শনিবারের সুসংবাদ-শিশুমৃত্যু রোধে বড় সাফল্য
দেশজুড়ে সদ্যোজাত শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে বড় ধরনের সাফল্য এসেছে। বিশ্বের সঙ্গে তুলনায় বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুমৃত্যু কমেছে দ্বিগুণ হারে। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে প্রতিবছর ৪ শতাংশ হারে কমে এসেছে এই মৃত্যু। গর্ভধারণের পুরো সময় মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সন্তান প্রসবকালে দক্ষ কর্মীর উপস্থিতি, সন্তান প্রসবে অস্ত্রোপচার ও কার্যকর সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন ইতিবাচক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন ও সেভিং নিউবর্ন লাইভস টানা তিন বছর গবেষণা চালিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে প্রতি হাজারে ২৭টি শিশু জন্মের এক মাসের মধ্যে মারা যায়। অথচ ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪১। তাৎপর্যের বিষয় হলো, গত এক দশকে সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর হার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক হারের চেয়ে দ্বিগুণ কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। সদ্যোজাত শিশুমৃত্যু হার বিবেচনায় ২০০০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম, যা ২০১০ সালে এসে হয়েছে সপ্তম। বর্তমানে সদ্যোজাত শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে দেশে ১৩টি কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশে সন্তান প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতি ১২৯ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে গর্ভধারিণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার হার বেড়েছে ১২৭ শতাংশ। নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা ৬০ ভাগ ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম বেড়েছে ৬১৩ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ১০টি শিশুর একজনের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের প্রত্যাশিত ৩৭ সপ্তাহের কয়েক সপ্তাহ আগেই জন্ম হয় এবং তাদের ওজন হয় আড়াই কিলোগ্রামের কম। সাধারণত অপরিণত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে জন্ম নেওয়া এসব শিশু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অনেক জটিলতার মুখে পড়ে। তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে তুলনামূলক খুবই দুর্বল। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শিশুগুলোর শরীর থাকে অকার্যকর। এ অবস্থায় বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ ও অন্য অনেক জটিলতার কারণে শিশুগুলো অঙ্কুরেই ঝরে যায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ, সেভিং নিউ বর্ন লাইভসের এশিয়া অঞ্চলের পরামর্শক ডা. উজমা সাইদ, সেভ দ্য চিলড্রেন নিউ বর্ন লাইভস কর্মসূচির প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. সাইদ রুবায়েদ এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সমন্বিত কর্মসূচির কর্মকর্তা ডা. ইশতিয়াক মান্নান।
সদ্যোজাত শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে বাংলাদেশের এই সাফল্যকে অসাধারণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যু রোধের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। কারণ অপরিণত শিশুর জন্ম আগামী দশকে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, গর্ভধারণের সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম অপরিণত শিশু প্রসবের অন্যতম কারণ।
ইশতিয়াক মান্নান বলেন, অপরিণত সন্তান প্রসব প্রতিরোধে গ্রহণযোগ্য সমাধান আজো কোনো দেশে কার্যকরভাবে নেই। তারপরও গত ১০ বছরে বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে নবজাতক নীতি স্বচ্ছভাবে করতে পারায়। জাতীয় পর্যায়ে এই নীতি ও কৌশল ছিল সুস্পষ্ট।
সৈয়দ রুবায়েত বলেন, অন্তত দেড় শ বিশেষজ্ঞ দীর্ঘদিন সময় নিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, মালাবি ও উগান্ডার সদ্যোজাত শিশুর স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ করেছেন। আর বাংলাদেশে এই দায়িত্ব পালন করেছেন ৪০ জন বিশেষজ্ঞ।
No comments