নয়। এই অবস্থায় বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ও র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা কতটুকু যৌক্তিক সে প্রশ্ন রয়েই যায়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের ইচ্ছামতো তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে একটি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হলে সরকার সংস্থাটির বিপক্ষে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। পাশাপাশি সরকারী অনুমতি ছাড়া একটি বিদেশী সংস্থা দেশের অভ্যন্তরে কিভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল তাও খতিয়ে দেখার পরামর্শ তাদের।
(২ পৃষ্ঠা ৪ কঃ দেখুন) ষড়যন্ত্রের অংশ
(প্রথম পৃষ্ঠার পর)
সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। যদি প্রতিবেদন ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংস্থাটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
বুধবার ঢাকায় ‘ভয় আমাকে ছাড়ে না’: ২০০৯’-এর বিডিআর বিদ্রোহের পর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ। প্রতিবেদনে আরও দেখানো হয়েছে, সন্দেহভাজন আটককৃতদের নির্যাতনে বাংলাদেশ পুলিশের র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নÑ র্যাব জড়িত।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহে অভিযুক্তদের ‘গণবিচার’ প্রক্রিয়ায় ‘গলদ’ রয়েছে দাবি করে তা এখনই স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ থাকায় ‘এলিট বাহিনী’ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙ্গে দিয়ে একটি নতুন ‘বেসামরিক’ বাহিনী গড়ে তোলার সুপারিশ করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই ‘অভিযুক্ত’ সংশ্লিষ্ট বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারের পক্ষ থেকে জবাব দেয়া শুরু হয়। এদিকে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে প্রকাশিত তথ্য সঠিক নয় তা প্রমাণ করতে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে সংস্থাটি। সংস্থাপ্রধান বলেছেন, প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা এ্যাডামস বলেছেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহে সন্দেহভাজনদের যে র্যাবের হেফাজতে প্রচ- নির্যাতন করা হয়েছে সে বিষয়ে অনেক নির্যাতিত ব্যক্তির আলাদা আলাদা তথ্য-প্রমাণভিত্তিক দৃষ্টান্ত দেয়া আছে আমাদের গবেষণা প্রতিবেদনে। পারলে এর যে কোন একটা খ-ন বা প্রমাণ করে দেখানো হোকÑ দাবি সংস্থাটির।’
অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত- সরকারের বক্তব্য ॥ বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ও র্যাব নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদন এবং সংবাদ সম্মেলনে তাদের উত্থাপিত অভিযোগ ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের’ অংশ বলে মনে করে সরকার বক্তব্যটি যথাযথ নয় বলে প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ‘প্রতিবাদলিপিতে’ বলা হয়, গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত।’ এ কারণে প্রতিবেদনটি এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত এইচআরডব্লিউর বক্তব্য প্রত্যাহার করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘সরকার মনে করে, এ ধরনের অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের অংশ। সরকার আশা করে যে, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ তাদের প্রতিবেদন ও বক্তব্য প্রত্যাহার করবে, যাতে জঘন্য ও মর্মান্তিক বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা যায়।’ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের পরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারের জন্য আটক অন্তত ৪৭ জন বিডিআর সদস্য হাজতে থাকা অবস্থায় ‘নিহত’ হয়েছেন। তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হাতে রয়েছে।
ওই সময় আটক প্রায় ৬ হাজার বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্য ন্যায়বিচার পাবেন কিনাÑ তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড এ্যাডামস বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে মন্ত্রী শফিক আহমেদও তাঁদের প্রতিবেদনকে ‘অসত্য, অগ্রহণযোগ্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘প্রতিবাদলিপিতে’ বলা হয়, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে বিডিআর বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচার কার্যক্রমের সমালোচনা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্বীকারোক্তি আদায়ে নির্যাতনসহ বিচারিক কার্যক্রমের বিষয়ে অসত্য ও অমূলক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
‘গত ৩ জুলাই ব্র্যাড এ্যাডামস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করলে মন্ত্রী তাঁকে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা পদ্ধতির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেন। মন্ত্রী জানান, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং সকল ক্ষেত্রে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, আইনজীবী নিয়োগসহ সকল ধরনের আইনানুগ সুবিধা পাচ্ছেন। কোন ধরনের নির্যাতনমূলক কার্যক্রম বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে না।’ বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় কারাবন্দী জওয়ানদের ওপর র্যাবের নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, র্যাব বিডিআর বিদ্রোহ মামলার অনুসন্ধান বা তদন্ত পরিচালনাসহ কোন পর্যায়েই সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং র্যাবের পক্ষে অভিযুক্তদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন সুযোগ নেই।
সুপারিশ ঠিক হয়নি-সাহারা ॥ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙ্গে দিয়ে একটি নতুন ‘বেসামরিক’ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সুপারিশ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আর্মড পুলিশের ১১ ইউনিটের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শুধু সরকার নয়, সারাদেশের জনগণ র্যাবের জঙ্গী দমনে ও সন্ত্রাস দমন কার্যকলাপকে ধন্যবাদ ও বাহবা দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এ রকম হস্তক্ষেপ করা সমীচীন হয়নি। ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন এবং মনগড়া বলে দাবি করে র্যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামসুল হক টুকু বলেন, দেশ যখন ঠিকমতো এগিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কেন এ অপপ্রচার তা বুঝতে হবে।
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মন্তব্য বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত- বিজিবি ॥ নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশও (বিজিবি) বলেছে, বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্তদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অবিবেচনাপ্রসূত, অযৌক্তিক ও উস্কানিমূলক। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার স্থগিত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং উস্কানিমূলকভাবে চলমান বিচার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বানে বিজিবি সদর দফতর বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন। শুক্রবার বিজিবি সদর দফতর থেকে মহাপরিচালকের পক্ষে জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা স্বাক্ষরিত পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ‘অতিরঞ্জিত তথ্য’ উপস্থাপন করা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সন্দেহভাজন ও অভিযুক্তদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এবং র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ বলেছে, বিচারের জন্য আটক অন্তত ৪৭ জন বিডিআর সদস্য হাজতে থাকা অবস্থায় ‘নিহত’ হয়েছেন। তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হাতে রয়েছে।
বিজিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব তথ্য ‘ভিত্তিহীন’ এবং সামগ্রিকভাবে ‘বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে হেফাজতে থাকাকালীন কয়েক আসামির মৃত্যু হওয়া সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তারা স্বাস্থ্যগত অসুস্থতা, বার্ধক্যজনিত ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন।’
মানবাধিকার সংস্থার এ প্রতিবেদনকে ‘উস্কানিমূলক’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, বিজিবি সদস্যদের নৈতিক মনোবলে আঘাত করা, আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রদান, সর্বোপরি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে বিদ্রোহ ও জঘন্যতম হত্যাকা-ের বিচার স্থগিত করতেই এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করে বিজিবি।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহের পর বিভিন্ন স্থাপনায় ‘বাংলাদেশ রাইফেলস ওর্ডার’ ১৯৭২ অনুযায়ী ১১টি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রাইফেলস অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ রাইফেলস রুলস ১৯৭১ যথাযথ অনুসরণ করা হয়। আদালত চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকসহ যে কোন ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বিচারকার্য দেখতে পারেন। সুতরাং বিডিআর আইনে বিচার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা সম্পর্কে সকলেই অবহিত। এ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে স্থাপিত ৬টি আদালতে ৪৫টি মামলা এবং ঢাকার পিলখানায় ৫টি আদালতে ৭টি মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে পিলখানার তিনটি আদালতে চারটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্রোহ মামলায় প্রায় ৭০ ভাগ বিচার সম্পন্ন হয়েছে। বিচারে রায়ে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। অনেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
অপরদিকে সুপ্রীমকোর্টের আদেশ অনুযায়ী হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট এবং গুরুতর অন্যান্য অপরাধের বিচার মহানগর দায়রা জজ আদালতে দেশের প্রচলিত আইন ‘বাংলাদেশ দ-বিধি’ এবং ‘ফৌজদারি কার্যবিধি’ অনুযায়ী যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এই মামলায় বাদী পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে বলেও বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও হস্তক্ষেপ কাম্য নয়- আইনমন্ত্রী ॥ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারও হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। তাছাড়া এমন হস্তক্ষেপের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই বলেও মনে করেন তিনি।
সংস্থাটির এশিয়া মহাদেশের পরিচালক ব্র্যাড এ্যাডামসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, তারা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এভাবে প্রশ্ন তোলা সঠিক কিনা সে প্রশ্নও অনেকের। তাছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের পক্ষে দেশের সকল মানুষ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে গঠন করা হয়েছে র্যাব। এক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত যে কোন হত্যাকা- সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃত নয়। এই অবস্থায় বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ও র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা কতটুকু যৌক্তিক সে প্রশ্ন রয়েই যায়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের ইচ্ছামতো তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে একটি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হলে সরকার সংস্থাটির বিপক্ষে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। পাশাপাশি সরকারী অনুমতি ছাড়া একটি বিদেশী সংস্থা দেশের অভ্যন্তরে কিভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল তাও খতিয়ে দেখার পরামর্শ তাদের।
(২ পৃষ্ঠা ৪ কঃ দেখুন) ষড়যন্ত্রের অংশ
(প্রথম পৃষ্ঠার পর)
সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। যদি প্রতিবেদন ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংস্থাটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
বুধবার ঢাকায় ‘ভয় আমাকে ছাড়ে না’: ২০০৯’-এর বিডিআর বিদ্রোহের পর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ। প্রতিবেদনে আরও দেখানো হয়েছে, সন্দেহভাজন আটককৃতদের নির্যাতনে বাংলাদেশ পুলিশের র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নÑ র্যাব জড়িত।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহে অভিযুক্তদের ‘গণবিচার’ প্রক্রিয়ায় ‘গলদ’ রয়েছে দাবি করে তা এখনই স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ থাকায় ‘এলিট বাহিনী’ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙ্গে দিয়ে একটি নতুন ‘বেসামরিক’ বাহিনী গড়ে তোলার সুপারিশ করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই ‘অভিযুক্ত’ সংশ্লিষ্ট বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারের পক্ষ থেকে জবাব দেয়া শুরু হয়। এদিকে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে প্রকাশিত তথ্য সঠিক নয় তা প্রমাণ করতে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে সংস্থাটি। সংস্থাপ্রধান বলেছেন, প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা এ্যাডামস বলেছেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহে সন্দেহভাজনদের যে র্যাবের হেফাজতে প্রচ- নির্যাতন করা হয়েছে সে বিষয়ে অনেক নির্যাতিত ব্যক্তির আলাদা আলাদা তথ্য-প্রমাণভিত্তিক দৃষ্টান্ত দেয়া আছে আমাদের গবেষণা প্রতিবেদনে। পারলে এর যে কোন একটা খ-ন বা প্রমাণ করে দেখানো হোকÑ দাবি সংস্থাটির।’
অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত- সরকারের বক্তব্য ॥ বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ও র্যাব নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদন এবং সংবাদ সম্মেলনে তাদের উত্থাপিত অভিযোগ ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের’ অংশ বলে মনে করে সরকার বক্তব্যটি যথাযথ নয় বলে প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ‘প্রতিবাদলিপিতে’ বলা হয়, গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত।’ এ কারণে প্রতিবেদনটি এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত এইচআরডব্লিউর বক্তব্য প্রত্যাহার করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘সরকার মনে করে, এ ধরনের অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের অংশ। সরকার আশা করে যে, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ তাদের প্রতিবেদন ও বক্তব্য প্রত্যাহার করবে, যাতে জঘন্য ও মর্মান্তিক বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা যায়।’ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের পরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারের জন্য আটক অন্তত ৪৭ জন বিডিআর সদস্য হাজতে থাকা অবস্থায় ‘নিহত’ হয়েছেন। তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হাতে রয়েছে।
ওই সময় আটক প্রায় ৬ হাজার বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্য ন্যায়বিচার পাবেন কিনাÑ তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড এ্যাডামস বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে মন্ত্রী শফিক আহমেদও তাঁদের প্রতিবেদনকে ‘অসত্য, অগ্রহণযোগ্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘প্রতিবাদলিপিতে’ বলা হয়, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে বিডিআর বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচার কার্যক্রমের সমালোচনা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্বীকারোক্তি আদায়ে নির্যাতনসহ বিচারিক কার্যক্রমের বিষয়ে অসত্য ও অমূলক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
‘গত ৩ জুলাই ব্র্যাড এ্যাডামস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করলে মন্ত্রী তাঁকে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা পদ্ধতির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেন। মন্ত্রী জানান, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং সকল ক্ষেত্রে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, আইনজীবী নিয়োগসহ সকল ধরনের আইনানুগ সুবিধা পাচ্ছেন। কোন ধরনের নির্যাতনমূলক কার্যক্রম বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে না।’ বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় কারাবন্দী জওয়ানদের ওপর র্যাবের নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, র্যাব বিডিআর বিদ্রোহ মামলার অনুসন্ধান বা তদন্ত পরিচালনাসহ কোন পর্যায়েই সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং র্যাবের পক্ষে অভিযুক্তদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন সুযোগ নেই।
সুপারিশ ঠিক হয়নি-সাহারা ॥ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙ্গে দিয়ে একটি নতুন ‘বেসামরিক’ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সুপারিশ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আর্মড পুলিশের ১১ ইউনিটের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শুধু সরকার নয়, সারাদেশের জনগণ র্যাবের জঙ্গী দমনে ও সন্ত্রাস দমন কার্যকলাপকে ধন্যবাদ ও বাহবা দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এ রকম হস্তক্ষেপ করা সমীচীন হয়নি। ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন এবং মনগড়া বলে দাবি করে র্যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামসুল হক টুকু বলেন, দেশ যখন ঠিকমতো এগিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কেন এ অপপ্রচার তা বুঝতে হবে।
বিডিআর বিদ্রোহের বিচার নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মন্তব্য বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত- বিজিবি ॥ নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশও (বিজিবি) বলেছে, বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্তদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অবিবেচনাপ্রসূত, অযৌক্তিক ও উস্কানিমূলক। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার স্থগিত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং উস্কানিমূলকভাবে চলমান বিচার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বানে বিজিবি সদর দফতর বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন। শুক্রবার বিজিবি সদর দফতর থেকে মহাপরিচালকের পক্ষে জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা স্বাক্ষরিত পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ‘অতিরঞ্জিত তথ্য’ উপস্থাপন করা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সন্দেহভাজন ও অভিযুক্তদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এবং র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ বলেছে, বিচারের জন্য আটক অন্তত ৪৭ জন বিডিআর সদস্য হাজতে থাকা অবস্থায় ‘নিহত’ হয়েছেন। তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হাতে রয়েছে।
বিজিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব তথ্য ‘ভিত্তিহীন’ এবং সামগ্রিকভাবে ‘বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে হেফাজতে থাকাকালীন কয়েক আসামির মৃত্যু হওয়া সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তারা স্বাস্থ্যগত অসুস্থতা, বার্ধক্যজনিত ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন।’
মানবাধিকার সংস্থার এ প্রতিবেদনকে ‘উস্কানিমূলক’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, বিজিবি সদস্যদের নৈতিক মনোবলে আঘাত করা, আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রদান, সর্বোপরি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে বিদ্রোহ ও জঘন্যতম হত্যাকা-ের বিচার স্থগিত করতেই এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করে বিজিবি।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহের পর বিভিন্ন স্থাপনায় ‘বাংলাদেশ রাইফেলস ওর্ডার’ ১৯৭২ অনুযায়ী ১১টি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রাইফেলস অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ রাইফেলস রুলস ১৯৭১ যথাযথ অনুসরণ করা হয়। আদালত চলাকালীন সময়ে সাংবাদিকসহ যে কোন ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বিচারকার্য দেখতে পারেন। সুতরাং বিডিআর আইনে বিচার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা সম্পর্কে সকলেই অবহিত। এ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে স্থাপিত ৬টি আদালতে ৪৫টি মামলা এবং ঢাকার পিলখানায় ৫টি আদালতে ৭টি মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে পিলখানার তিনটি আদালতে চারটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্রোহ মামলায় প্রায় ৭০ ভাগ বিচার সম্পন্ন হয়েছে। বিচারে রায়ে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। অনেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
অপরদিকে সুপ্রীমকোর্টের আদেশ অনুযায়ী হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট এবং গুরুতর অন্যান্য অপরাধের বিচার মহানগর দায়রা জজ আদালতে দেশের প্রচলিত আইন ‘বাংলাদেশ দ-বিধি’ এবং ‘ফৌজদারি কার্যবিধি’ অনুযায়ী যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এই মামলায় বাদী পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে বলেও বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও হস্তক্ষেপ কাম্য নয়- আইনমন্ত্রী ॥ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারও হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। তাছাড়া এমন হস্তক্ষেপের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই বলেও মনে করেন তিনি।
সংস্থাটির এশিয়া মহাদেশের পরিচালক ব্র্যাড এ্যাডামসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, তারা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
No comments