সাক্ষাৎকারে আবদুল কালাম-পানি ও পাট নিয়ে সহযোগিতা উভয়ের জন্য সুফল বয়ে আনবে by রাহীদ এজাজ
অভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সভ্যতার ধারক ও বাহক দুই নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারত। জনগণের কল্যাণে পানিসম্পদের কার্যকর সদ্ব্যবহার এবং পাটের পুনর্জাগরণে অর্থবহ সহযোগিতা বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্য সুফল বয়ে আনবে। উপকৃত হবে পুরো দক্ষিণ এশিয়া।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবদুল কালাম—যিনি এ পি জে আবদুল কালাম নামেই বেশি পরিচিত—গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দুই দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে ঢাকা ছাড়ার আগে পেশাগত জীবনে বিজ্ঞানী আবদুল কালাম শিক্ষা, এ অঞ্চলের সম্ভাবনা, নতুন প্রজন্ম নিয়ে আশাবাদ এবং সদ্য ‘ঈশ্বর কণা’ হিগস বোসনের অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ মেলা নিয়ে মতামত দিয়েছেন। কথা বলেছেন প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা তাঁর নতুন বই টার্নিং পয়েন্টস: আ জার্নি থ্রু চ্যালেঞ্জেস নিয়েও। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনিষ্পন্ন বিষয় কিংবা রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
দুই প্রতিবেশীর বন্ধুতা: দুই নিকট প্রতিবেশী আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে কীভাবে এগোতে পারে জানতে চাইলে আবদুল কালাম বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই একসঙ্গে কাজ করার বিপুল সুযোগ রয়েছে। যেমন: সম্ভাবনার কথা বললে প্রথমেই আসবে পাটের কথা। দুই দেশকে একসঙ্গে আগ্রাসীভাবে পাটের বিপণনে কাজ করতে হবে। এতে সাফল্য অনিবার্য।’
কালামের মতে, সহযোগিতার একটি বড় জায়গা পানি ব্যবস্থাপনা। অথচ এ ক্ষেত্রে অর্থবহ কোনো সহযোগিতা নেই। তাই বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই বিপুল পরিমাণ পানি নষ্ট করছে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইতিবাচক জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সেই সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তির দিক থেকে ভারত অনেক এগিয়েছে। আর বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী।’
নতুন প্রজন্ম ও রাজনীতি : ‘ভারতরত্ন’ উপাধি পাওয়া আবদুল কালাম বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম মোটেও রাজনীতিবিমুখ নয়; বরং তাদের মধ্যে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখেছি। দুই দেশেই দেখেছি, তরুণেরা দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। এখান থেকেই স্পষ্ট রাজনীতির রাজনীতি ও উন্নয়নের রাজনীতির তফাতটা।’
রাজনীতির রাজনীতি ও উন্নয়নের রাজনীতির ব্যাখ্যা করে কালাম বলেন, রাজনীতিবিদেরা নির্বাচনে জেতার জন্য রাজনীতি করেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, তাঁদের কর্মকাণ্ডে রাজনীতি থাকে ৭০ আর বাকি ৩০ শতাংশ উন্নয়ন। অথচ এই হারটা হওয়া উচিত ছিল যথাক্রমে ৩০ ও ৭০ শতাংশ।’
সবকিছু ছাপিয়ে শিক্ষকতা : মহাকাশ ও পরমাণুবিজ্ঞানী, ভারতের রাষ্ট্রপতি ও শিক্ষকতা—এই তিন দায়িত্বের মধ্যে শেষেরটিই তাঁর কাছে বেশি আনন্দের। ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতির ব্যাখ্যা: নতুন প্রজন্মের মধ্যে আলো ছড়ানো আর তাদের প্রতিভার স্ফুরণের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকতাই শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব নিশ্চিত হলে: ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির পথিকৃৎ আবদুল কালাম মনে করেন, ‘ঈশ্বর কণার’ (হিগস বোসন) অস্তিত্বের পক্ষে জোরালো প্রমাণ মেলার বিষয়টি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে নতুন গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর ফলে আমরা হয়তো সৌরজগতের আরও বিস্তৃতির কথা জানব।’
প্যান্ডোরা বক্স নয়, পোস্ট বক্স: বাজারে আসার আগেই আলোচনার ঝড় উঠেছে আবদুল কালামের নতুন বই টার্নিং পয়েন্ট: আ জার্নি থ্রু চ্যালেঞ্জেস। কংগ্রেসের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী না করতে তাঁর ওপর নানা দিকের চাপ, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে বাজপেয়ির মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া আর গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর বিজেপি সরকারের ভেতরে অস্বস্তির মতো বিভিন্ন অজানা বিষয় ঠাঁই পেয়েছে হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিতব্য নতুন বইটিতে। এই প্রতিবেদক গতকাল আবদুল কালামের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, তবে কি বইটি ভারতের ওই সময়ের রাজনীতির গোপন অধ্যায় উন্মোচনের ‘প্যান্ডোরা বক্স’? কালামের উত্তর: ‘মোটেই না। এটি প্যান্ডোরা বক্স নয়, ‘পোস্ট বক্স’। পোস্ট বক্স খুললে অনেক কিছু একসঙ্গে পাওয়া যায়, বোঝা যায় কতটা শ্রম দিয়ে বক্সটি ভরে তোলা হয়েছে। আমার বইটি পড়লেই জ্ঞানের জন্য কঠোর পরিশ্রমের বিষয়টি বুঝতে পারবেন।’
আবদুল কালাম বলেন, ‘জীবনে চলার পথে যে সাতটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি, তা কীভাবে মোকাবিলা করেছি তা পাঠকদের জানানোর প্রয়াস চালিয়েছি এতে।’
No comments