উত্তরাঞ্চলে একমাত্র জল থানা

উত্তরাঞ্চলের নদীপথে কোস্ট গার্ডের কোন কার্যক্রম নেই। নেই কোন নৌ-থানা। ১৬ জেলা মিলে রয়েছে একটি মাত্র জল থানা। সেটিতেও নেই কোন জলযান। এ অঞ্চলের প্রায় এক হাজার কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে তেমন কোন নৌযান অথবা পরিবহন ব্যবস্থা নেই।


জরুরী প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাড়া করা নৌকায় যেতে হয়। ফলে নৌপথ ও চরাঞ্চলে অপরাধ প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা, যমুনা, বহ্মপুত্র, তিস্তা, মহানন্দা, ধরলা, ঘাঘট, করতোয়াসহ শতাধিক নদনদী উত্তরাঞ্চলকে বেষ্টিত করে আছে। এ অঞ্চলে নদীপথ রয়েছে হাজার কিলোমিটারের ওপর। এসব নদীর বুক চিড়ে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার চর রয়েছে। এসব চরে লাখ লাখ মানুষ বসবাস করে। এদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোন পুলিশিং ব্যবস্থা নেই। কোন অপরাধ ঘটলে যানবাহনের অভাবে নৌপথে কোন নজরদারি করা যাচ্ছে না। ফলে এ অঞ্চলের নৌপথকে ঘিরে মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। অনেক স্থানে ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটছে। এসব এলাকায় টহল দেয়ার মতো কোন নৌ পুলিশ নেই। নেই কোন কোস্ট গার্ড।
জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের এক মাত্র জল থানা রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার ঢুষমারায়। এখানে নেই কোন স্থায়ী আবাসন। জলযানও নেই। রাতের বেলা কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। জল থানার সবাই থাকে নিরাপত্তাহীনতায়। কোন প্রকার নৌযান ছাড়াই এই থানাকে খোঁজ খবর রাখতে হয় প্রায় ৮০ কিলোমিটার নৌপথ। এছাড়াও এক সময় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীতে ভাসমান নৌ ফাঁড়ি ও বৃহত্তর রংপুরের শেষ অংশ বাহাদুরাবাদে ভাসমান পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। এখানে জনবল ছিল একজন এসআই, একজন হাবিলদার ও ১৫ কনেস্টবল। এ রুটে তিস্তা মুখ ঘাটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া ফাঁড়িগুলো নদী ছেড়ে এখন ডাঙ্গায় উঠে এসেছে। তারা এখন টহল দিচ্ছেন স্থল পথে। ফলে এ নৌ-ফাঁড়ি দুটোর কার্যক্রম নেই বললে চলে। কালেভদ্রে কোথাও টহল দিতে হলে তাদের ভাড়া করা নৌকায় যেতে হয়। এছাড়া রংপুরের গঙ্গাচড়া, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ, বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, চৌহালী, পাবনার বেড়া, সুজা নগর, ঈশ্বর্দী, নাটোরের লালপুর, রাজশাহীর চারঘাট, গোদাগাড়ি, চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জসহ কিছু থানা নদী সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। এই থানাগুলোতে আলাদা কোন জলযান নেই বলইে চলে। নৌপথে অথবা চরাঞ্চলে কোথাও কোন অঘটন ঘটলে তাদের ভাড়া করা নৌকায় চড়ে গন্তব্যে যেতে হয়।
এই অঞ্চলে কোস্টগার্ড অথবা নৌ-থানা না থাকায় বিভিন্ন চরের মানুষ থাকেন ডাকাতির আতঙ্কে। পুলিশ না থাকার কারণে বর্ষা মৌসুমে অনেক চরে ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে।
জানা গেছে, মাস দুয়েক আগে চিলমারীর চরে ডাকাতি হয়। এসময় ডাকাতরা সেখান থেকে ৩০টি গরুসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে নিয়ে যায়। ডাকাতদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন গ্রামবাসী নিহত হয়। উত্তরাঞ্চলের নৌপথগুলো অরক্ষিত থাকার কারণে প্রায় ছোট-বড় আপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এছাড়া মাদক ও চোরা কারবারিরা চরাঞ্চল ও নদীপথকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যাতায়াত না থাকার কারণে অনেক সময় অপরাধীরা অপরাধ করে বিভিন্ন চরে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছে।
ঢুশমারা জল থানার ওসি কবির হোসেন জানান, নৌযানের অভাবে তারা ঠিকমতো টহল দিতে পারছেন না। কোথাও যেতে হলে ঠিকাদারের মাধ্যমে নৌকা ভাড়া করে যেতে হচ্ছে।
Ñআব্দুর রউফ সরকার, রংপুর

No comments

Powered by Blogger.