হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে আইনমন্ত্রীর কড়া জবাব-র‌্যাব থাকবে কি না সে সিদ্ধান্ত সরকারের, অন্য কারো নয়

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) থাকবে কি থাকবে না, সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এটা সরকারের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে অন্য কারো পরামর্শ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডাব্লিউ) র‌্যাব ভেঙে দেওয়ার সুপারিশসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে


প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ব্রাড এডামস আইনমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সচিবালয়ের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। পরে আইনমন্ত্রী হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিডিআর জওয়ানদের বিচার ও র‌্যাব ভেঙে দেওয়া নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এই প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর। বাংলাদেশের অনেক বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অজ্ঞতা রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ভবিষ্যতে এ ধরনের মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি না করার আহ্বান জানিয়েছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান। আইনমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশকে যারা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তাদের প্ররোচনায় এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে ব্রাড এডামসের সাক্ষাতের সময় আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক তেজশ্রী থাপা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম, জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাকে শক্তিশালী করতে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা হয়।
ব্যারিস্টার শফিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধিদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তরা পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন। তারা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন তা বিশ্বের অনেক ট্রাইব্যুনালে ছিল না। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ চলছে। সাক্ষী উপস্থিত না হলে পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাক্ষীর দেওয়া সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করতে পারবে বলে আইনে বিধান রাখা হয়েছে। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা সাক্ষীকে জেরা করার অনেক সময় পাচ্ছেন। বিচারের স্বচ্ছতার লক্ষ্যে এ সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে তারা অকারণে সময়ক্ষেপণ করে বিচার বিলম্বিত করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের বিচার চলছে। অভিযুক্ত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে চার্জ গঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেকেরই আইনজীবী রয়েছে। তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে বিচার চলছে। অভিযুক্তরা কারাগারেও পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুয়োগ পাচ্ছে। একজন সাক্ষী কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে বলে সব অভিযুক্তকে একসঙ্গে করে বিচার চলছে।
তিনি আরো বলেন, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসব সংস্থার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে- এমন অভিযোগ কোনো নাগরিকের কাছ থেকে সরকার পায়নি।
আইনমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে চায়। এর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.