বিনে স্বদেশী ভাষা, মিটে কি আশা? by মেহেরুন নেছা রুমা
আমার পাঁচ বছরের ছেলে তাহী নার্সারি ক্লাসে পড়ে। বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া শিখিয়ে বাবা-মা নিজেদের আভিজাত্য বজায় রাখেন, সে রকম অভিজাত আমি নই বলে ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দিইনি। সাধারণ মাধ্যমে পড়াশোনা করেও অনেকেই দেশের উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
মা হিসেবে তাকে আমি শুদ্ধ বাংলা ভাষাটাকে শিক্ষা দিতে চেষ্টা করি। এর পাশাপাশি আমি এটাও চাই আমাদের দেশের প্রত্যেক শিশুই আন্তর্জাতিক ভাষা 'ইংরেজি' ভালোভাবে রপ্ত করুক। কিন্তু আমরা কি আমাদের সন্তানদের সঠিক মাতৃভাষা এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য 'ইংরেজি' শেখাতে পারছি? এদেশের শিক্ষা পদ্ধতি এমন যে, এমএ পাস করার পরও একজন শিক্ষার্থীকে ইংরেজিতে কথা বলার জন্য বা ইংরেজি ভালো বোঝার জন্য আলাদা করে 'স্পোকেন ইংলিশ', 'টোফেল' কোর্স করতে হচ্ছে কোচিং সেন্টারগুলোতে। আর উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের সীমানা পার হতে গেলে তো এর কোনো বিকল্প নেই। তাহলে এতটা বছর পড়লামটা কী? বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও কেন আমাদের কোচিং সেন্টারে গিয়ে ইংরেজি শিখতে হচ্ছে? বিদেশি ভাষার প্রভাব, আধুনিকতার নামে 'বাংরেজি' ভাষার প্রচলন_এসব আমাদের লাইনচ্যুত করে দিচ্ছে। শুদ্ধ উচ্চারণের আধার হিসেবে এক সময় আমরা টেলিভিশন, রেডিও বেছে নিতাম। কিন্তু এখন কি দেখা যায়? এসব মিডিয়াতেই রয়েছে ভাষার জগাখিচুড়ি পরিবেশন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এফএম রেডিও থেকে প্রতিনিয়ত শুনে যাচ্ছে হাল ফ্যাশনের ভাষা। এসব শুনে শুনে যারা অভ্যস্ত তারাও এমন করেই কথা বলতে পেরে নিজেকে আরও বেশি আধুনিক ভাবছে।
এ তো গেল তরুণ প্রজন্মের কথা। বছর দুয়েক হলো টেলিভিশনে বাচ্চাদের মাথা খারাপ করে দেওয়ার মতো একটা চ্যানেল এসেছে, যাতে দিন-রাত 'ডরিমন' নামক কার্টুন সিরিয়াল দেখানো হয়। এমন কোনো বাচ্চা নেই যে এই ডরিমনে আসক্ত নয়। কিন্তু কেন? কী আছে ওই ডরিমনে? বর্তমানে আমাদের এই ছোট্ট দেশটিতেও বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল রয়েছে। এত চ্যানেলের ভিড়ে এখন আর ভালো-মন্দ বিচার করারও কোনো সুযোগ নেই। বিজ্ঞাপনের ভিড়ে অনুষ্ঠান হারিয়ে যেতে দেখি। একসঙ্গে বসে এক ঘণ্টার একটা নাটক দেখার মতো এখন এতগুলো চ্যানেলের মধ্যে কোনোটাই পাওয়া যায় না। ডরিমন যে চ্যানেলটি দেখায় তারও নিশ্চয় বাণিজ্যিক চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তার পরেও কী করে কোন জাদুতে একটি চ্যানেল একটি কার্টুন সিরিয়াল বানিয়ে কীভাবে এত এত বাচ্চাকে একমুখী করে রাখছে! সেটা একটা চিন্তার বিষয়। এই চিন্তার বিষয়টি নিয়ে কি ভেবেছেন আমাদের দেশের এতগুলো চ্যানেলের কোন একজন পরিচালক? আমাদের কি এমন একটি 'ডরিমন' থাকতে পারে না? নিজের ভাষায় নিজের সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে কেউ কি পারে না এমন একটি অনুষ্ঠান তৈরি করতে, যা শিশুদের ওই বিদেশি ভাষার কার্টুনের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে? এমন একটি কার্টুন সিরিয়াল তৈরি করা কি খুব বেশি অসম্ভব? যে দেশে 'দিপু নাম্বার টু', 'ছুটির ঘণ্টা'র মতো চলচ্চিত্র হতে পারে, সেদেশে ইচ্ছা থাকলেই এমন কোনো অনুষ্ঠান অবশ্যই কেউ বানাতে পারেন, যা এদেশের শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় হবে এবং তাতে থাকবে আমাদেরই ভাষা, আমাদেরই সংস্কৃতি।
য় যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
এ তো গেল তরুণ প্রজন্মের কথা। বছর দুয়েক হলো টেলিভিশনে বাচ্চাদের মাথা খারাপ করে দেওয়ার মতো একটা চ্যানেল এসেছে, যাতে দিন-রাত 'ডরিমন' নামক কার্টুন সিরিয়াল দেখানো হয়। এমন কোনো বাচ্চা নেই যে এই ডরিমনে আসক্ত নয়। কিন্তু কেন? কী আছে ওই ডরিমনে? বর্তমানে আমাদের এই ছোট্ট দেশটিতেও বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল রয়েছে। এত চ্যানেলের ভিড়ে এখন আর ভালো-মন্দ বিচার করারও কোনো সুযোগ নেই। বিজ্ঞাপনের ভিড়ে অনুষ্ঠান হারিয়ে যেতে দেখি। একসঙ্গে বসে এক ঘণ্টার একটা নাটক দেখার মতো এখন এতগুলো চ্যানেলের মধ্যে কোনোটাই পাওয়া যায় না। ডরিমন যে চ্যানেলটি দেখায় তারও নিশ্চয় বাণিজ্যিক চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তার পরেও কী করে কোন জাদুতে একটি চ্যানেল একটি কার্টুন সিরিয়াল বানিয়ে কীভাবে এত এত বাচ্চাকে একমুখী করে রাখছে! সেটা একটা চিন্তার বিষয়। এই চিন্তার বিষয়টি নিয়ে কি ভেবেছেন আমাদের দেশের এতগুলো চ্যানেলের কোন একজন পরিচালক? আমাদের কি এমন একটি 'ডরিমন' থাকতে পারে না? নিজের ভাষায় নিজের সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে কেউ কি পারে না এমন একটি অনুষ্ঠান তৈরি করতে, যা শিশুদের ওই বিদেশি ভাষার কার্টুনের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে? এমন একটি কার্টুন সিরিয়াল তৈরি করা কি খুব বেশি অসম্ভব? যে দেশে 'দিপু নাম্বার টু', 'ছুটির ঘণ্টা'র মতো চলচ্চিত্র হতে পারে, সেদেশে ইচ্ছা থাকলেই এমন কোনো অনুষ্ঠান অবশ্যই কেউ বানাতে পারেন, যা এদেশের শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় হবে এবং তাতে থাকবে আমাদেরই ভাষা, আমাদেরই সংস্কৃতি।
য় যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
No comments